আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাদুর গোলোক

সত্য ও সুন্দরের পথের অভিযাত্রী আমি, কিছুতেই যেন এ যাত্রা শেষ না হয়... অনেক দিন আগের কথা । এক গ্রামে থাকত এক কৃষক তার একটি মেয়ে ছিল। খুবই সাধারন একটা মেয়ে। বাবা মায়ের কাজে সাহায্য করত নদী থেকে পানি আনা, রান্নার কাজে মাকে সাহায্য করা, ঘর গোছানো, উঠান ঝাড়ু দেয়া যাবতীয় কাজে সে পারদর্শী ছিল। গ্রামের পাঠশালায় সে পড়ালেখা করত।

খুব সকালে তাকে পাঠশালায় যেতে হত। তার এত সকালে উঠতে ভাল লাগত না, শুধু ফাকি দিতে চাইত। তার কোন ভাই-বোন ছিলনা, সারাদিন তাকে একা একা থাকতে হত। যা তার মোটেও পছন্দ না। প্রতিদিনের মতই সে নদী থেকে পানি আনতে গিয়েছিল সেদিন, হঠাৎ সে দেখতে পেল নদী পারে একটা কাঁচের বোতল পরে আছে, সে সেটিকে খোলার সাথে সাথে অবাক কাণ্ড ঘটলো, বোতলের ভেতর থেকে একটা ধবধবে সাদা পরী বের হয়ে এল, সে প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে বুঝল যে পরীটি তার ক্ষতি করবেনা।

উল্টা পরীটি তাকে মুক্ত করার জন্য মেয়েটিকে একটা উপহার দিল, সেটি ছিল একটি জাদুর গোলোক, এরপর ওরা দুজন অনেক গল্প করল তারপর পরীটি চলে যেতে চাইলে মেয়েটি বলল যদি তোমার কথা মনে পরে তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে তাহলে কি করব? আর এই গোলোকটি দিয়ে বা কি করব? জানো তোমার সাথে কথা বলে আমার খুব ভাল লেগেছে, খুব ইচ্ছা হচ্ছে তোমাকে আমার কাছে রেখে দেই, আমার তো কোন ভাই-বোন নাই। তখন পরী বলল তুমি এই গোলোকটি দিয়ে অন্য মানুষদের দেখতে পাবে, তবে শর্ত হল এই... যাদের কাছে এমন আরেকটি গোলোক আছে শুধু তাদেরি দেখতে পাবে, আর আমার কথা মনে পরলে গোলোকটিতে হাত বুলিয়ে বলবে, 'পরী পরী পরী... করি তড়িঘড়ি...আমার কাছে এসো উড়ি'...আর আমি সাথে সাথে চলে আসবো । এখন আমি যাই। দুষ্ট দৈত্য এর হাত থেকে আমার রাজ্যকে উদ্ধার করতে হবে, এই বলে পরী চলে গেল। মেয়েটি পানি আর ওই জাদুর গোলোকটি নিয়ে বাড়ি ফিরল।

এক বিকেলে সে গোলোকটি হাতে নিয়ে বলছিল কেউ কি আছেন? আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন? অনেক্ষন পর গোলোকটিতে একটি মানুষের ছবি ভেসে উঠলো, সে বলল কে তুমি? আর তুমি এই গোলোক পেলে কিভাবে? তখন মেয়েটি বলল আমি বৃষ্টি, আর এই গোলোকটি আমাকে পরী দিয়েছে, কিন্তু তুমি কে? তুমি গোলোক পেলে কেমন করে? মেয়েটি পাল্টা প্রশ্ন করল। তখন ছেলেটি বলল আমার নাম গগন, আর এই গোলোক আমার বাবা আমাকে দিয়েছেন, তিনি পরীর দেশে বাণিজ্য করতে গেলে সেখান থেকে নিয়ে আসেন। তখন গগন বলল তুমি কি কর? কোথায় থাক? বৃষ্টি বলল আমি কদমতলি গ্রামে থাকি, আমি পাঠশালায় পড়ি, আর বাড়িতে মাকে কাজে সাহায্য করি। তখন বৃষ্টি বলল তোমরা কয় ভাই-বোন? তুমি কই থাক? কি কর? জবাবে গগন বলল আমার কোন ভাইবোন নাই, আমি একা আর আমি ও পড়ালেখা করি আর বাবার বাণিজ্যের কাজে সাহায্য করি, বৃষ্টি শুনে খুব মন খারাপ করে বলল জানো আমার কোন ভাইবোন নাই, তুমি আমার ভাই হবে? গগন ও খুশি হয়ে বলল আচ্ছা ঠিকাছে। এভাবে তারা প্রতিদিন কথা বলতে লাগলো।

একদিন না কথা হলেই বৃষ্টি অস্থির হয়ে যেত। মনে করত তার ভাইটি বুঝি অসুস্থ বা কোন বিপদ হয়েছে তার ভাইয়ের। এমন করে টানা তিনমাস কথা বলল। মাঝে মাঝে গগন বৃষ্টিকে বকাঝকা করত, যদি কোন ভুল পেত। আর বৃষ্টি ও বকা খেয়ে নিজেকে শুধরে নিত।

কিন্তু সেইদিন গগন হুট করেই বৃষ্টিকে বলল আজ আমাদের শেষবারের মত কথা হচ্ছে, তখন বৃষ্টি না করলে গগন বলল বড়দের মুখের উপর কথা বলিস কেন? তাহলে কিন্তু আমি গোলোক থেকে তোকে বের করে দিব, তুই চাইলেও আমাকে দেখতে পারবি না, এখন তো তাও তুই আমাকে দেখতে পাবি যখন মন চায় তখন। বৃষ্টি বলল ঠিকাছে আমি আর কথা বলার জন্য তোমাকে ডাকব না, কি আশ্চর্য! যেই বৃষ্টিকে কেউ কিছু বলার আগেই তার চোখে জল চলে আসতো কিন্তু সেইদিন বৃষ্টি একটুও কাঁদেনি। সে বুঝতে পারেনি সে কি করেছে, কেন তার ভাইটি তাকে এই শাস্তি দিল। এখন বৃষ্টি কাদে কিন্তু লুকিয়ে কেউ দেখে না তার কান্না। সে প্রতিদিন জাদুর গোলোকটি নিয়ে বসে থাকে তার ভাইকে দেখার জন্য, কিন্তু তার ভাই ধীরে ধীরে তাকে গোলোক থেকে বের করে দিচ্ছে, এখন আর তেমন ভাবে সে তার ভাইকে দেখতে পারে না, সে সমস্যার সমাধান কেমন করে করবে জানে না, সে গোলোকটি হাতে নিয়ে বসে থাকে যদি একবারের জন্য হলেও তার ভাইটি তাকে ডাকে, যদি একবারও বলে বৃষ্টি তুই এটা করলি কেন? তোর শাস্তি হবে কান ধরে উঠবস কর? যদি প্রতিদিন এর মত করে তার ভাই তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে বৃষ্টি ওঠ, পাঠশালা যাবি না? সে এখনও এ আশায় বসে আছে যে তার ভাই একদিন তাকে নিশ্চয়ই ডাকবে জাদুর গোলোক থেকে তাকে বের করে দিবে না, শুধু জাদুর গোলোক না, একদিন ভোরবেলায় এসে বলবে বৃষ্টি দরজা খোল দেখ কে এসেছে? সে এই আশায় এখনও অপেক্ষা করে আছে---- মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত সে তার ভাইএর পথ চেয়ে বসে থাকবে............ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।