আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যু ও হত্যার ভারতীয় সংজ্ঞা

ভারতীয় চ্যানেলগুলো আমাদের নতুন প্রজন্মকে হিন্দি শেখানোর দায়িত্ব পালন করছে। দিল্লি শেখাচ্ছে রাজনীতি-কূটনীতি, মমতা শেখাচ্ছেন পানির দাম। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিব নতুন করে আরো একটি সবক দিলেন। ঢাকায় বসে ‘হত্যা’ ও ‘মৃত্যু’র ফারাক বোঝাতে চেষ্টা করলেন। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিবকে সামনে রেখে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিং সোজাসাপটা ভাষায় জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত্যাগুলো ‘হত্যা’ নয়, ‘মৃত্যু’ বলতে হবে।

তা ছাড়া ধরে নিতে হবে, সীমান্তে যাদের মৃত্যু হচ্ছে, হয় তারা চোরাকারবারি, নয়তো গরুচোর। সব জরিপে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা বাড়লেও ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের মনগড়া ও উদ্ভট দাবি, সীমান্তে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর হার কমে এসেছে। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী তিন হাজার কিলোমিটারের এ সীমান্তে ২০১০ সালে যেখানে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে ২০১১ সালে ১১ জন এবং চলতি বছর ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিব এটাও মনে করেন, বিএসএফ নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই গুলি ছোড়ে। একই সাথে বাংলাদেশীদের প্রতি করুণা বর্ষণের ভাষায় অমৃত বাক্য চয়নে বললেন, সীমান্তে গুলি বন্ধ করতে বিএসএফকে নির্দেশ দেয়া আছে।

বাংলাদেশীদের অপরাধের মাত্রা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, এ ধরনের ‘মৃত্যু’ ভারতীয় সীমান্তের ৩০০ থেকে ৪০০ মিটারের মধ্যে ঘটেছে। অতএব ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা সঠিক কাজ করেছে। এসব নির্বিচারে সীমান্তহত্যাকে বৈধতা দেয়ার জন্য বললেন, এসব ঘটনা দিনেরবেলা হয়নি, রাতেই হয়েছে। আবার প্রবঞ্চকের ভাষায় এটা শোনালেন, চোরাকারবারিরা নাকি বিএসএফের ওপর চড়াও হয়েছে বলেই বিএসএফ জীবন বাঁচাতে গুলি চালিয়েছে। এভাবে বাংলাদেশী গরুচোরদের সাথে যুদ্ধে নাকি প্রায় ৪০০ বিএসএফ জওয়ান আহত হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মোশতাক আহমেদকে সামনে রেখেই এসব বক্তব্য রাখলেন। আমাদের স্বরাষ্ট্রসচিব জানানোরও গরজ বোধ করলেন না যে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যানুযায়ী চলতি বছর বিএসএফ গুলি করে ৩০ থেকে ৩২ জন নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন ৭০ জন। ভারতীয় দুর্বৃত্তের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন আরো আটজন। আহতের মোট সংখ্যা দাড়ায় ১৮৭ জন।

এ হিসাব জানুয়ারি ’১২ থেকে সেপ্টেম্বর ’১২ পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসের। অবশ্য বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা ভারতের দেয়া পরিসংখ্যানের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ভারত যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছে না সেটিও অবশ্য বলা হয়েছে। তবে বলার বা চ্যালেঞ্জের ভেতর প্রতিবাদের সুর ছিল নরম। এত দিন পর এখনো ভারত বলছে, ফালানী হত্যার বিষয়ে ‘শিগগির’ বিএসএফ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠাবে।

এই শিগগির যে একধরনের বিলম্বিত প্রহসন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আরো দুঃখজনক ও প্রবঞ্চনামূলক বক্তব্য হচ্ছে, নিরীহ কেউ হত্যার শিকার হয়ে থাকলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার গতানুগতিক প্রতিশ্রুতি। সীমান্তহত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বক্তব্যটিও প্রহসনমূলক ছাড়া কিছুই নয়। জানানো হলো সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে। আগামী দিনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করতে একসাথে বিভিন্ন সমস্যার সুরাহা করতে চান বলেও জানানো হলো।

ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময়ের লক্ষ্যে ’৭৪-এর সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন নিয়ে এবারো সান্ত্বনার বাণী শোনানো হলো। যত দ্রুত সম্ভব প্রটোকল বাস্তবায়নের জন্য তাদের কাজ করার বাণীও আমরা শুনলাম। সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে ভারতীয় লোকসভার আগামী অধিবেশনে বিল পাসের একটি স্বপ্নিল বক্তব্যও শোনানো হলো। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্যটি পেলাম, কোনো প্রকার আইনি চুক্তি ছাড়াও নাকি বন্দিবিনিময় হবে। অনুপ চেটিয়াকে ভারতের মর্জিমতো তুলে দেয়া যাবে।

সমস্যা হচ্ছেÑ ভারত কথা দেয়, রাখে না। প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু ভঙ্গ করে। চাণক্যনীতির মূল কথাÑ উত্তরে বললে দক্ষিণে যেতে হবে, দক্ষিণে বললে উত্তরে। ভারতীয় কূটনীতির এই গোলক ধাঁধায় আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। জানি না কবে আমাদের নীতিনির্ধারকদের বোধোদয় ঘটবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.