আমি মানুষ, এটাই আমার পরিচয়। মানবতার এমন লঙ্ঘন , এমন উপেক্ষিত মানবতা একমাত্র আমার দেশেই আছে ... আমি অন্য কারো কথা জানতে চাই না, বুঝতে চাই না , আমি শুধু জানি আমার দেশ কে ... আমি শুধু বুঝি আমার দেশের মানুষ কে ... ৯ তলা ভবন ধ্বসে ৪ তলায় এসে ঠেকেছে ... মানুষ গুলো বীভৎস ভাবে প্রাণ হারালো আর বেঁচে থাকা মানুষ গুলো কেমন আছে তার অনুমান তো দূর , আমরা খোলা হাওয়ায় তার .০০০০০০১% ও অনুভব বা উপলব্ধি করতে পারছি না ... শুধু বলতে পারি , আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ... অমুল্য মানুষ এর জীবন আজ টাকায় তুল্য হচ্ছে !!! স্রষ্ঠার উপর কারো হাত নেই বলে দায় এড়ানো হচ্ছে!!! দালানের প্লেট ধরে টানাটানি করে অশুভ চক্র দালান ধসিয়ে দিয়েছে বলে বদ্ধ উন্মাদ প্রলাপ বকে যাচ্ছে !!! একটা বিল্ডিং তৈরী করতে কত রকম সরকারি অনুমতি লাগে , সাথে কত পরীক্ষা নীরিক্ষা , তার মান বিচার - তারপর ই না সেখানে বসত কিংবা ব্যাবসা ... খুব বেশী আগে তো ঐ দালান গড়ে উঠেনি তাহলে তার এই বিপর্যয় কেন? এত অনীহা কেন সেই মানুষগুলোর প্রতি যারা খেয়ে পরে বাঁচার এবং বাঁচানোর আশা নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে মুনাফা খোর দের কে টাকার পাহাড় গড়ে দিচ্ছে ...??? মানুষ কেন মানুষ এর মর্যাদা পাচ্ছে না??? আমরা মানুষ এর মর্যাদা আদায় করে নিতে পারছি না... দায়ী আমাদের লালসা এবং অসচেতনতা... দক্ষ মানুষ দ্রুততার সাথে, অভিজ্ঞতার সাথে বেশী কাজ পারে নাকি একদল অদক্ষ মানুষ তাদের মানবতা আর বিবেকের তাড়ণায় বেশী কাজ কম সময়ে করতে পার্রে??? উদ্ধার কাজে যারা লেগেছেন তারা কি দক্ষ ??? দক্ষ প্রাণী গুলো দাঁড়িয়ে দেখছে আর মানুষ নিয়ন্ত্রণ করছে আর অদক্ষ মানুষ গুলো নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ধ্বংস স্তুপের ভেতরে ঢুকে গিয়ে জীবিত , মৃত মানুষ গুলোকে টেনে টেনে বের করে নিয়ে আসছে!!! প্রশাসন বলেছে , সেনা বাহীনি , দমকল বাহিনী নিজেদের সমস্ত রসদ সরঞ্জাম দক্ষতা নিয়ে নামো আর উদ্ধার করো মানুষ গুলোকে কিন্তু কোথায় তাদের রসদ, কোথায় সরঞ্জাম আর কোথায় তাদের দক্ষতার ছাপ??? বিল্ডিং ধ্বসে গেলে তার উদ্ধার কাজে কি কি লাগে তা কি দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনার প্রাণী গুলো জানেন নাকি জানেন না??? ২৪ এপ্রিল বিল্ডিং ধ্বসে পরলো আর উদ্ধার কাজ তৎক্ষণাৎ শুরু হয়ে গেলো যার ঘন্টা তিনেকের ভেতর সরঞ্জামাদি ঐখানে পৌছানো সম্ভব ছিলো। ঢাকা এবং সাভার ক্যান্টনমেন্ট এমন কোন আহামরি দুরত্তে নয় ঘটনাস্থল থেকে। দমকল বাহিনীর রসদে যদি টান পড়ে থাকে তো তা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জোগার হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তা হয়নি বিধায় সাধারণ মানুষ নিজ উদ্যোগে তা কিনে নিয়ে ঘটনা স্থলে পৌঁছেছে উদ্ধার কাজের জন্য ... দমকল বাহিনী এবং সেনা বাহিনী যথেষ্ট ছিলো এই উদ্ধার কাজের জন্য কিন্তু সেখানে হাজার হাজার সাধারণ স্বেচ্ছা সেবক কাজ করছে... এর কোন সুনির্দিষ্ট কারণ কি প্রশাসন দেখাতে পারবে? ম্যান্যুয়ালি কাজ করার জন্য হেক্সো ব্লেড , হাইড্রলিক কাটার, হাতুড়ী , বাটাল, টর্চ লাইট, অক্সিজেন মাস্ক , সারজিক্যাল মাস্ক, গ্লাভস , ধুলা প্রতিরোধে গগলস , পানি , শুকনো খাবার এসব কি সরকারি উদ্যোগে ব্যাবস্থা করার কথা ছিলো না??? এক বিল্ডিং ধ্বস ই সরকারের এবং প্রশাসনের সামলানোর ক্ষমতা নাই তো দেশ রক্ষার সময় তারা কি করবে? ঘটনার ২য় দিন পর্যন্ত সেনা বাহিনী শুধু মানুষ নিয়ন্ত্রনের কাজে ব্যাস্ত থেকেছে কিন্তু ভেতরে উদ্ধার কাজে তাদের অপ্রতুলতা কারো চোখ এড়ায়নি--- কারণ টা কি? উনারা কি ভয় পেয়েছেন??? যদি ভয় ই পেয়ে থাকেন দালান ধ্বসে মরার তাহলে তারা সীমান্তে কি যুদ্ধ করবেন? দেশ আক্রমণ হইলে তাদের ভূমিকা কি থাকবে? নাকি ঘটনা অন্য কোথাও??? মান্যুয়ালি দালান কেটে আহত , নিহত দের উদ্ধার কাজ টা কি উনারা নিজেরাই করতে পারতেন না? দালান টা খুব স্পর্শকাতর অবস্থায় আছে - যেখানে টেকনোলজি ব্যাবহার করার খুব ই ঝুঁকিপূর্ণ যার জন্য মান্যুয়ালি কাজ করা ছাড়া কোন উপায় নাই ... সেনা বাহিনী , দমকল বাহিনী কি যে কোন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার পুনুরাবৃত্তির ভয়ে নিজেদের গা বাঁচাতে এই উদ্ধার কাজ থেকে ২ দিন দূরে দূরে ধরি মাছ না ছুই পানির মতো আচরন করলো??? নাকি তাদের ভ্যালিড কোন কারণ আছে ??? যদি তাদের এসব আচরণের ভ্যালিড কারণ থাকে তাহলে তাদের সেটা প্রকাশ করতে হবে জনসাধারনের কাছে। এক সেনাবাহিনী জোয়ান বললো যে ঐখানে দেখার মানুষ এর দরকার নাই, কাজের মানুষ এর দরকার - এক রানা প্লাজায় উদ্ধার কাজ চালাতে কয় কোটি মানুষ প্রয়োজন??? শয়ে শয়ে সাধারণ সেচ্ছাসেবক কাজ করছে ঐখানে যাদের ৯৯% এর কোন প্রশিক্ষণ নাই আর সেই তুলনায় দমকল বাহিনী আর সেনা বাহিনীর ভূমিকা খুব ই দুঃখজনক!!! সৈন্যরা দূরে দাঁড়িয়ে কেঁদেছে অথচ দালানের ভেতর ঢুকে দুর্ঘটনার ২য় দিন পর্যন্ত তৎপর হতে পারেনি!!! কি ভয়ঙ্কর বেদনাদায়ক দৃশ্য রানা প্লাজা এবং অধরচন্দ্র স্কুলে !!! লাশ পড়ে আছে যার কোন সনাক্তকারী নাই আবার শ শ মানুষ অপেক্ষায় আছে তার মা , বাবা , ভাই , বোন, পুত্র , কন্যার জীবিত কিংবা মৃত ফিরে আসার জন্য! আমি হাজার কোটি শব্দ দিয়েও সে সার্বিক অবস্থার বিবরন দিতে সক্ষম নই ... শুধু আমি কেন, কোন সাহিত্যিক কিংবা লেখক ও পারবে না এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বিবরন দিতে ... খুব সাধারণ মানুষ গুলোর ভূমিকা দেখে মনে হলো , আমরা যে মানুষ খুঁজি - এই তো তারা আর যাদের কে টাকা দিয়ে পালা হয় হয় তারা দুই পায়া প্রাণী মাত্র ... রক্তাক্ত ফোলা ফাপা লাশের পাশে জরো হওয়া মানুষ এর আহাজারি এক সময় ক্রোধে পরিণত হয়ে তাদের কান্না ক্ষোভের আকারে বের হয়ে এলো ... তারা আর্তনাদ করে বিপ্লব বিদ্রোহের কথা বলে উঠলো কিন্তু পেটের দায়ে, প্রাণের ভয়ে তা থেমেও যাবে একসময় ...!!! ৪টা গার্মেন্টস এ কর্মরত এতগুলো মানুষ কোথায় হারিয়ে গেলো??? জীবিত - মৃত মানুষ গুলো কি বালু সুরকির সাথে ধুলায় মিলিয়ে গেলো??? সেই ধ্বংস স্তুপের নীচ থেকে আরো কত হাজার লাশ বের হয়ে আসবে তার কি কোন খেই আছে??? অমুল্য প্রাণের মানুষ গুলো কিভাবে ধ্বংস স্তুপের গহ্বরে মিলিয়ে গেলো তার ইতিহাস হয়তো অজানা ই থেকে যাবে !!! আর কত অপেক্ষা??? আর কত আহাজারি ??? এরপর আদৌ কি আর লাশ সনাক্ত করা যাবে??? আদৌ কি জানা যাবে মোট মৃতের পরিসংখ্যাণ??? শাক দিয়ে যারা মাছ ঢেকে রাখতে চান তারা ই কি সমস্ত সময় বাজী জিতে যেতে থাকবে??? মস্তিষ্কের যন্ত্রণার কোন উপশম নাই আর ... মৃত্যু কিংবা মুক্তি ... অনেক প্রশ্ন সমস্ত জাতির মনে কিন্তু উত্তর গুলো জানা নেই ... এবার উত্তর গুলো জানতে চাই ... সত্যি ই চাই সমস্ত উত্তর গুলোকে উদ্ধার করতে ... মানবতার এ চরম লঙ্ঘনের দায় এড়াতে পারবো বলে মনে হয় না ... কিছুক্ষণ পর পর ই লাশের গন্ধ ... স্রষ্ঠা আমাদের ক্ষমা করুন ... জয় হোক মানবতার ... মুক্তি পাক সচেতনতা ...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।