মরিয়ম নেসা, বয়স তার আশি ছুঁই, ছুঁই। হাঁটুতে ব্যথা, চোখেও দেখেন না ভালো। মাঝেমধ্যে জ্বর হয়। দেখার মতো কেউই নেই তার। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার, ওষুধ সবই পাওয়া যায় বিনামূল্যে। তাই এসেছেন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। কিন্তু এখানে এসে তার মাথায় হাত উঠে গেছে। ডাক্তার বললেন, 'এখানে নয়, শহরের প্রাইভেট ক্লিনিকে আসেন, দেখে দেব।' - এই হলো ঠাকুরগাঁওয়ের স্বাস্থ্যসেবার হাল। এখানে চিকিৎসার নামে একের পর এক প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। হাসপাতালে কয়েক বছর ধরে রোগীরা চিকিৎসাসেবা ও নিয়মিত ওষুধ পাচ্ছেন না। হয়রানি আর ভোগান্তি ছাড়া সদর হাসপাতালে কিছুই মিলছে না। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এ হাসপাতালে রোগীরা এসে ধাপে ধাপে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে হারাতে হচ্ছে অর্থ। হাসপাতালে ঢুকে ভর্তির জন্য, ওষুধের জন্য টাকা দিয়েও অনেকে কোনোটাই পাচ্ছেন না বলেও রয়েছে অভিযোগ। এছাড়া হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি না করে পাঠানো হচ্ছে শহরের নামিদামি প্রাইভেট ক্লিনিকে।
সূত্র জানায়, হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেও ওষুধসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শহরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পাঠানো হয়। রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কমিশন পাঠানো হয় হাসপাতাল স্টাফদের কাছে। ফলে হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় না। হাসপাতালের দেয়ালে ওষুধের তালিকা দেখা গেলেও রোগীরা তার বিন্দুমাত্রও পাচ্ছেন না। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়েই রংপুর কিংবা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে চলে যাচ্ছেন। মরিয়ম নেসা এ প্রতিবেদককে বলেন, 'সকাল ১০/১১টার দিকে এসে বসে আছি, ডাক্তারের দেখা পেলেও লাভ হয়নি। আর কত কাল চলবে এভাবে। সরকার যে ওষুধ দেয়, তা যায় কই।' এদিকে সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় অপরিচ্ছন্নতার করুণ পরিণতি। নাকে কাপড় বেঁধেও দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়া যায়নি। নেই পরিচ্ছন্ন টয়লেট, গোসল খানা। ফলে রোগীরা গোসল করতে পারছেন না। খাবারের মানও তেমন ভালো নয়। যাদের টাকা আছে, তারা বাইরে থেকেই খাবার কিনে আনছেন। যাদের নেই তারা পেটের জ্বালায় তাই খাচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কনসালটেন্ট ডাক্তাররা সকাল সাড়ে আটটায় হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো আসেন-যান। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। তাদের জন্য রোগীদের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. শহিদুল ইসলাম জানান, 'হাসপাতালে রোগীর তুলনায় ডাক্তার খুব কম। ১৬ বছর আগে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু কখনোই ১০০ শয্যার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার জনবলও নেই। এতে চিকিৎসাসেবা মারাত্দকভাবে বিঘি্নত হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।