জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দল পরিচালনায় আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি এখন অনেকটাই সরকার এবং স্ত্রী রওশন এরশাদের ‘অনুকম্পার’ ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন বলে মনে করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পর রওশন এখন দলের নীতি-নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলটির প্রধান ব্যক্তি এরশাদের এমন অসহায় দশার কারণে জাপার নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে জাপার বিতর্কিত অবস্থান এবং উপজেলা নির্বাচনে দলটির সমর্থিত প্রার্থীদের খারাপ ফলাফল নেতা-কর্মীদের হতাশা মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
এরই মধ্যে ‘দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার’ বলে উল্লেখ করে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্যসহ জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা পদত্যাগ করেছেন।
জাপার সূত্রগুলো জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে সরকার ও স্ত্রী রওশনের সঙ্গে এইচ এম এরশাদের যে বিরোধ ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল—তা এখন আর আগের পর্যায়ে নেই। এরশাদ এখন দুপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। এই দুপক্ষকে খুশি করতে সম্প্রতি তাদের প্রশংসা করে বক্তব্যও দিয়েছেন এরশাদ।
এরশাদ গত সপ্তাহে রংপুর সফরে গিয়ে স্ত্রী রওশনকে কেবল তাঁর ‘জীবনের কান্ডারিই নন, দলেরও কান্ডারি’ বলেও অভিহিত করেন সাংবাদিকদের কাছে।
এর আগে ২৭ মার্চ রাজধানীতে দলীয় এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানে রওশনের উপস্থিতি তাঁকে ‘অনুপ্রাণিত’ করেছে। আর, সরকার সম্পর্কে এরশাদ মন্তব্য করেন, ‘সরকার পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকবে বলে মনে হচ্ছে। বিএনপি আন্দোলন করে কিছুই করতে পারবে না। ’
যদিও সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসনে জাপার নারী সাংসদ হতে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছিলেন, শিগগিরই আরেকটি সংসদ নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে দলের নারী নেত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে এরশাদের বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দলের সাংসদ ফখরুল ইমাম স্বীকার করেন যে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দুজনের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন আর নেই।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান এরশাদ। হাসপাতালে থেকেই সরকারের ‘বদান্যতায়’ সাংসদ নির্বাচিত হন। তারপর সিএমএইচ থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পেয়ে বাসায় ফেরেন।
দলে এরশাদপন্থী একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের আগের মেয়াদে বিশেষ দূতের পদ চেয়েও পাননি এরশাদ।
আর এবার এ দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েছিলেন তিনি। এরপর মেজর জেনারেল মো. আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখকে সামনে রেখে এরশাদকে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে চলার চেষ্টা করতে দেখা যায়। তিনি এ মামলার প্রধান আসামি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আদালত মঞ্জুর হত্যা মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর সরকারকে খুশি করতে আরও তৎপর হয়ে ওঠেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে ভূমিকা রাখতে তৎপর হয়ে ওঠেন।
একই সঙ্গে নিজ দলেও স্ত্রীর কাছে আরও অসহায় হয়ে পড়েন।
জাপার সভাপতিমণ্ডলীর তিনজন সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, দলে রওশনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় পার্টি এখন কার্যত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। জাতীয় সংসদে ৩৪ আসন পাওয়া প্রধান বিরোধী দল জাপা একই সঙ্গে সরকারেও আছে। এরশাদপন্থী নেতারা দলে কোণঠাসা। এ অবস্থায় দলের সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটা তছনছ হয়ে গেছে।
যার প্রভাব পড়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ ফখরুল ইমাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে জাপার প্রার্থীদের খারাপ করার মূল কারণ হচ্ছে, সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দল সাংগঠনিকভাবে গোছানো ছিল না। অনেকে রাগ করে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।
এর মধ্যে জাপার প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত বৃহত্তর রংপুরে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবির ঘটনা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
এ নির্বাচনে ৪৫৯টি উপজেলার মধ্যে জাপা-সমর্থিত মাত্র তিনজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন।
অবশ্য ‘উপজেলা নির্বাচনে জাপার ভরাডুবি হয়নি’ বলে দাবি করেন জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তাঁর দাবি, উপজেলা নির্বাচনে জাপা দলগতভাবে অংশ নেয়নি। দলের লোকজন বিচ্ছিন্নভাবে অংশ নিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।