সাতসকালে হাতে একগোছা কাগজ নিয়ে এক বৃদ্ধকে দোকানে ঢুকতে দেখে বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ডোমকলের কয়েকজন ব্যবসায়ী। তার পরনে ছিল মলিন চেক লুঙ্গি। ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন ফের বোধহয় কোনও সাহায্যের আবেদন। কিন্তু দোকানে ঢুকেই বৃদ্ধ বললেন, 'কাগজে এই যে ছবিটা দেখছেন, এটা আমার ছেলের। নেশার টাকা না পেলে চুরি করে।
ওর থেকে সাবধানে থাকবেন। কাগজটা রাখুন। এতে সব লেখা আছে। '
টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন আগেই। কিন্তু তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না ডোমকলের আসাদ আলি।
লোকজনকে সতর্ক করতে শেষ পর্যন্ত লিফলেট ছাপিয়েছেন। বাজারের বিভিন্ন দোকানে, মোড়ে, চায়ের দোকানে ওই বৃদ্ধ নিজেই সেই লিফলেট বিলি করেছেন। বাজারে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, 'ধন্য ছেলে বটে। বুড়ো বাপকে পথে নামিয়ে ছাড়ল!'
আসাদ আলি পেশায় দিনমজুর। সে ডোমকলের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
ছেলে হাফিজুলের কাজকর্মে শান্তি তো দূরের কথা সবসময়ে আতঙ্কে থাকেন আসাদ ও তাঁর বাড়ির লোকজন। কিন্তু আসাদের আতঙ্ক যে অমূলক নয় সেটা টের পাওয়া গেল তাঁর বাড়ি ঢোকার আগে। বাড়ির সামনে মোটরবাইকটা রাখতেই পড়শিদের প্রশ্ন, 'হাফিজুল নিশ্চয় আপনাদেরও কিছু চুরি করে নিয়ে এসেছে?'
বাড়ির দাওয়ায় বসে আসাদ বলছেন, 'এ বার বুঝতে পারছেন তো বাপ হয়েও কেন এমন পথ বেছে নিতে হয়েছে। ছেলের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। সকাল হলেই চুরি যাওয়া জিনিস ফেরত পেতে বাড়িতে এসে কেউ না কেউ হাজির হয়।
' চিকিৎসা, শিকলে বেঁধে রাখা, শাসন, মারধর, কোনও কিছুতেই ছেলেকে নেশা ছাড়াতে পারেননি, চুরির অভ্যাসও বন্ধ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে লিফলেট বিলি করছেন আসাদ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ বছর আগে উড়িশায় কাজ করতে গিয়েছিল হাফিজুল। সেখানেই হেরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে বছর সে। বাড়ি ফিরে এসে নেশার টাকা না পেলে প্রথমে বাড়ির জিনিসপত্র চুরি করত।
এখন চুরিটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। কোথাও ধরা পড়লে সে তার বাড়ির ঠিকানা দিচ্ছে। আর বাড়িতে এসে লোকজন অপমান করে যাচ্ছে। কখনও ছেলের অন্যায়ের জন্য আসাদকেই মেটাতে হচ্ছে জরিমানার টাকা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।