আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নপুংশক কথন

বলার মত তেমন কিছু নেই। একটি চমৎকার হত্যাযজ্ঞ দেখলাম। ভিডিও দেখলাম, আগুনঝরা লেখা পড়লাম, বিশেষজ্ঞদের (!) গা বাঁচানো মতামত শুনলাম এবং সবশেষে আমি নিজেকে একজন যথার্থ নপুংশক ঘোষণা করলাম। আজ হয়ত আমি দেখছি, কাল তোমরা আমাকেও দেখতে পারো। কবিগুরু, ভুল বলনি তুমি, “ষোল কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ নপুংসক করে, লিঙ্গ বলে দাওনি” (পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত)।

হ্যাঁ, আমি বিশ্বজিতের কথাই বলছি। এতগুলো চোখের সামনে একজনকে এভাবে হত্যা করা হল, কেউ কিছুই বলল না (আমি ওইখানে থাকলেও কিছু বলতাম না, উপরেই তার কারন আমি ঘোষণা করেছি), তাহলে ঐ চোখগুলোর মালিক কারা ছিলেন? ক্যামেরাম্যান আর সাংবাদিকরা না হয় তাদের অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ কাজে (!) ব্যাস্ত ছিলেন। আর হত্যা থামানো তো তাদের কাজ না, ওটা পুলিশের কাজ। কিন্তু উনারা ছিলেন কোথায়? ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম, উনারা তো তখন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্রকারীদের নিরস্ত করতেই ব্যাস্ত ছিলেন। আর তাছাড়া মাত্র আগেরদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট এর সোনার ছেলেরা এত্তবড় একটা কাপ জিতল, আনন্দ উদযাপন করার পারমিশানও ছিল, তাই পোলাপানরা রঙ নিয়ে একটু তামাশা করতেই পারে, বিশ্বজিতের গায়ের লাল রঙ দেখে তারা ভেবেছিলেন সবাই রঙ তামাশা করছে।

তাই তারা এদিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে নিজেদের কাজে আবার ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি চোখের মালিকরা? তাদের মধ্যে কি একজন মানুষও ছিলেন না? যদি থেকে থাকেন তাহলে কোন প্রজাতির ছিলেন? পুরুষ নাকি মহিলা? নাকি আমার মত? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ বোধ করি তারা আমার গোত্রীয় ছিলেন, একদল নপুংশক। হামলাকারীরা (যে দলের, মতের বা ধর্মেরই হোক না কেন) কতজন ছিল? তাদেরকে থামানোর জন্যে কতগুলো মানুষের দরকার ছিল? একজনও কি ছিলেন না সেখানে? আমার প্রশ্নগুলো অবান্তর। কারন সেখানে যদি একজন মানুষও থাকতো তাহলে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটত না। আমাদের চোখ আজ মৃত্যু দেখতে দেখতে অভ্যস্ত, ক্লান্ত।

হত্যাকাণ্ড আমাদের জন্যে পত্রিকার শিরোনাম ছাড়া আর কিছুই না। তার চেয়ে বড় কথা আমরা অনেক দ্রুত সব কিছু ভুলে যাই। আর কয়দিন পরেই হয়ত বন্ধুরা কেউ যদি বিশ্বজিতের কথা তোলে তখন আমিই হয়ত চোখ গোল গোল করে বলবো, ‘বলিস কি! কুমার বিশ্বজিত মারা গেলেন কবে?’ (দুঃখিত কুমারদা, নামের মিল থাকায় আপনার নামটা ব্যাবহারের জন্য)। এতটাই বিস্মৃতিপরায়ন আমরা। এখন সব স্থানে বিশ্বজিত ঝড় চলছে।

টিভি চ্যানেলে ‘বিশ্বজিত টকশো’, পত্রিকায় ‘বিশ্বজিত কলাম’, ব্লগে ‘বিশ্বজিত ব্লগ’ facebook এ ‘বিশ্বজিত স্ট্যাটাস, পোস্ট, শেয়ার, লাইক’, চায়ের দোকানে বিশ্বজিত আড্ডার ঝড় আরও কত কি! এই ‘বিশ্বজিত’ টপিক নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা এখন তাদের সুচিন্তিত (!) বুদ্ধির ফসলগুলো বের করবেন, রাজনীতিবিদরা করবেন রাজনীতি, ‘সঙ’বাদ মাধ্যমগুলো কি যে করবেন তারা তা ঠিক মত জানেনও না, আর সুবিধাবাদীরা (আমার মত, কিছু একটা করে বাহবা নেয়া বা টু পাইস কামানো) তো সুবিধা নেয়ার জন্যে তক্কে তক্কেই থাকেন। তারপর নতুন একটা কিছু হবে, আমরা সেটা নিয়ে নতুন ‘ঝড়’ শুরু করব। কিন্তু মানবতার যে অংশটুকুকে ‘খুন’ করা হল তা কি আমাদের কারও মনে থাকবে? একবারও কি ভাবছি যে সেখানে আমার আপন কেউ, নিদেন পক্ষে চেনা কেউ অথবা আমি নিজেও তো থাকতে পারতাম। অন্যেরা বাদাম খেতে খেতে আমার ‘ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড’ (!) দেখতে পারত, আমাকে হত্যার দৃশ্য ভিডিও করত নিজেদের মুঠোফোনে আর রাতে বন্ধু আর পরিবারের মাঝে গিয়ে বলত, ‘দেখ, কি মারাত্মক ভিডিও পাইসি। আহারে বেচারা ছেলেটা, কত কষ্টই না পাইল।

উহহহহ... আহহহহ... দ্যাট ওয়াজ রিয়্যেলি ব্যাড ড্যুড’, তারপর Youtube বা Metacafe তে নিজের একাউন্টে ভিডিওটা আপলোড করে একটু পর পর দেখত কয়টা Viewer হয়েছে। কিন্তু একবারও কি আমরা ভাবছি যে ভবিষ্যতে ঐ পশুদের জন্য আমরা নিজেরাই তো নিরাপদ রাস্তা করে দিচ্ছি। আমাদের আচরন আজ আমাদের জন্য বা আমাদের পরিচিত মহলে স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু সমাজের চোখে, মানবতার চোখে কি আমরা অপরাধী না? আমার চোখের সামনে অপরাধ করে ওরা পালিয়ে যায় আর আমি নিজের নপুংশকতার দোহাই দিয়ে চুপ করে থাকি। এভাবে আর কতদিন? আমার শিক্ষা দীক্ষা খুবই সামান্য।

জ্ঞান তো বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। তারপরেও যেটুকু আছে সেটুকু দিয়েই বলছি, যা ঘটছে তা কি ঠিক? আজকে আমি, আমার কোন মা, বোন বা ভাই যদি ওদের পরবর্তী শিকারে পরিণত হই তাহলে দয়া করে আপনারা আমার ভুমিকায় (নপুংশক) অবতীর্ণ না হয়ে মানুষের ভুমিকায় অবতীর্ণ হবেন। তাহলে হয়ত মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের ক্ষমা করতেও পারেন। পবিত্র আল কুরআন এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ‘বনি ইসরাইলের সন্তানদের প্রতি নির্দেশ থাকল, যদি কোন ব্যাক্তি নিরাপরাধ এক ব্যাক্তিকে হত্যা করল, তাহলে সে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল, আর যদি কেউ একটি জীবন রক্ষা করল, তাহলে জেনে রেখ সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে রক্ষা করল। - সূরা আল মায়িদাহ (৫:৩২)।

মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে রক্ষা করুন, আমীন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.