গত বছর ২৯ জুলাই হংকং থেকে আসা কাইয়ুম মিয়া ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে ৫২টি স্বর্ণের বারসহ আটক হন। তাকে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কাইয়ুম মিয়া কিছু দিন পরই জামিনে ছাড়া পান। এর আগে জুন মাসে একইভাবে ১৭টি বারসহ আটক হন মিজানুর রহমান। সেই মিজানুর রহমানও জামিনে মুক্ত।
গত এক বছরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে চোরাচালানের প্রায় ২০ মণ স্বর্ণ আটক করে শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ। যেসব ঘটনায় বাহককে গ্রেফতার করা হয়েছে, এদের প্রায় প্রত্যেকেই এভাবে একে একে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ মামলার তদন্ত কার্যক্রমও থেমে আছে। কোনো কোনো মামলা আবার ধামাচাপা দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামিনে ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিরা ফের স্বর্ণ চোরাচালানে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
বার বার আটক হলেও দ্রুততর সময়ের মধ্যে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। ফিরছেন চোরাচালান পেশায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ পর্যন্ত স্বর্ণ চোরাচালানের কোনো মামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি হওয়া দূরের কথা মূল হোতাদেরই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা বরাবরই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর বাহক হিসেবে যারা ধরা পড়েন, আইনের ফাঁকফোকরে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও চোরাচালানে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
এ ছাড়া চোরাকারবারিদের সহযোগী বিমানবন্দরে কর্মরত যে কয়েকটি চক্র রয়েছে এসব চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তারা মনে করেন, পুলিশের দুর্বল তদন্ত, সাক্ষী প্রমাণ যথাসময়ে উপস্থাপন না করা এবং জামিন আবেদনের বিরোধিতা না করার কারণে জামিনে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় আটক ব্যক্তিরা। কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ ছয় মাসে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনার মামলাগুলোর প্রায় সব আসামি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। কোনো মামলার একজন আসামি আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ওই মামলার অন্য আসামিরাও সেই জামিন আদেশ দেখিয়ে জামিন নিচ্ছেন। এ ছাড়া এসব মামলার তদন্তেও তেমন অগ্রগতি নেই।
সূত্র জানায়, ঢাকায় ছয় মাসের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিমানবন্দরে ১০৫টি চালানে আসা ৪১৫ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়। এসব ঘটনায় থানায় ২৯টি মামলা ও ৩৯টি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। দুই কেজির ঊর্ধ্বে ৩১টি ঘটনায় ৩৫৮ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়। দুই কেজির নিচে স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় জরিমানা করে সেগুলো দাবিদারের কাছে দেওয়ার বিধান রয়েছে। এগুলো সেভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিমানবন্দরের শুল্ক কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
মুক্তির যত ঘটনা : পুলিশ, কাস্টমস (শুল্ক) বিভাগ ও আদালত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৯ জুলাই সিঙ্গাপুর থেকে আসা নিউ ইস্কাটন রোডের বাসিন্দা মজিবুর রহমানের কাছ থেকে চারটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। মজিবুর ১০ অক্টোবর জামিন পান। ১১ জুন সাত কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান মোর্শেদ আলম। ২৯ জুলাই দুবাই থেকে আসা ফেনী সদর থানার বাসিন্দা মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ১৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়।
ওই মামলায় তিনি ২৭ অক্টোবর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। ৩০ জুলাই মালয়েশিয়া থেকে আসা নজরুল ইসলামকে তিন কেজি স্বর্ণের গহনাসহ আটকের ঘটনায় করা মামলায় তিনিও ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। আট কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের মামলায় দীপক কুমার, সাড়ে পাঁচ কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের মামলায় মো. হাবিব, সাড়ে ছয় কেজি স্বর্ণের মামলায় দেলোয়ার, এক ও দুই কেজি স্বর্ণ আটকের মামলায় আতিকুল ইসলাম, মনোয়ার, আবদুর রউফ, রব্বানী, মিজানুর রহমান, রাজেশ, আসাদুল্লাহ, কামাল উদ্দিন ও আবুল কাশেম জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন।
তদন্ত এগোচ্ছে না : গত বছরের ২৪ জুলাই কাঠমান্ডু থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের কার্গো চেম্বারে বিশেষভাবে রাখা ১২৪ কেজি স্বর্ণের চালান ধরা পড়ে। দেশে এ পর্যন্ত ধরা পড়া এটিই সবচেয়ে বড় চালান।
পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করায় এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এত বড় স্বর্ণের চালান আটকের ঘটনার তদন্ত এগোচ্ছে না। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত করার তেমন তৎপরতাও নেই। অন্যান্য বিভাগীয় মামলার মতো এ মামলাও হয়তো নিষ্পত্তিহীনই থাকবে।
অভিযোগ রয়েছে, মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার কে এম অহিদুল আলম জানান, এ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অবস্থা নেই।
শীঘ্রই ফৌজদারি মামলা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। বিমানবন্দরের শুল্ক অধিদফতর, পুলিশ ও র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনা তদন্তে দেখা গেছে, বাহকরা স্বর্ণসহ ধরা পড়েন। কিন্তু এ চোরাচালানের সঙ্গে বিমানের কিছু কর্মী, সিভিল এভিয়েশনের কর্মী, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মী এবং অন্য কিছু লোকও বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত থাকেন।
তারা পর্যায় অনুযায়ী টাকা বা ভাগ পান। দেখা যায়, তদন্ত না এগোনোয় ওই ব্যক্তিরা ধরা পড়েন না, তাদের নামও জানা যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।