উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ নব্বই-পরবর্তী মৎস্যন্যায় নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফিরে গেল কিনা সে সংশয় জোরদার হয়ে উঠেছে। নব্বইয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগে এ দেশে যে নির্বাচন হতো তা ছিল প্রহসনের নামান্তর। নির্বাচনে কারা জিতবে তা শাসকদের মর্জির ওপর নির্ভর করত। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট কেটে সিল মারা, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করা নির্বাচনের রুটিন ওয়ার্ক বলে বিবেচিত হতো। নব্বইয়ের পর এই জংলি নিয়মের অবসান ঘটে। এর মাঝে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছাড়া আর সব নির্বাচনে গণইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। বিরোধী দলের বর্জনের মুখে গত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জন এবং নানামুখী সন্ত্রাসে কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে একজন ভোটারও উপস্থিত হননি। আইনগত দিক থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বৈধতা পেলেও নৈতিক দিক থেকে এটি ছিল অগ্রহণযোগ্য এক নির্বাচন। আশা করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার তাদের সে দুর্নাম ধুয়ে ফেলবে। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিরোধী দল সমর্থকদের কাছে সরকার সমর্থক প্রার্থীরা ব্যাপকহারে পরাজিত হওয়ায় নির্বাচনের বদলে পুতুল নাচের ইতিকথা রচনায় সরকার আগ্রহী হয়ে ওঠে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে চলে ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট কেটে সিল মারার মহোৎসব। পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে আগের চার ধাপের রাখ-ঢাকের অবসান ঘটে। এ নির্বাচনে জোর যার মুল্লুক তার নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এ অপকৌশল সরকারপন্থিদের জয় নিশ্চিত করলেও নির্বাচন কমিশন নামের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে। এটি যে একটি ঠুঁটো জগন্নাথ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে সে সত্যটি স্পষ্ট করেছে। আমরা মনে করি স্থানীয় নির্বাচন যেহেতু অরাজনৈতিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেহেতু সে নির্বাচনে কে জয়ী হলো কিংবা হারল তা নিয়ে সরকারের মাথা ঘামানো ঠিক হয়নি। নির্বাচনব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করার মাধ্যমে তারা শুধু সুনীতিকেই বিসর্জন দেননি, নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্যও হুমকি সৃষ্টি করেছেন। এ মৎস্যন্যায় নির্বাচন কাম্য ছিল না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।