I’m only an every-day sort of man গল্প কবিতায় কাকের জলের মত স্বচ্ছ পানির পুকুরের বর্ণনা থাকে। ওইসব পুকুরের কথা মনে পড়লেই পুকুরে ঝাঁপ দিতে ইচ্ছা করে। আমার পুকুর ওইরকম না। আমার পুকুরের পানি টলটলে না, ময়লা। পুকুর এর চারপাশে কড়ই গাছ।
কড়ই গাছের পাতা পানিতে পড়ে আছে অজস্র। পাড়ে কিছু কৃষ্ণচূড়া গাছও আছে। তবে যতটুকু লাল ফুলে ভরে থাকবে ভেবেছিলাম ততটা হয়না। কড়ই গাছের জন্যে কৃষ্ণচূড়া গাছ বাড়তে পারছেনা। তবে পুকুরের পানিতে কড়ই গাছ, মেহগনি গাছ বা কৃষ্ণচূড়া গাছের প্রতিবিম্ব দেখে মনে হয় পাড় ঘেঁষে থাকা জায়গার পানি সবুজ আর মধ্যপুকুরের পানি নীল।
ওখানে শুধু আকাশের স্বাধীনতা।
আমি নীল অংশে থাকি। পুকুর খোঁড়ার সময়ই মাঝখানের কিছু জায়গা রেখে দিয়েছিলাম। পুকুরের মাঝে বাড়ি। কাঠের তৈরী, তাও আবার বেশ কায়দা করে দোতলা বাড়ি।
নিচের তলায় তিনটা রুম, উপরে দুইটা। টীনের ছাদ। গরমের দিনে তাই উপরে খুব গরম, নিচের দিকেই তখন থাকা হয়। আর বর্ষায় চায়ের কাপ নিয়ে ঠিক দোতলায়, বারান্দার মত (আসলে একটা খোলা অংশ, টীন দিয়ে কোনরকমে ছাঊনি দেয়া) জায়গাটায় বসে থাকি। বৃষ্টি শুরু হলে টীনের চালে বৃষ্টির পানি পড়ার শব্দ, আবার পুকুরে পানিতেও অজস্র পানির ফোঁটা পড়তে দেখি।
কোনটা বেশী সুন্দর ঠিক বলতে পারব না।
নীচতলার ওখান থেকে পুকুরে ছিপ ফেলারও ব্যবস্থা আছে। মাঝে মাঝে শখ হয় ছিপ ফেলি। ছিপ ফেলে বই পড়া আগে অনেক সৌখিন মানুষরা করত। আমি করি কারন আমার অনেক সময়ই কিছু করার থাকেনা।
দুই জোড়া পায়রাও আছে এখানে। ছেড়ে রেখেছি, কিন্তু দেখা যায় দিনের বেশীরভাগ সময়ই টীনের চালের কাছেই ঘোরাঘুরি করে। সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে এখানে যখন থাকতে এসেছি তখন মোবাইল ফোন, টিভি সেট এসবের তোয়াক্কা করিনি। তবে ঠিকই এখানে ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবস্থা করেছি। সপ্তাহ শেষে একবার করে বাজার করে আনতে হয়।
এসব রাখার জন্যে তো রেফ্রিজেরটর দরকার। পুকুরের মাঝে আসা যাওয়া করার জন্যে ছোটমত একটা নৌকা আছে।
আধুনিকতার ছোঁয়া যতটা পেরেছি কম রাখার চেষ্টা করেছি। তবে একটা শখ পূরন করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে কিছু ওয়ান-ওয়ে মিরর কিনে এনে দোতলায় একটা রুম বানিয়েছি, ওই রুমের ভিতরে শুয়ে শুয়ে বাইরের সব কিছু দেখব, কিন্তু কেউ আমাকে দেখবেনা। জানালার ফাঁক দিয়ে তো আকাশ-গাছপালা দেখা যায় কিন্তু এতে আমার হবেনা আমি জানতাম।
এখনো যখন পূর্নিমা রাতে বিশাল চাঁদ ঊঠে, আমার পুকুরের চারপাশের গাছের দেয়ালও তাকে লুকিয়ে রাখতে পারেনা। আমি দুচোখ ভরে জ্যোৎস্না দেখি। একসময় খোলা মাঠে শুয়ে জ্যোৎস্না দেখার কথা ভাবতাম। এখন রূপালী জলরাশির উপর থেকে দেখি। দেখি জ্যোৎস্নালোকিত পৃথিবী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।