আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বরের খোঁজে.....

Anything doesn’t mean everything খুঁজে চলেছি সৃষ্টি কর্তাকে। কেন এই জীবন, কি এই জীবন, কিইবা তার অর্থ? জানতে চায় মন। আজ ঈশ্বরকে যে বড়ই প্রয়োজন। ইট-বালির সভ্যতার প্রাচীরে যেখানে মাংশে গড়া মানুষের দেখা মেলে না, এখানে ঈশ্বরকে পাই কেমন করে। তাই সৃষ্টিকর্তার খোঁজে বেড়িয়ে গেলাম।

ঈশ্বর আছে হয়তো ওই পাহাড়ে ধ্যান মগ্ন, কিংবা ওই নদীর তীরে কলকল শব্দের সাথে যা মনকে দেয় শান্তি। ঈশ্বরকে খুঁজে চলেছি, চলতে চলতে দেখছি তার হাতে গড়া অদ্ভুত সুন্দর প্রকৃতি। কি অপরুপ কারুকার্য, সবুজের পর সবুজ, কি সুন্দর পাহাড়। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। যত দেখছি ততই এই হৃদয়ের আয়তন বেরে চলেছে।

গাছ বেয়ে নেমে যাওয়া কচি লতা ঠিক যেন রমণীর কাঁখে গোজা শাড়ীর আঁচল, সবুজে ঘেরা বন তারপর সুর তুলে বয়ে চলা নদী, ঠিক এক কবিতার মত। কিন্তু কোথায় কবি, কোথায় এই কবিতার কর্মকার? সৃষ্টির অর্থ খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূরে চলে এসেছি। গভীর অরন্যে হেটে চলেছি, শহর থেকে অনেক দূরে, বেঁচে থাকার যুদ্ধ ছেড়ে, ঈশ্বরের খোঁজে। সন্ধ্যা নেমে এলো। কমলার মত দেখতে সূর্যটা লুকালো ওই পাহাড়ের ওপারে।

আল-অন্ধকারের এই জয়-পরাজয় যেন, এক স্বর্গের খেলা। প্রকৃতির প্রতিটা অংশ একেবারে নিপুণ, নিখুঁত। রাতের কাল আকাশে তারা যেমন মিটিমিটি জ্বলে, তেমনি একটি মিটিমিটি আলো দেখতে পেলাম একটু দূরে। নিলাম আলোর পিছু আঁকাবাঁকা পথ ধরে, হয়তো ঈশ্বর ওখানে আছে আলো জ্বালিয়ে। আলোর উৎসের কাছে আশার পর দেখতে পেলাম ছোট্ট একটি ঘর, কচি বাঁশ ও জংলী লতাপাতা দিয়ে কোনরকম দাড়িয়ে আছে।

একটি মাত্র কক্ষের ঘরের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখলাম একজন পুরুষ, একজন মহিলা ও দুটি বাচ্চা। ঈশ্বরের দেখা মিললো না। আমাকে দেখে ঘরের ভেতরে বসা লোকটি অবাক হলেন, মহিলাটি হাতির কানের সমান ঘোমটা দিলেন, কিন্তু বাচ্চা দুটির কোন ভাবোদয় হলনা। ওরা শামুকের খোলস নিয়ে খেলছে আপন মনে। লোকটির মুখ ভরতি দাঁড়ি, এলোমেলো চুল, পরনে একটি লুঙ্গি।

লোকটি সভ্যতার ছোঁয়া লাগান এই আমাকে এই গহিন বনে দেখে অবাক হলেন, এটাই স্বাভাবিক। লোকটি হঠাৎ বলে উঠলো, “ ছেলাম স্যার, আপনি এই বর্গার নুতুন উপিচার মনে অয়, সার আর দুইডা দিন দয়া করেন স্যার, এনথিক্কা দুইডা দিন পরেই জামুগা স্যার”। আমি বললাম, “ না না আমি অফিসার না, ঘুরতে এসে পথ হারিয়েছি। আপনি পথটা দেখিয়ে দিন আমি চলে যাই”। কেন জানিনা লোকটি আমাকে আজকের রাত টা থেকে জেতে বলল।

বনের পথ রাতে খুজে পাবনা তাই আমিও লোকটির কথায় রাজি হলাম। ঘরের ভেতরে তেমন কিছু নেই, আকারেও অনেক ছোট্ট। এই শিতে লোকটি শুধু একটা লুঙ্গি গায়ে দিয়ে আছে। একটি জানালা, একটি দরজা। ঘরে ঢোকার পথ বন্ধ করার জন্য নারিকেল পাতা দিয়ে তৈরি দরজা, জানালা বন্ধ করার জন্য কিছু নেই।

ঘরের এক কোনায় মাটির মেঝের দিয়ে তৈরি চুলা, অন্য পাশে কচি বাঁশ দিয়ে তৈরি একটা ছোট্ট বাক্স, দরজার পাশে একটি খুঁটি গাথা যেখানে দুটি পরিধেয় বস্ত্র ঝুলছে। ওগুলো শাড়ি নাকি লুঙ্গি তা বোঝা যাচ্ছে না। অনেক্ষন ধরে আমি শিশু দুটির খেলা দেখছি, একটি শামুকের খোলস নিয়ে খেলছে। একজন আরেকজনের কাছ থেকে খোলসটি কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে , হাসছে, মাতিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। খেলার জিনিস বলতে মনে হয় ওদের অটাই আছে।

বুঝতে বাকি রইল না লোকটি বাচ্চা দুটির বাবা, মহিলাটি মা। মহিলাটির মুখ আমি এখনো দেখতে পারিনি, দেখার চেষ্টাও করিনি। সারা গা একটি মোটা কাপর দিয়ে ঢাকা। হঠাৎ লোকটি এসে বলল, “ বাইজান এমুন সময় আইলেন, কি দিয়া যে খেদমত করি!! রাইত অনেক অইল, কিজে খাইতে দেই?”। উত্তরের অপেক্ষা না করে হামাগুড়ি দিয়ে লোকটি তার স্ত্রীর কানে কানে কিছু বলল।

দেখলাম মহিলা বাঁশের বাক্স থেকে দুইটা মাটির থালা বের করল। একটিতে কিছু ভাত রাখা। অন্যটিতে পানি দিয়ে লোকটি আমাকে হাত ধুতে বলল। আমি হাত ধুলাম। লোকটি একটি রং উঠে যাওয়া টিনের থালা ওই বাক্স থেকে বের করে কয়েকবার ভাল করে দুয়ে আমার সামনে রাখল, ভাতের থালাটাও রাখল।

আমি অর্ধেক ভাত নিলাম। বাকি ভাত গুলো লোকটা বাচ্চাগুলোর উদ্দেশে মহিলার সামনে এগিয়ে দিল। আমাকে খাওয়া শুরু না করার ইশারা করে লোকটি হাতে একটা দড়ি নিয়ে বাইরে চলে গেল। মিনিট পাঁচেক পর পাখির দুইটা ডিম নিয়ে লোকটা ফিরে এলো। ডিমদুটো সিদ্ধ করে আমাকে খেতে দেয়া হল।

আমি একটি সিদ্ধ ডিম নিয়ে অন্যটি রেখে দিলাম। আমি খাচ্ছি সবাই আমার খাওয়া দেখছে। খাওয়া শেষে ওই বাঁশের খুঁটিতে রাখা একটি কাপড় দিয়ে আমাকে বিছানা করে দেয়া হল। আমি শুয়েই ঘুমিয়ে পরলাম। হয়তো ঘণ্টা খানেক ঘুমিয়েছি, মাটির থালার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।

দেখলাম ওই তুলে রাখা ভাত আর ডিমটা দিয়ে মহিলা বাচ্চা দুটোকে খাওয়াচ্ছে। বাচ্চা দুটিও খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। আমি শুয়ে শুয়ে আধো বোঝা চোখ দিয়ে তা দেখতে লাগলাম। এই প্রথম আমি মহিলাটির মুখ দেখলাম। সে বাচ্চা গুলর তৃপ্ত মুখ দেখেই তার ক্ষুধা নিবারন করছে।

মহিলাটির মুখের দিকে থাকিয়ে হঠাৎ মনের ভেতর মা শব্দটার ঝর বয়ে গেল। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারব না। সকাল হল, লোকটি আমাকে শহরে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিল। আমি যাওয়ার আগে আমার সাথে থাকা পানির ট্রাভেল ফ্লাস্কটা ঘুমন্ত বাচ্চা দুটির পাশে রেখে হাটা শুরু করলাম। কচি বাঁশে ভর দিয়ে শহরের দিকে হেটে চলেছি পাহারি পথ বেয়ে।

মনে একটা পরম শান্তি অনুভব করছি। লোকটির হাসি মাখা মুখটা ভেসে চলেছে চোখের সামনে। ছুরি-কাঁটা চামচের শহরে যেখানে সবাই টেবিল ম্যানার আর মুখরোচক খাবারে অভ্যস্ত সেখানে একটি মাত্র টিনের থালায় আমি পেয়েছি সম্মান, মর্যাদা। ওই ছোট্ট ঘরে থালা পূর্ণ পেট ভরা খাবার ছিলো না, ছিল তৃপ্তি-পরিপূর্ণতা। ওই ছোট্ট ঘরে কেবল সম্পর্কের আত্মীয়তা ছিলোনা, ছিল ভালবাসা, ছিল বেঁচে থাকার স্বাদ।

চলতে চলতে মনে হল আমি ঈশ্বরের দেখা পেয়েছি। ঈশ্বরকে দেখেছি ওই ছোট্ট ঘরে। যেখানে ঘর গড়ে ভালবাসায়, আত্মীয়তা হয় আত্মায়, কেবল ইট-বালি কিংবা সামাজিক সম্পর্কে নয়। ঈশ্বর আছেন অন্তরে, আছেন বিশ্বাসে, ভালবাসায়। আমাকে আর বেশি দূর যেতে হল না।

জীবনের অর্থ খুজে পেয়ে আমি পরিতৃপ্ত মনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। ট্রেনে বসে পাশের লোকগুলোকে দেখছি, দেখছি ঈশ্বর সবার মাঝে আছেন, সব জায়গায় আছেন। মৃদু বাতাস আমার গায়ে ছোঁয়া দিয়ে গেল, আমি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, মনে মনে ভাবতে লাগলাম যেখানে ছোট্ট ঘরে শূন্য থালায় সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন পূর্ণ তৃপ্তি, যেখানে আমি জিবনের অর্থ খুজে পেলাম ওই মানুষ গুলোর নাম জানা হলোনা। ট্রেন ছুটে চলেছে, আমিও চলছি ওই শহর পানে... খুঁজে চলেছি সৃষ্টি কর্তাকে। কেন এই জীবন, কি এই জীবন, কিইবা তার অর্থ? জানতে চায় মন।

আজ ঈশ্বরকে যে বড়ই প্রয়োজন। ইট-বালির সভ্যতার প্রাচীরে যেখানে মাংশে গড়া মানুষের দেখা মেলে না, এখানে ঈশ্বরকে পাই কেমন করে। তাই সৃষ্টিকর্তার খোঁজে বেড়িয়ে গেলাম। ঈশ্বর আছে হয়তো ওই পাহাড়ে ধ্যান মগ্ন, কিংবা ওই নদীর তীরে কলকল শব্দের সাথে যা মনকে দেয় শান্তি। ঈশ্বরকে খুঁজে চলেছি, চলতে চলতে দেখছি তার হাতে গড়া অদ্ভুত সুন্দর প্রকৃতি।

কি অপরুপ কারুকার্য, সবুজের পর সবুজ, কি সুন্দর পাহাড়। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। যত দেখছি ততই এই হৃদয়ের আয়তন বেরে চলেছে। গাছ বেয়ে নেমে যাওয়া কচি লতা ঠিক যেন রমণীর কাঁখে গোজা শাড়ীর আঁচল, সবুজে ঘেরা বন তারপর সুর তুলে বয়ে চলা নদী, ঠিক এক কবিতার মত। কিন্তু কোথায় কবি, কোথায় এই কবিতার কর্মকার? সৃষ্টির অর্থ খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূরে চলে এসেছি।

গভীর অরন্যে হেটে চলেছি, শহর থেকে অনেক দূরে, বেঁচে থাকার যুদ্ধ ছেড়ে, ঈশ্বরের খোঁজে। সন্ধ্যা নেমে এলো। কমলার মত দেখতে সূর্যটা লুকালো ওই পাহাড়ের ওপারে। আল-অন্ধকারের এই জয়-পরাজয় যেন, এক স্বর্গের খেলা। প্রকৃতির প্রতিটা অংশ একেবারে নিপুণ, নিখুঁত।

রাতের কাল আকাশে তারা যেমন মিটিমিটি জ্বলে, তেমনি একটি মিটিমিটি আলো দেখতে পেলাম একটু দূরে। নিলাম আলোর পিছু আঁকাবাঁকা পথ ধরে, হয়তো ঈশ্বর ওখানে আছে আলো জ্বালিয়ে। আলোর উৎসের কাছে আশার পর দেখতে পেলাম ছোট্ট একটি ঘর, কচি বাঁশ ও জংলী লতাপাতা দিয়ে কোনরকম দাড়িয়ে আছে। একটি মাত্র কক্ষের ঘরের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখলাম একজন পুরুষ, একজন মহিলা ও দুটি বাচ্চা। ঈশ্বরের দেখা মিললো না।

আমাকে দেখে ঘরের ভেতরে বসা লোকটি অবাক হলেন, মহিলাটি হাতির কানের সমান ঘোমটা দিলেন, কিন্তু বাচ্চা দুটির কোন ভাবোদয় হলনা। ওরা শামুকের খোলস নিয়ে খেলছে আপন মনে। লোকটির মুখ ভরতি দাঁড়ি, এলোমেলো চুল, পরনে একটি লুঙ্গি। লোকটি সভ্যতার ছোঁয়া লাগান এই আমাকে এই গহিন বনে দেখে অবাক হলেন, এটাই স্বাভাবিক। লোকটি হঠাৎ বলে উঠলো, “ ছেলাম স্যার, আপনি এই বর্গার নুতুন উপিচার মনে অয়, সার আর দুইডা দিন দয়া করেন স্যার, এনথিক্কা দুইডা দিন পরেই জামুগা স্যার”।

আমি বললাম, “ না না আমি অফিসার না, ঘুরতে এসে পথ হারিয়েছি। আপনি পথটা দেখিয়ে দিন আমি চলে যাই”। কেন জানিনা লোকটি আমাকে আজকের রাত টা থেকে জেতে বলল। বনের পথ রাতে খুজে পাবনা তাই আমিও লোকটির কথায় রাজি হলাম। ঘরের ভেতরে তেমন কিছু নেই, আকারেও অনেক ছোট্ট।

এই শিতে লোকটি শুধু একটা লুঙ্গি গায়ে দিয়ে আছে। একটি জানালা, একটি দরজা। ঘরে ঢোকার পথ বন্ধ করার জন্য নারিকেল পাতা দিয়ে তৈরি দরজা, জানালা বন্ধ করার জন্য কিছু নেই। ঘরের এক কোনায় মাটির মেঝের দিয়ে তৈরি চুলা, অন্য পাশে কচি বাঁশ দিয়ে তৈরি একটা ছোট্ট বাক্স, দরজার পাশে একটি খুঁটি গাথা যেখানে দুটি পরিধেয় বস্ত্র ঝুলছে। ওগুলো শাড়ি নাকি লুঙ্গি তা বোঝা যাচ্ছে না।

অনেক্ষন ধরে আমি শিশু দুটির খেলা দেখছি, একটি শামুকের খোলস নিয়ে খেলছে। একজন আরেকজনের কাছ থেকে খোলসটি কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে , হাসছে, মাতিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। খেলার জিনিস বলতে মনে হয় ওদের অটাই আছে। বুঝতে বাকি রইল না লোকটি বাচ্চা দুটির বাবা, মহিলাটি মা। মহিলাটির মুখ আমি এখনো দেখতে পারিনি, দেখার চেষ্টাও করিনি।

সারা গা একটি মোটা কাপর দিয়ে ঢাকা। হঠাৎ লোকটি এসে বলল, “ বাইজান এমুন সময় আইলেন, কি দিয়া যে খেদমত করি!! রাইত অনেক অইল, কিজে খাইতে দেই?”। উত্তরের অপেক্ষা না করে হামাগুড়ি দিয়ে লোকটি তার স্ত্রীর কানে কানে কিছু বলল। দেখলাম মহিলা বাঁশের বাক্স থেকে দুইটা মাটির থালা বের করল। একটিতে কিছু ভাত রাখা।

অন্যটিতে পানি দিয়ে লোকটি আমাকে হাত ধুতে বলল। আমি হাত ধুলাম। লোকটি একটি রং উঠে যাওয়া টিনের থালা ওই বাক্স থেকে বের করে কয়েকবার ভাল করে দুয়ে আমার সামনে রাখল, ভাতের থালাটাও রাখল। আমি অর্ধেক ভাত নিলাম। বাকি ভাত গুলো লোকটা বাচ্চাগুলোর উদ্দেশে মহিলার সামনে এগিয়ে দিল।

আমাকে খাওয়া শুরু না করার ইশারা করে লোকটি হাতে একটা দড়ি নিয়ে বাইরে চলে গেল। মিনিট পাঁচেক পর পাখির দুইটা ডিম নিয়ে লোকটা ফিরে এলো। ডিমদুটো সিদ্ধ করে আমাকে খেতে দেয়া হল। আমি একটি সিদ্ধ ডিম নিয়ে অন্যটি রেখে দিলাম। আমি খাচ্ছি সবাই আমার খাওয়া দেখছে।

খাওয়া শেষে ওই বাঁশের খুঁটিতে রাখা একটি কাপড় দিয়ে আমাকে বিছানা করে দেয়া হল। আমি শুয়েই ঘুমিয়ে পরলাম। হয়তো ঘণ্টা খানেক ঘুমিয়েছি, মাটির থালার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম ওই তুলে রাখা ভাত আর ডিমটা দিয়ে মহিলা বাচ্চা দুটোকে খাওয়াচ্ছে। বাচ্চা দুটিও খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।

আমি শুয়ে শুয়ে আধো বোঝা চোখ দিয়ে তা দেখতে লাগলাম। এই প্রথম আমি মহিলাটির মুখ দেখলাম। সে বাচ্চা গুলর তৃপ্ত মুখ দেখেই তার ক্ষুধা নিবারন করছে। মহিলাটির মুখের দিকে থাকিয়ে হঠাৎ মনের ভেতর মা শব্দটার ঝর বয়ে গেল। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারব না।

সকাল হল, লোকটি আমাকে শহরে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিল। আমি যাওয়ার আগে আমার সাথে থাকা পানির ট্রাভেল ফ্লাস্কটা ঘুমন্ত বাচ্চা দুটির পাশে রেখে হাটা শুরু করলাম। কচি বাঁশে ভর দিয়ে শহরের দিকে হেটে চলেছি পাহারি পথ বেয়ে। মনে একটা পরম শান্তি অনুভব করছি। লোকটির হাসি মাখা মুখটা ভেসে চলেছে চোখের সামনে।

ছুরি-কাঁটা চামচের শহরে যেখানে সবাই টেবিল ম্যানার আর মুখরোচক খাবারে অভ্যস্ত সেখানে একটি মাত্র টিনের থালায় আমি পেয়েছি সম্মান, মর্যাদা। ওই ছোট্ট ঘরে থালা পূর্ণ পেট ভরা খাবার ছিলো না, ছিল তৃপ্তি-পরিপূর্ণতা। ওই ছোট্ট ঘরে কেবল সম্পর্কের আত্মীয়তা ছিলোনা, ছিল ভালবাসা, ছিল বেঁচে থাকার স্বাদ। চলতে চলতে মনে হল আমি ঈশ্বরের দেখা পেয়েছি। ঈশ্বরকে দেখেছি ওই ছোট্ট ঘরে।

যেখানে ঘর গড়ে ভালবাসায়, আত্মীয়তা হয় আত্মায়, কেবল ইট-বালি কিংবা সামাজিক সম্পর্কে নয়। ঈশ্বর আছেন অন্তরে, আছেন বিশ্বাসে, ভালবাসায়। আমাকে আর বেশি দূর যেতে হল না। জীবনের অর্থ খুজে পেয়ে আমি পরিতৃপ্ত মনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। ট্রেনে বসে পাশের লোকগুলোকে দেখছি, দেখছি ঈশ্বর সবার মাঝে আছেন, সব জায়গায় আছেন।

মৃদু বাতাস আমার গায়ে ছোঁয়া দিয়ে গেল, আমি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, মনে মনে ভাবতে লাগলাম যেখানে ছোট্ট ঘরে শূন্য থালায় সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন পূর্ণ তৃপ্তি, যেখানে আমি জিবনের অর্থ খুজে পেলাম ওই মানুষ গুলোর নাম জানা হলোনা। ট্রেন ছুটে চলেছে, আমিও চলছি ওই শহর পানে... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।