আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে কারচুপি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন এবং সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন। পাঁচ ধাপে করা এ নির্বাচনের সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘নির্লজ্জ’ কারচুপিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির পক্ষপাতিত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি ভোট গ্রহণের আগের দিন রাতে ও ভোরে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। স্থানীয় থানার ওসি-ইন্সপেক্টররা বিরোধী রাজনৈতিক প্রার্থীদের হয়রানি করেছেন।

বিশেষ দায়িত্বে থাকা সামরিক বাহিনীকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা করেনি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি ইসি। কোনো কোনো কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নিলেও কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো অতিকথন ও দলীয় আনুগত্য প্রদর্শনেই বেশি তৎপর ছিল নির্বাচন কমিশন। অবশ্য গতকাল এক নির্বাচন কমিশনার অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন কমিশনের কথা শোনেনি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা বলেছেন, আসলে নির্বাচনের ওপর কর্তৃত্বই প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি কমিশন। নির্বাচন কমিশন ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর তথ্যানুসারে, এবার নির্বাচনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পাহাড়সমান অভিযোগ জমা ছিল ইসির কাছে। প্রতিদিনই অভিযোগ আসত লিখিত ও মৌখিকভাবে। কম-বেশি সারা দেশেই ছিল এক অবস্থা। নিয়ম অনুযায়ী যে কঠোর অবস্থান দেখানোর কথা ছিল নির্বাচন কমিশন তা দেখায়নি।

নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুরের পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরকারি দলের অভিযোগ এসেছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের স্থানীয় প্রশাসন ও নিযুক্ত ১৬ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়েও আছে অভিযোগ। বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার ওসি হিজলা উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে শুধু অসদাচরণই করেননি তাকে শারীরিক লাঞ্ছনাও করেছেন। নোয়াখালী, যশোর, খুলনা, লালমনিরহাটের পুলিশ সুপারও সরাসরি জড়িয়ে পড়েছিলেন সরকারি দল প্রীতিতে। লক্ষ্মীপুরে নির্বাচনের আগের রাতে বিএনপি প্রার্থীর বাড়ি দীর্ঘ সময় ঘেরাও করে রেখেছিল র‌্যাব।

পরে ভোটের আগে তাকে আটকও করা হয়। পাঁচ ধাপের নির্বাচনেই এমন অভিযোগ আছে অসংখ্য। সরকারদলীয় এক ডজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে এসেছে অভিযোগ। কিন্তু দু-একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে স্পিকারের কাছে নালিশ করেই দায় সেরেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আইনের কোনো অভাব ছিল না।

কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তারা যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ করতে পারেনি। তাদের নির্লিপ্ততায় আমরা চরম হতাশ। আমরা পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের আগমুহূর্তে যেসব এলাকায় আশঙ্কার কথা শুনেছিলাম, নির্বাচনের দিন তা-ই দেখা গেছে। কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

নির্বাচন কমিশনের কেউ কেউ বলছেন, তাদের নিজস্ব কোনো জনবল নেই। এটা খোঁড়া যুক্তি। তারা সরকারের কাছে চেয়েও কোনো জনবল পায়নি এমনটা ঘটেনি। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের বক্তব্যের বিপরীতে সাংবিধানিক পদে থেকে একজন কমিশনারের বক্তব্যও অনাকাক্সিক্ষত। ’অন্য সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের সহিংসতায় মনে হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে কোথাও বাধা রয়েছে।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাগুলো শক্তিশালী হলেও তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেনি ইসি। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে দলীয় রূপ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও কমিশন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। দলীয় প্রভাব কমাতে পারলে সহিংসতা আরও অনেক কমে যেত। নির্বাচন কমিশনের অতিকথনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কমিশন নিয়ে সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সব রাজনৈতিক দলই নানা কটূক্তি করবে।

এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু তাই বলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে বসে তাদের বক্তব্যের জবাব দিতে হবে তা ঠিক নয়। প্রশাসনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সম্পর্কে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের সামগ্রিক বিষয়ে ইসি তাদের নিয়ন্ত্রণই প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে যদি শুরুতেই ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আর শেষের দিকে এসে পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না। কমিশন যদি নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে পারত তাহলে স্থানীয় পুলিশ বা সিভিল প্রশাসনকে অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষভাবে সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিল।

কমিশন তা চায়নি বা করতে পারেনি বলেই আজ প্রশাসন ও পুলিশের এমন আচরণ। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুর্শিদের মতে, উপজেলা নির্বাচনের সহিংসতায় ইসি একটি খারাপ নজির স্থাপন করল। ভবিষ্যতে তাদের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে কমিশন। আর এ কারণে অনেক ভোটার কেন্দ্রে যেতে পারেননি।

আবার কেউ কেউ গিয়েও ফিরে এসেছেন আতঙ্কে। নির্বাচন কমিশনের কারণে প্রশাসনও তাদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। এখন কমিশনের উচিত হবে, সহিংসতার কারণগুলো গভীরভাবে তদন্ত করে দোষী যে-ই হোক তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের উচিত, তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যারা সহিংসতায় জড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। অবশ্য ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ গতকাল নিজ কার্যালয়ে এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আইনের কিছু পরিবর্তন দরকার। যাদের দিয়ে কাজ করাব তারা স্থানীয় প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য না হলেই ভালো হতো বলে মনে হয়েছে।  

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.