আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগেও ছিল এখনো আছে!

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন বারবার উচ্চারিত হচ্ছে ‘স্পট ফিক্সিং’, ‘পাতানো খেলা’ এই শব্দবন্দগুলো। সংবাদ মাধ্যমের কাছে মোহাম্মদ আশরাফুলের নিজ মুখে স্বীকারোক্তির মধ্য নতুন করে পড়ে গেছে শোরগোল। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গনে পাতানো খেলা একেবারেই নতুন কিছু নয়। আগেও ছিল, এখনো আছে। ফুটবল কি ক্রিকেট, ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গনে অনেক সময়ই পাতানো হয়েছে ম্যাচ।

আর এসব কাজে সরাসরি অনেক কর্মকর্তাও জড়িত ছিলেন। জড়িত ছিলেন খেলোয়াড়রাও। যদিও সাবেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ সময়ই কর্মকর্তাদের চাপের মুখে পড়েই খেলোয়াড়রা বাধ্য হতেন অনৈতিক কাজটি করতে।
তবে এবারের প্রেক্ষাপটটি একেবারে ভিন্ন। এবারের পাতানো খেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জুয়ার ব্যাপারটি।

এদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো প্রতিযোগিতায় আন্তর্জাতিক বাজিকরদের উপস্থিতি ও প্রভাব বা পাতানো খেলার মাধ্যমে খেলোয়াড়দের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার ব্যাপারটি অতীতে ঘটেনি বলেই জানালেন সাবেক খেলোয়াড়েরা।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘পাতানো খেলা যে এদেশের ক্রীড়াঙ্গনে হয়, সেটা কারো অজানা নয়। কিন্তু ওই পাতানো খেলাগুলো ছিল অন্যরকম। এটা কোনো দলের সঙ্গে আরও একটি দলের সমঝোতার ভিত্তিতে হয়েছে। তবে পাতানো খেলা অবশ্যই ঘৃণিত বিষয়।

এতে ক্রীড়ামোদীরা প্রতারিত হয়। ’
পাতানো খেলা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ফারুক বলেন, ‘আমার ২১ বছরের ক্যারিয়ারে খুব বেশি হলে চারটা ম্যাচ পেয়েছি, যেগুলো পাতানো হবে, সেটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। গর্ব নিয়ে বলতে পারি, ওই ম্যাচগুলো আমি খেলিনি। খেলোয়াড়েরা ইচ্ছা করলেই পাতানো খেলা এড়িয়ে যেতে পারে। ’
খেলোয়াড়েরা পাতানো খেলা ইচ্ছা করলেই এড়িয়ে যেতে পারে—ফারুক আহমেদের এই কথার সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান (জনি)।

তিনি বলেন, অনেক সময় খেলোয়াড়দের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাতানো খেলায় বাধ্য করা হয়। অনেক সময় দলের একটি জুনিয়র খেলোয়াড়ও অজান্তে পাতানো খেলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে।
নিজের খেলোয়াড়ী জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করে ইমতিয়াজ সুলতান বলেন, ‘আমি তখন ফুটবল সবে শুরু করেছি। দ্বিতীয় বিভাগে খেলি। একটি ম্যাচ পুরো সময় খেলে ফেলার পর জানতে পারলাম যে খেলাটি পাতানো ছিল।

আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। নিজেকে প্রতারিত লাগছিল। মনে আছে, সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ’
পাতানো খেলার সঙ্গে মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম জড়িয়ে যাওয়া। বাজিকরদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও এসব বিষয়ে আশরাফুলের স্বীকারোক্তির বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি ফারুক আহমেদ।

ব্যাপারটিকে প্রচণ্ড স্পর্শকাতর আখ্যা দিয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আশরাফুলের ব্যাপারটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে এটা বলতে পারি, আমার খেলোয়াড়ি জীবনে আমি যেসব পাতানো খেলার মুখোমুখি হয়েছি, সেগুলোর উদ্যোক্তা ছিল ক্লাব কর্মকর্তারা। আমরা খেলোয়াড়েরা বিষয়গুলোর ধারে-কাছেও থাকতাম না। সাধারণত, লিগে কোনো দলের রেলিগেশন ঠেকাতে বা কোনো দলের অবস্থান ভালো করতে দুটি দল সমঝোতায় এসে, পাতানো খেলা খেলত। তবে একজন খেলোয়াড় হিসেবে পাতানো খেলাকে সবসময়ই আমি ঘৃণা করে এসেছি।


ফারুক বলেন, ‘আমি যে কয়েকটি পাতানো খেলার মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেগুলোর একটাতেও আমি খেলিনি। এমন একটা অজুহাত দিতাম, তাতে ক্লাব কর্তারা আর জোরাজুরি করার কিছু পেত না। সাধারণত, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বা ইনজুরির অজুহাত দিতাম আমি। ’
ইমতিয়াজ সুলতান বলেন, ‘আমি ক্রিকেটের লোক নই। তবে ফুটবলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে আমার।

আমি মনে করি আশরাফুলের ব্যাপারটি আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসেরই সবচেয়ে বাজে ঘটনা। ব্যাপারটির দ্রুত সমাধান আমি মনে-প্রাণেই চাই। ’
ইমতিয়াজ সুলতান মনে করেন, এবার ম্যাচের আংশিক অংশ পাতানোর সঙ্গে প্রচুর টাকার লেনদেন যুক্ত হয়ে পড়ছে। এটা খুবই আশঙ্কার, ‘দেশের ক্রিকেটে বাজি-জুয়া ইত্যাদি ঢুকে পড়াটা খুবই আশঙ্কাজনক। ব্যাপারটি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন একটি ব্যাপার।

আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে চলে আসা পাতানো খেলা জাতীয় কোনো কিছুর সঙ্গেই এর সম্পর্ক নেই। ’
ইমতিয়াজ সুলতান নিজে খেলোয়াড়ি জীবনে বেশ কয়েকবারই পাতানো খেলা খেলতে বাধ্য হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন, ‘আমাদের সময়কার ফুটবলের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ক্লাবের বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। নিরাপত্তারও একটা ব্যাপার ছিল। তবে একটি পাতানো খেলায় অংশ নিলে মনের ভেতর সবসময়ই অপরাধবোধ কাজ করত।

’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.