আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিনীর পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে লালবাগে খালেদা জিয়া

“In a gentle way, you can shake the world.” আমিনী ১৯৪৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের আমিনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। কাঠমিস্ত্রি ওয়াজ উদ্দীনের বখে যাওয়া পুত্র আমিনী মাদ্রাসায় পড়তো। কিন্তু মাদ্রাসায় তার পড়াশুনার খরচ না পাওয়ায় জীবিকার সন্ধানে ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে পুরান ঢাকার বড় কাটরায় গমন করে। ১৯৭১ সালে আমিনী স্বাধীনতার বিরোধী দলে ছিল। তবে আলোচিত কোনো রাজাকার না, ছিঁচকে ধরনের রাজাকার ছিল।

ব্রাক্ষনবাড়িয়া সদরের আমিনপুর এলাকায় লুটপাটে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। শাস্তিস্বরুপ ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় পাকিস্তানী সেনারা যে অস্ত্র গোলাবারুদ, যুদ্ধ সরঞ্জাম রেখে পালিয়ে যায় সেগুলোকে পাহারা দেবার জন্য তাকে প্রথমে পাহারাদার নিয়োগ করা হয়। পরে সেগুলো সরিয়ে পরিস্কার করার জন্য প্রতিদিন ছয় আনা পারিশ্রমিকে শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার এ শাস্তিমূলক কাজে নিয়োগ দেন তৎকালীন সময়ে চার খলিফাখ্যাত আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল কুদ্দুস মাখন।

১৯৭৩ সালে আমিনী সৌদি আরব পালিয়ে যায়। ফিরে আসে ১৯৭৬ সালে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান মাওলানা আহমুদুল্লাহ হাফেজির সহায়তায় লালবাগ মাদ্রাসার শিক্ষক হিসাবে যোগ দেয়। কুরআন হাদিসের ভালো ব্যাখ্যা ও বলার দক্ষতার মাধ্যমে সবার নজর কাড়ে। পরবর্তীতে আহমুদুল্লাহ হাফেজি তাঁর কন্যার সঙ্গে মুফতি আমিনীর বিয়ে দেন।

শ্বশুরের কল্যানে এই বিয়ের পর লালবাগ মাদ্রাসায় স্থায়ী আসন গেড়ে বসে। ধীরে ধীরে শ্বশুরকে মাইনাস করে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৮১ সালে শিক্ষক হয়ে রাতারাতি সিনিয়র শিক্ষক হয়ে যায়। মাওলানা আহমুদুল্লাহ হাফেজির শেষ সময়ে আমিনীর মূল অভিলাষ বুঝতে পারেন। কিন্তু ততোদিনে মাদ্রাসার কতৃর্ত্ব পুরোটাই আমিনী দখল করে ফেলে।

হাফেজ্জী ১৯৮৬ সালে মারা যাওয়ার পর আমিনী মাদরাসার প্রিন্সিপালের পদ দখল করে নেয়। গঠন করে ইসলামী ঐক্যজোট নামের রাজনৈতিক দল। । হাফেজ্জী মারা গেলে তার পুত্র মাওলানা আহমদুল্লাহ শরীফসহ অন্যান্য পুত্র কন্যাদের সুকৌশলে বাদ দিয়ে মাদ্রাসা দখল করে নেয় আমিনী। এসময় সে মাদ্রাসায় নিজের ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে।

এই ক্যাডারদের ভয়ে আহমুদুল্লাহ হাফেজির পুত্র-কন্যাদের কোনো প্রতিবাদ করার সাহস ছিলো না। মূলতঃ লালবাগ মাদ্রাসা দখল নেয়ার পরই আমিনীর উত্থান ঘটে। দীর্ঘদিন সৌদি আরব থাকার সুবাদে মাদ্রাসা ও এতিম খানায় দানের জন্য সে কিছু দাতা খুজেঁ বের করে। তাদের কাছ থেকে মাদ্রাসার নামে সাহায্য এনে নিজের কাছেই রাখে। জানা গেছে ১৯৭৬ সালের পর থেকে আমিনী ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় সুদের ব্যবসা চালু করে।

এ ব্যবসা পরিচালনার জন্য ২০ জনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। সুদের টাকার লেনদেনের সুবিধার জন্য ৫টি মোটরসাইকেলে সরবরাহ করে। নিজে অদৃশ্য থেকে তার সিন্ডিকেট ক্যাডার সদস্যদের মাধ্যমে এ ব্যবসা চালিয়ে যায়। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এই সুদ সিন্ডিকেট সদস্যদের সাথে বিরোধে মুখোমুখি হয় এনজিও সংস্থা প্রশিকা। আমিনীর সিন্ডিকেট সদস্যরা যেখানে ৮-১২% সুদ নিত, সেখানে প্রশিকা ৪ থেকে ৬% সুদে অর্থ সহায়তা দেয়।

এই নিয়ে বিরোধ বাধলে আমিনী কৌশলের আশ্রয় নেয়। সে প্রশিকার সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদানের বিষয়টি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বড় হুজুরখ্যাত প্রভাবশালী পীর সিরাজুল ইসলামকে জানায়। সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে তার ভক্তদের নির্দেশনা দিলে তারা প্রশিকার বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠে। উল্লেখ্য তার অনেক প্রভাবশীল মুরিদ সুদ ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। প্রশিকার কারণে তাদের সুদ ব্যবসা নষ্ট হবার উপক্রম ছিলো।

ফলে তারাও মাঠে নামে। এই সুযোগকে কাজে লাগায় আমিনী। তখনকার প্রশাসনের একটা অংশকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে। সুদবিরোধী মিছিলে গুলিবর্ষন হয়। ৬ জন মারা যায়।

আন্দোলন জমে উঠে। এই কাজ সফলভাবে করার সুবাদে ২০০১ সালে চারদলীয় প্রার্থী হয় আমিনী। বড় হুজুর ও ক্ষুদ্র দাদন ব্যবসায়ীরা আমিনীর পক্ষে মাঠে নামে। নির্বাচনে আমিনী জয়ী হয়। ১৯৯৯ সালের ৮ মার্চ ঢাকার এক জনসভায় ফজলুল হক আমিনী প্রকাশ্যে বলেছে, ‘আমরা ওসামার পক্ষে, আমরা তালেবানদের পক্ষে এবং ২০০০ সালের মধ্যে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা সরকার গঠন করবো।

২০০০ সালের পর থেকেই সে ঘোষণা দিয়েছে- "আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান। " ২০০০ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়নে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে’ ০৬-এ সভাপতির ভাষণে সে ফিলিস্তিনী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মতো বাংলাদেশেও ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয়। ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পরে আমিনী বাংলাদেশে তালেবানী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য মাঠে নামে। সে ওসামা বিন লাদেনের দেহরক্ষী ফুলচান জউফের মাধ্যমে মোল্লা ওমর এবং ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সুলতান জউফের ছোট ভাই চট্টগ্রামের মাওলানা তাহের ইসমাইল সকল যোগাযোগ রক্ষা করত।

উল্লেখ্য ১৯৮৮ সালের ৫ মার্চ থেকে ১৬ র্মাচ বাংলাদেশ কিছু মুজাহিদ প্রতিনিধি আফগান যায়। সেই দলে মাওলানা সুলতান জউফ, শায়খুল হাদিসের আল্লামা আজিজুল হক ছিলেন। পরবর্তীতে শায়খুল হাদিসসহ অন্যান্যরা ফিরে এলেও সুলতান জউফ আফগানিস্তানেই থেকে যায়। অভিযোগ রয়েছে, তার মাধ্যমেই আমিনী আলকায়দার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়। জানা গেছে ওসামার সাথে সম্পৃক্ত বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নাগরিক মাওলানা রফিকুল ইসলাম (নোয়াখালী), মাহমুদ আলী (সিলেট), নূরউদ্দীন কাশেমী (ঢাকা), আব্দুল কুদ্দুস (কক্সবাজার)-সহ অন্যান্য শীর্ষ জঙ্গিদের সাথে আমিনীর ছিল নিয়মিত যোগাযোগ।

বর্তমানে আব্দুর রহমান শহীদ, শেখ ফরিদ ওরফে শওকত ওসমান, মাওলানা সগীর হুজির ব্যানারে আমিনীর হয়ে কাজ করছে। পাকিস্তানের আল কায়দা প্রধান রসুল শিহাবের প্রশিক্ষন ক্যাম্পে এরা সকলেই প্রশিক্ষন নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে আল কায়দা প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান, সামরিক কমান্ডার মোঃ শাকির ও কবির হোসেন (হোমনা কুমিল্লা) ও আব্দুল গাফফার মিঠুর (বাগেরহাট) সঙ্গেও ছিল মুফতি আমিনীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। পাকিস্তান ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এআরওয়াই প্রুপ দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ সহায়তা করেছে আমিনীকে। এছাড়া আমিনীর অর্থ সহায়তাকারীর তালিকায় রয়েছে পাকিস্তানের লস্কর নেতা আব্দুর রহমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এনজিও সংস্থা আলফুজাইয়া, বাহরাইন ও সৌদি আরব ভিত্তিক সংস্থা আল হারমাইনের নাম।

হিযবুত তাহরীরের প্রধান খলিফা ড.সৈয়দ গোলাম মাওলানা আমিনীকে সমর্থন দেয়। আমিনী তার জঙ্গী কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য ৬ টি মাদ্রাসাকে ব্যবহার করেছে। এগুলো হলো দারুল আকরাম মাদ্রাসা (পশ্চিম বেড়া, ব্রাক্ষণবাড়িয়া), জামিয়া ইউনুসিয়ী মাদ্রাসা (ব্রাক্ষণবাড়িয়া), মালিহাটা মাদ্রাসা (সরাইল), সূর্যকান্দি মাদ্রাসা (সরাইল), শাহবাজপুর দারুল আকরাম মাদ্রাসা ,মইন ইসলামিয়া মাদ্রাসা। ১৯৮৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমিনী জামানত হারায়। এভাবে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হতে হতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে যোগ দেয়।

যে আসন থেকে প্রতি নির্বাচনই তার জামানত হারাতে হতো, সেই আসনে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয় শেষ সংবাদঃ গত ১২/১২/১২ মধ্যরাতে ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে আমিনীর হৃদরোগে মৃত্যু হয়। মুফতি ফজলুল হক আমিনীর কবর জিয়ারত ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার লালবাগে যান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রথম খালেদা জিয়া লালবাগ শাহি জামে মসজিদের পাশে তাঁর কবর জিয়ারত করেন। পরে তিনি লালবাগের জগন্নাথ সাহা সড়কে মুফতি আমিনীর বাসায় যান। এ সময় তিনি আমিনীর স্ত্রী মোবারাকা, তাঁদের দুই ছেলে, চার মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান।

খালেদা জিয়া তাঁদের সান্ত্বনা দেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তারসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সুত্রঃ http://prothom-aloblog.com/posts/8/126668/ Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.