২০০৪ সালে ''লালন'' সিনেমা নির্মাণের আগে তানভীর মোকাম্মেল ১৯৯৬ সালে ''অচিন পাখি'' নামে ফকির লালন সাঁইয়ের উপর একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেন।
যা থেকে এই মরমী সাধক ফকির লালন সাঁই এবং বাংলার বাউল সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যায়।
''লালন ফকির কে আমরা যে পেয়েছি হঠাৎ পাইনি,তিনি আকাশ থেকে পড়েননি । ১৮/১৯ শতকে বাংলা সমাজ একটু অন্যদিকে বাঁক নিতে চাইল,কেন চাইল তার কারণ-আমাদের ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র-মোল্লাতন্ত্র অর্থাৎ মৌলবাদী শক্তিগুলী
এতো প্রবল হয়ে উঠল,সাধারণ মানুষ তারা কোন আশ্রয় পেলনা । ১৮/১৯ শতকে আমাদের বাংলায় অনেকগুলো গৌণধর্ম তৈরি হয়েছিল এরকম সাধারণ মানুষের চেষ্টায় নেতৃত্তে,সেই ধর্ম গুলোর লক্ষন হচ্ছে সাধারণব্যাপী এই যে হিন্দু মুসলমান কোন ভেদ নেই,হিন্দুর মুসলমান শিষ্য মুসলমানের হিন্দু শিষ্য এই আঁটছাঁট দেখা যায় এর একটা বড় কারণ ছিল শ্রীচৈতন্যের প্রভাব।
বৈষ্ণবধর্ম আমাদের শাস্ত্র এবং যা কিছু কঠিন জিনিস তাকে সরল করে দিয়েছিল,তার ফলে সাধারণ মানুষও বৈষ্ণবতার মধ্যে এসে বুঝতে পেরেছিল উপাস্যকে পেতে গেলে খুব বেশি উপবাস,মন্ত্র,ব্রত কিংবা শাস্ত্র সংস্কৃতভাষা-আরবিভাষা এসব না জানলেও চলে,উপাস্যকে সরাসরি ডাকা যেতে পারে এই ডাকার জন্যে একজন মধ্যবর্তী মানুষ লাগে তাকে বলে গুরু বা মুর্শিদ।
১৮/১৯ শতকে আমাদের নিম্নবর্গের মানুষ প্রথম মাথা তুলতে শিখল জমিদারিতন্ত্র-সামন্ততন্ত্রের এদের বিরুদ্ধে ধর্ম তাদের সহায় হল,কোন সেই ধর্ম আমি আগেই বলেছি সে ধর্ম কোন উচ্চ ধর্ম নয় । কিন্তু ভেতরে ভেতরে কাজ করছে উচ্চ ধর্মের কিছু কিছু নির্যাস যেমন বৈষ্ণব ধর্মের একটা নির্যাস পেলাম তেমনি সূফী-তাত্ত্বিকদের চিন্তা ভাবনা,ইসলামের নিরাকারতত্ত্ব,বৌদ্ধদের অনশ্বরবাদ এগুলো নানাভাবে পুঞ্জীভূত হয়ে আমাদের গৌণধর্মের যে ধারনা তা গড়ে উঠেছে । কিন্তু অন্যান্য গৌণ ধর্মের সঙ্গে লালনের পন্থাগত পার্থক্য আছে ,কি সেই পার্থক্য ? গৌণ ধর্মের মধ্যে অন্যান্য যা দেখি সাহেবধনি,কর্তাভোজা,বলরামভোজা এদের একটা গুরুপাঠ আছে গুরু আছে একটা আশ্রম আছে,গুরু আস্তে আস্তে সেই মহাত্তের জায়গায় গিয়ে বসে এবং শিষ্যরা দিতে আরম্ভ করে জরিমানা এভাবেই বোধহয় ধর্মগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়।
কিন্তু লালনের একদম আলাদা ছিল ।
লালন কিন্তু কোন পন্থা তৈরি করতে চাননি সেই অর্থে । তিনি গুরুপাঠ,খাজনা,শিষ্য-প্রশিষ্য এসবের দিকে না গিয়ে তাঁর জীবনসত্ত্ব গানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত করেছেন।
আমাদের মনে রাখা উচিৎ লালন ফকির লোকটি মানবতা মন্ত্রে দীক্ষিত ছিলেন তিনি ছিলেন আসলে একজন গীতিকার এবং শিল্পী,স্রষ্টা ফলে তাঁর সবচেয়ে বড় যে অশ্র তা কিন্তু মন্ত্র-শাস্ত্র নয় এবং আখড়াও নয়,তাঁর সবচেয়ে বড় অশ্র হচ্ছে তাঁর গান। ''
- সুধীর চক্রবর্তী(অচিন পাখি ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।