চান্নিপসর রাইতে যেন আমার মরন হয়। অনেক দিন পর এমন শান্তিতে ঘুমালাম। বড় বড় দালানের মানুষেরা যেটাকে বলে বিউটি স্লিপ। পার্থক্য একটাই, তারা ঘুমায় এসির বাতাসে আর আমি ঘুমালাম গাছের ছায়ায়। আরো কিছুক্ষন ঘুমাতে পারতাম।
কার যেন একটা হাসির শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল। খুব ঘনিষ্ঠ নড়াচড়া। অন্তরঙ্গ মুহূর্ত। আমি একটু অবাকই হলাম। হোক নাহয় ঝোপেড় আড়ালে।
চারিদিকে তো আর মানুষের অভাব নাই। তাই বলে পার্কের ভিতরে বসে!! সেই সকাল থেকে বসে আছি। মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসল। অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ব্যাঘাত ঘটানোর বুদ্ধি। ভয় দেয়া যেতে পারে।
ঝোপেড় অপাশে তারা, এপাশ থেকে আমি বলব, “হাঁউ মাঁউ খাঁউ, মানুষের গন্ধ পাঁউ”। ভয় পাবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য সন্দিহান। গত ঈদে ছোট চাচাত বোনকে ভয় দেবার চেষ্টা করেছিলাম। ভয়তো পায়নি, বরং আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষন। যেন আমার মাথায় বড় ধরনের কোন সমস্যা আছে।
ভয় আর দিতে পারলাম না। জোড়া পাখি চলে যাচ্ছে, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে কিনা।
সকালের নাস্তা খাওয়ার পর মানিব্যাগে ছিল আর ৫৮ টাকা। দুপুরের খাবার খেলাম পার্কের পাশেই। ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান।
খিচুড়ি ছিল। ৪০ টাকা দাম। লোভ সামলাতে পারলাম না। এই এক সমস্যা আমার, খিচুড়ি দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা। খাওয়া দাওয়া সারার পর একটা সিগারেট কিনলাম পাঁচ টাকার।
বেশ আয়েশে ধোঁয়া ছারতেছি। টাকা পয়সার টানাটানিতে আছি। আরো কম টাকার মধ্যে খাওয়াটা সারতে পারতাম। তা আর হলনা। শালার খিচুড়ি! পকেটে আছে আর ১৩ টাকা।
অবসর সময়ের এই এক সুবিধা। টাকা গুনতে মজা লাগে।
সেই সকালে বের হয়েছি বাসা থেকে, ভার্সিটি যাবার নাম করে। মা’কে বলে বের হয়েছি আসতে রাত হবে। কেবলত সন্ধ্যা।
সারারাত ঘুমাতেও পারিনি। রাতে প্রেমালাপ করে শান্তিপূর্নভাবে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় আবার তার ফোন। সে খবর পেয়েছে আমি নাকি ভার্সিটিতে কোন মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেছি। সপ্তাহে দুই-একবার এই অপবাদ ঘাড়ে নিয়ে তার রাগ ভাঙ্গাতে হয়।
আর ভাল্লাগেনা। এবার আর কিছু বলিনি। চুপচাপ ছিলাম। চিৎকার-চেঁচামেচি করে ফোন কেটে দিছে। আমি আর কি করব! আমিও ফোনটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ফোন এখনও বন্ধ। থাক বন্ধ। হুদাই পেচাল আর সহ্য হয়না।
সকাল থেকে পার্কে সময়টা ভালই কাটল। সকালে এসে যখন বসলাম, ভেবেছিলাম এত সকালে হয়ত কোন কপত-কপতী দেখবনা।
তারা দেখি আমার আগেই এসে বসে আছে। সবার হাতেই ব্যাগ আছে। বোঝাই যাচ্ছে সকালের কোচিং ফাঁকি দিয়ে প্রেমে লিপ্ত তারা। পিচ্চি একটা বাচ্চা চা নিয়ে ঘুরঘুর করছিল। আমাকেও জিজ্ঞাসা করেছিল চা খাব কিনা।
আমি বললাম নাম কি তোর? সে আমাকে উত্তরে বলে চা খাবেন? পিচ্চি পিচ্চি পোলাপানের হইছে কি! ভদ্রতা দেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায়। খারাপ লাগতেছেনা। একদল আসে একদল যায়। একটু ভিতরের দিকে আমি বসা। সবাই প্রথমে এসে আমার পাশের বেঞ্চ গুলোতেই বসে।
আর আমি তাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকি। আলাপ আলোচনা বোঝার চেষ্টা করি। আমার দিকে তারা কয়েকবার আড় চোখে তাকিয়ে উঠে যায়। দুরের বেঞ্চে গিয়ে বসে। দুপুর পর্যন্ত এভাবেই কাটিয়ে দিলাম।
সন্ধ্যা হতে শুরু করেছে। ঝালমুড়িয়ালা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১৩ টাকা আছে। পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি খাওয়া যায়। বাস ভাড়া ১০ টাকা।
আট টাকা দিলে আবার বাসের কন্ডাটার মাইন্ড না করে। তিন টাকারই খাই। মাঝ পথে বাস থেকে নামিয়ে দিলে বিপদ হবে।
খেতে খেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আরো কিছুক্ষন থাকা যায়।
সন্ধ্যার পর পার্কের চিত্র দেখিনি আগে। শুনেছি সন্ধ্যার পরেই নাকি পার্কের আসল রূপ দেখা যায়। সন্ধ্যার পর পরই দেখা গেলনা। বেশ কিছুক্ষন পরে দেখা গেল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম বেঞ্চে কয়েকজন মানুষ বসে আছে।
এক বেঞ্চে একজনের বেশি না। অবাক ব্যাপার! সারাদিন জোড়া জোড়া, আর এখন একা একা। আশেপাশে কয়েকজন মেয়েকেও ঘোড়াঘুড়ি করতে দেখলাম। এরাই তাহলে নিশিকন্যা। প্রতিটা বেঞ্চই দেখলাম ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
আমার বেঞ্চে এসে একজন বসল। “ভাইজান, একশ লাগব। আগে টাকা তারপর বাকিটা”। নাহ! পরিবেশ গরম হয়ে যাচ্ছে। এবার এখান থেকে ওঠা দরকার।
ফোনটা অন করলাম। সাথে সাথে অনেকগুলা মেসেজ। পড়তে মন চাইলনা। না দেখে কেটে দিলাম। বাসের জন্য ওয়েট করতেছি।
ফোন আসল। নাহ! ফোন ধরতেও মন চাইতাছেনা। কেটে দিয়ে আবার বন্ধ করে দিলাম। বাস এসে গেছে। বাসায় যাওয়া দরকার।
মা অপেক্ষা করতেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।