ঈদের পর তেমন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি। ইচ্ছে ছিলো কক্সবাজার যাওয়ার, কিন্তু যাওয়া হলো না। তাই গতকাল নন্দন পার্ক থেকে ঘুরে আসলাম। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে গোসল করে এবং সাঁতার কেটে (?)দুধের সাধ ঘোলে মেটালাম।
সকালে বের হওয়ার কথা ছিলো।
বের হতে হতে ১ টা বাজলো। পৌঁছতে সোয়া ঘন্টার মতো লাগলো। সাথে করে খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। নন্দনের একটু আগে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে দুপুরের খানা সেরে নিলাম। জায়গাটা যথেষ্ট সুন্দর।
ছোটখাটো পিকনিকের মতোই হয়ে গেলো।
ড্রাই পার্ক
নন্দনে ঢোকার পর প্রথমে ড্রাই পার্ক। ড্রাই পার্কের রাইডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মজা লেগেছে ওয়াটার কোস্টার। এছাড়াও ক্যাবল কার, মুন রেকার, প্যাডাল বোট ভালো লেগেছে। রাইডগুলোর হাস্যকর বাংলা নাম দেয়া হয়েছে।
যেমন, মুন রেকারের নাম চরকা বুড়ির খপ্পরে। ওয়াটার কোস্টারের নাম স্রোতের সাথী। আরেকটা রাইডের নাম হচ্ছে অদ্ভুতুম গাড়ি।
5D সিনেমা থিয়েটার
বর্তমানে নন্দনের প্রধান আকর্ষণ 5D সিনেমা থিয়েটার। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম 5D সিনেমা থিয়েটার এটা।
চরিত্রগুলোকে (চরিত্র বলতে ভূত-প্রেত, রাক্ষস-খোক্কস এই সব আর কি) একদম চোখের সামনে দেখা যায়। পাশাপাশি চেয়ারে এমন মোশন দেয়া হয় যে, মনে হয় যেন সত্যি সত্যি চলছি। আমি দুই বার দেখেছি। প্রথম বার ভূতুড়ে একটা দুর্গে গেলাম। দ্বিতীয় বার ভূতুড়ে রাস্তায় গাড়ি চালালাম।
খুবই ভালো লাগলো, খুবই মজা লাগলো। ('খুবই ভয় পেলাম' লিখলাম না। আমি তো আর পিচ্চি না, ভয় পাবো কেন!)
ভূতুড়ে দুর্গেই বেশি মজা পেয়েছি। কিছুক্ষণ পরপরই ভূতেরা আক্রমণ করছিলো। সবগুলোই ব্যর্থ আক্রমণ!
বিশাল এক ড্রাগন বিরাট হাঁ করে খেতে এসেছিলো।
এমনভাবে তেড়ে আসলো যে সবাই মাথা পেছনে নিয়ে গেলো। আমি অবশ্য মাথা পিছে নিইনি, সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। দু:খের বিষয়, ধরতে পারিনি!
একটৃ পরপর পায়ে, মাথায় পানির ঝাপটা দিয়েও ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়।
চেয়ারের মোশনটাই সবচেয়ে জটিল লাগলো!
তবে সময় একটু কমই। প্রায় ৮ মিনিট।
শেষ হওয়ার পর মনে হয়, ইস, ভূতদের সাখে যদি আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম!
এক কথায় অসাধারণ অভিঞ্জতা!
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম 5D সিনেমা প্রদর্শন করার জন্য নন্দন পার্ক কর্তৃপক্ষকে জানা্ই আন্তরিক অভিনন্দন।
তবে 5D সিনেমা আসলেই 5D কিনা এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ওয়াটার ওয়ার্ল্ড
ড্রাই পার্ক শেষ করে ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে গেলাম। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সবগুলো রাইডই মজার। বড় তিনটা রাইড।
দুইটা রাইডে উপর থেকে প্লাস্টিকের টায়ারে করে আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে দ্রুত গতিতে গড়িয়ে পানিতে পড়ে। আরেকটা রাইডে শুয়ে শুয়ে গড়িয়ে পড়ে। তিনোটাতেই কয়েকবার করে উঠলাম। পানিতে পড়ার সময় কয়েকবারই টায়ার উল্টে গিয়ে পানিতে হাবুডুবু খেলাম। সবাই ফ্রি ফ্রি হাসার সুযোগ পেলো।
আমি তো শুধু উল্টে গেছি, আমার ভাইয়ার অবস্থা আরো খারাপ! পানিতে পড়ে ওর চশমা গায়েব হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ খোঁজার পর পাওয়া গেলো ঠিকই, কিন্তু একটা গ্লাস ছাড়া। গ্লাসটা আর পা্ওয়া যায়নি।
ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে জটিল ও মজার হচ্ছে সুইমিংয়ের পানিতে যে ঢেউ দেয়া হয়। কয়েক রকম ঢেউ দেয়া হয়।
অসম্ভব মজা লাগে। আমরা যারা সাঁতার জানি না তাদের জন্যে তো এই ঢেউই বঙ্গোপসাগরের ঢেউ। অনেকক্ষণ ঢেউয়ের দোলায় দুললাম। সাঁতার কাটলাম! দুই বার হাবুডুবু খেলাম। মাথাটা পানির নিচে গেলেই নাক, কান, চোখ দিয়ে পানি ঢুকে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
সাঁতার না জানার পরিণতি!
আমার সবসময় সাঁতার শিখতে মন চায়। কিন্তু শেখার সুযোগ পাই না। সাঁতার না জানার দু:খ কতদিন থাকবে কে জানে!
যাই হোক, ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে ইচ্ছেমতো ভিজে কক্সবাজারে যেতে না পারার দু:খ কিছুটা হলেও কমলো।
জানি না কবে কক্সবাজার যেতে পারবো। তবে প্রথম সুযোগেই যে যাবো এটা নিশ্চিত।
এরপর আর কী, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম।
আপডেট : মূল্য তালিকা :
শুধু প্রবেশ মূল্য : ২০০ টাকা।
প্যাকেজ :
প্রবেশসহ ড্রাই পার্কের সব রাইড : ২৭০ টাকা।
প্রবেশসহ ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সব রাইড : ৪৭০ টাকা।
সুপার সেভার প্যাকেজ : প্রবেশসহ ড্রাই পার্ক ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সব রাইড : ৪৯০ টাকা।
ড্রাই পার্কে প্রবেশের পর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে ঢুকতে চাইলে ৪০০ টাকা লাগবে।
5D সিনেমা থিয়েটার প্যাকেজের বাইরে।
এই সিনেমা দেখতে লাগে ১০০ টাকা।
(৭-৮ মিনিটে ১০০ টাকা। একটু বেশিই মনে হয়! )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।