প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে কর খাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে বেশি। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বেড়েছে অনেক বেশি। এ কারণে রাজস্ব আদায় নিয়ে শুরুতেই সংশয় তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, এবারের রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনাই বাজেটের দুর্বলতম দিক।
এবারই প্রথম দেশের ইতিহাসে আয়কর আদায়ের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এবার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪৬ শতাংশ বেশি আয়কর আদায় করতে হবে। এই আদায় নিয়েও সংশয় রয়েছে। চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ।
নতুন অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ভ্যাট আদায় নিয়েও সংশয় আছে।
কেননা, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি কমে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের খুচরা বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমেছে। আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। এই পরিস্থিতি নতুন অর্থবছরে বিদ্যমান থাকলে ভ্যাট আদায় কম হবে।
আবার মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলে ভ্যাট আদায় বাড়ে। তবে নির্বাচনী বছরে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ ক্ষেত্রে সরকার সফল হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজস্ব আদায়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ভ্যাট আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
আমদানি কমে যাওয়া এবং আমদানি শুল্কের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমশ কমছে।
নতুন বাজেটেও এর প্রভাব পড়েছে। সবচেয়ে কম রাজস্ব আদায় ধরা হয়েছে এই খাতে। আবার চলতি অর্থবছরেও আমদানি শুল্ক আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশেরও কম।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাজেটের পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। আর রাজস্ব আদায়ের এই পরিকল্পনাই প্রস্তাবিত বাজেটের দুর্বলতম দিক।
নতুন বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর আয়করের সীমা বাড়ানো হয়েছে। পৌরসভা ও উপজেলায় ন্যূনতম করের পরিমাণ কমানো হয়েছে। বিশেষ করে ব্যক্তি শ্রেণীর করের হার দুই লাখ থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় বাড়ানোর কারণে সীমিত আয়ের অনেক করদাতা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। এর ফলে কিছু আয়করদাতা করের আওতা থেকে বেরও হয়ে যাবেন। প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে এবং চাকরিজীবীদের জন্যও ছাড় দেওয়া হয়েছে নতুন বাজেটে।
এ সবকিছুই আয়কর আদায় কমাবে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে এনবিআরের একমাত্র ভরসা এখন করপোরেট কর। নতুন বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল ও সিগারেট কোম্পানির করপোরেট করের হার ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে গ্রামীণফোন ও ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি থেকে বাড়তি কর পাবে এনবিআর।
দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সাবেক সভাপতি এম হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, আয়করে বেশ কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে।
তার পরও এ খাতে বড় ধরনের আদায়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের ওপর একটা চাপ থাকবে। এতে আয়করদাতাদের হয়রানি বাড়তে পারে। বিষয়টিতে সরকারকে নজর দিতে হবে।
নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নতুন কাঠামো অনুযায়ী, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে এনবিআরের রাজস্ব ক্ষতি হবে। এর কোনো হিসাব বাজেটে দেওয়া হয়নি। তবে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, তাদের প্রাথমিক হিসাবে এতে রাজস্ব ক্ষতি হবে ২৩৭ কোটি টাকা। আবার মধ্যবর্তী কাঁচামালের শুল্ক হার ২ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
এতে এনবিআরের রাজস্ব ক্ষতি হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তবে সংস্থাটি মনে করে, আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন, এতে বিনিয়োগ বাড়বে। ফলে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। যদিও বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে এবং আরও কমবে বলেই অর্থমন্ত্রী বাজেটে আশঙ্কা করছেন।
এবার মোট রাজস্ব আদায় করতে হবে এক লাখ ৭৪ হাজার ১২৯ কোটি টাকা।
এর মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর এত বড় লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণে সম্মত ছিল না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংশোধন করা হবে বলে তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে এনবিআর তা মেনে নেয়। তবে অর্থমন্ত্রী বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এনবিআর প্রথমে আপত্তি করলেও পরে আদায় করা যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ রাজস্ব আদায় নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ এনবিআরেরই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।