আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাদুর মেশিন আর আমি।

কাজ করতে করতে আসল কাজটাই করা হয় না আমার। আর তাই আজও কাজ ছারতে পারলাম না। “সুমন” ঢাকায় থাকা একটি মধ্যবর্তি পরিবারের ছেলে, সে ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে একদিন ঠিক করল এমন একটি মেশিন তৈরি করবে যা দিয়ে প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ করা যায়। অনেক গবেষণা আর চেষ্টার পর একদিন সে যা আবিষ্কার করল তার ফলাফল যতটা তার কল্পনায় ছিল তারচে অনেক বেশই হয়েছে ।

তখন সে মাস্টার্স শেষ করেছে মাত্র। এরমদ্ধে অনেক বিজ্ঞানীর সাথে তার ইন্টারনেটে যোগাযোগ হয়েছে, পরিবার থেকে বা বন্ধুমহল থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছে সুমন। কাউকে না যানিয়েই একদিন সুমন তার মেশিনটি নিয়ে পরীক্ষায় নামলেন। মেশিনটার ধরন অনেকটা কালো বাক্সর মত একটি ছোট ল্যাপটপ ও আছে তার সাথে যাদিয়ে প্রকৃতি থেকে আসা বিভিন্ন সিগন্যাল কনভার্ট করে মানুষের উপযুগি করে তোলা হয়। সেখানে একটা হেডফোন রয়েছে যেখানে প্রকৃতি থেকে আসা বিভিন্ন সিগন্যাল কনভার্ট করে যে শব্দ তৈরি হয় তা শোনা যায়।

এবার সুমন ওর বাসার ছাদে ছোট্ট বাগানের মাঝে বসে অন করে(হেডফোন কানেদিয়ে)। প্রচন্ড শব্দে ও ভয়পায়। এরপর মেশিনটা একটু ঠিকঠাক করে আবার চালায়। এবারো সে একই বিকট শব্দ যা কোন মানুষের পক্ষে টানা দুই মিনিট এর বেশি শোনা সম্ভব না। এরপরও সুমন যোরকরে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে কোন ম্যাসেজ পাওয়া যায় কিনা।

কিন্তু সেটা আর পাওয়া গেলনা। কিন্তু ল্যাবেতো ঠিকই স্বাভাবিক টিউনটা ছিল যখন সে একটি ক্যাঁকটাস নিয়ে পরীক্ষা করছিল! মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় সুমনের। এভাবে সে বাইরে পরীক্ষা করে, কিছু সবুজ বাগান, কিছু গাছের নিচে বা পার্কে কিন্তু লাভ হয় না। প্রতিবারিই মাথাধরা কিছু নয়েজ যা সুমনের কাছে কোন অর্থ বহন করে না। এবার সে মানুষিক ভাবে খুবই ভেঙ্গে পরে ও মেশিনটাকে ভেঙ্গে ফেলতে চায় টেবিলের উপর সব গবেষণার পেপার ছি্রে ফেলে অনেক ছিগারেট খায় আর ভাবতে থাকে কি করাযায়।

এভাবেই চলে যায় কিছুদিন... হথাৎ কলিং বেল বাজে , সুমন অনেক কষ্টে খাট থেকে উঠে দরজা খুলে দেখে নাতাশা । “নাতাশা” নাতাশা হচ্ছে সুমনের একমাত্র বন্ধু যার কাছে সে সব সময় অনেক শিশুসুলভ। নাতাশা চারুক্লায় পড়ে, অনেক সুন্দর নয় কিন্তু ওর কাছে কিছু একটা আছে যা সুমনকে বাদ্ধ করে জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে। সাদাকালো জীবনের মাঝে একটুকর রঙ্গিন আলো। নাতাশার সাথে এ ব্যাপারে তার কোন কথা হয় না।

সুমন সুধুই বলে নাতাশা আমি মুক্তি চাই, আমার এখানে কোন অধিকার নাই। নাতাশা সুমনকে বলে কতদিন আর এভাবে ছায়ার পেছনে ছুটবি। -আমি পরশু গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি... -কেন ? -গ্রাম দেখতে। -ও তুইত পেইন্টার। -যাবি ? অনেক সুন্দর আমাদের গ্রাম।

-না? আমার অনেক কাজ। -হ্যাঁ ওখানে যেয়েও ত করা যায় তাই না। এখন ইন্টারনেট এর যুগে তুই... এভাবে অনেকক্ষণ কথা চলার পর সুমন যেতে রাজী হয় কিন্তু সর্ত হচ্ছে সে তার মেশিন নিয়ে যাবে। নাতাশা তাতেই খুশী। সুমন তার মেশিন নিয়ে অনেক চিন্তিত।

প্রতিদিন ২/৩ জন বিদেশি প্রফেসর এর সাথে কথা হয়। সবাই বিভিন্ন সমাধানের চেষ্টা করে কিন্তু কোন লাভ হয় না। হেডফোন কানেই দেওয়া যায় না। বরং মেশিন যত আপডেট হচ্ছে শব্দ ততই বিকট হচ্ছে। এর মধ্যে নাতাশার গ্রামের বাড়ি যাবার সময় এসে পরে।

সুমন সব কিছু গুছিয়ে নেয়। সে মানুষিক ভাবে প্রস্তুত না এখন কোথায় যাবার জন্য। নাতাশার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর অতএব অনেক লম্বা পথ। অবশেষে তারা যায় এবং ভালোই ঘুরতে থাকে। সবুজ গ্রাম, মেঠপথ, বাজার, ষাণ বাঁধানো পুকুর আরও কতকি।

এদিকে নাতাশার এক মামত ভাই সুজন সুমনের মেশিনটা দেখতে পায় ও হেডফোন দেখে ভাবে কোন গান-টান শোনার জিনিস। সে সরল মনে কানে লাগিয়ে অন বাটন চাপে। কিন্তু কিছুই হয় না। এরপর ব্রিফকেসের মত একটা ডালা খোলে এবং দেখে অনেক তারটার যরানো, সে এগুলো বোঝেনা তাই আর না দেখে রেখে দেয়। এভাবে একদিন বিকালে সুমন, সুজন ও নাতাশা একসাথে কুকুর ধারে বসে আছে।

তখন হথাৎ সুজন বলে -সুমন ভাই আমি একটু গান শুনতে চাই। -তার জন্য আমি কি করতে পারি ভাই ? -আপনার কাছে যে বিশাল মেশিন দেখলাম, ওটা দিয়ে আপনি কি করেন ! আমি একটু খানই শুনব। -সুমন ত অবাক। আর নাতাশার অবস্থা নাও করতে পারে না হ্যাঁও বলতে পরে না। সুমন বোঝাবার চেষ্টা করে যে -এটা কাজের জিনিষ, গান শোনা যায় না, শুধুই বিরক্তিকর শব্দ হয়।

-আমি ওই শব্দই শুনব আপনি আমারে একটু দেন প্লিজ সুমন ভাই। এরপর সুমন রাজি হয়। এবং পরদিন সকালে সে তার মেশিনটি নিয়ে যায় বাড়ির বাইরে যেখানে অনেক গাছ আর বিশাল মাঠ আর মাঠ। সেখানে দুজন (সুজন ও নাতাশা) অধির আগ্রহ নিয়ে আছে যে কি হয়, কিবা শোনা যায়। সুমন খুব সাধারণ ভাবেই মেশিনটা চালাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সুজন – সুমন ভাই এটা দিয়ে কি শোনা যায় ? সুমন- কিছুই না(একটু রেগে) আগে শোন। এই বলে সুজন কানে হেডফোন লাগিয়ে নেয়। কিচ্ছুক্ষণ পরে সুমন মেশিন অন করে আর সুজনকে বলে শোন । নাতাশা এবং সুমন দুজনেই সুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। একটু পর সুমন বলে -ও পারছে কিভাবে ? -কেন ? প্রকৃতির শব্দ কি আতি খারাপ।

এবার সজুনের কান থেকে হেডফোন নেয় নাতাশা। সুজন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাতাশা দিকে। ওমা সে কি নাতাশাও অনেক্ষন ধরে শুনছে। তার মানেকি। তাদের ঐ বিরক্তিকর শব্দ শুনতে ভাল-লাগছে! নাতাশা বলে, -এত মধুর শব্দ আমি আমার জীবনে শুনি নি।

আর তুমি বল যে বাজে নয়েজ যা ১মিনিট শোনা যায় না। সুমন তারাতারি নাতাশার কানের থেকে হেডফোনটা খুলে নিজের কানে পরে নেয়। এরপর যা সে শুনতে পায় তা আর আমি লিখে বোঝাতে পারলাম না। পরদিনিই সুমন রওনা হয় ঢাকা। এবং আবার সে মেশিনে শুনতে পায় সেই বিরক্তিকর কান নষ্ট করা আওয়াজ।

এবার সুমন বুঝতে পারে সে যেই জিনিশ তৈরি করেছে তা খুবই শক্তিশালি যন্ত্র। আমাদের ঢাকার শহর এখন যে কতটা আক্রান্ত তা এই যন্ত্রর মাধ্যমে আমি পরিস্কার। © সাজিদুর রহমান ২০১২ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।