আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় রাজস্ব বাজেট: প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী



জাতীয় বাজেট ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী আজমাল হোসেন মামুন ২০১০-২০১১ অর্থবছরের জাতীয় রাজস্ব বাজেট আগামী জুন মাসের ১০ তারিখে। এবারের বাজেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক সংগঠন সংবাদ সম্মেলন, গোল টেবিল বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। বেসরকারি সংগঠন বা সংস্থা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমস্যার কথা বলে বাজেটে বেশি বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছে। কিমত্মু প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে তেমন জোড়ালো দাবি জানানো হচ্ছে না।

কিছু সংগঠন যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করছে তাঁরা শুধু বলছে। তাও আবার জোড়ালো কণ্ঠে নয়। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা কারো পক্ষে প্রকাশ করা এখনও সম্ভব না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী প্রায় দেড় কোটি। যদিও ২০০১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা ১.৬ ভাগ তথা মাত্র ১৬ লাখ। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পেরিয়েও আজ পর্যমত্ম প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের দেশে নেই।

এটি বড় একটি লজ্জার ব্যাপার। সবচেয়ে সুবিধা বঞ্চিত দেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গণ্য করে বিগত কয়েক অর্থবছর থেকে এদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বাজেটে বরাদ্দ রাখার বিধান চালু করেছে। তবে তা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে। অধিকারের দিক থেকে নয়। ফলে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা, প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ঋণ প্রদান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত সংগঠন সমূহকে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের পথকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

বিগত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে প্রতিবছর। ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রাখা হয়েছিল মাত্র ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটের মোট ১৮টি খাতের ১ হাজার ৩২টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৫টি প্রকল্প প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য গ্রহণ করা হয়েছিলো। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কে পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ১৫০ কোটি টাকা। প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি বাবদ রাখা হয়েছিলো ৬ কোটি টাকা।

অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাবদ রাখা হয়েছিলো ৬০ কোটি টাকা। বিগত ২০০৯-১০ অর্থবছরে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৬০ করে মাছাপিছু মাসিক বরাদ্দ ৩০০ টাকা উন্নীত করায় ৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো। এসিডদগ্ধ মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন তহবিলে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো। প্রতিবন্ধী সেবা ও সহায়ক কেন্দ্র শীর্ষক একটি নতুন কর্মসূচী গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বিগত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করা হলে দেখা যাবে, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ঠকানো হয়েছে তাদের নায্য অধিকার থেকে।

দেশে প্রায় ২ শতাধিক বেসরকারি সংস্থা সরকারের সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্প বাসত্মবায়ন বা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বিদম্যান সমস্যার সম্মুখীন। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিবন্ধী নাগরিকরা। শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। মাত্র ৪ ভাগ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের সমস্যার অমত্ম নেই।

সরকার যেসব সুযোগ সুবিধা প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য রেখেছে তা তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকাংশ জানে না। তারা তাদের অধিকার সম্বন্ধে অসচেতন। আওয়া মীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ১০.৬ নং পয়েন্টে প্রতিবন্ধী কল্যাণের কথা স্পষ্ট উলেস্নখ রয়েছে। বলা হয়েছে- ‘‘২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন যুvাগাপযোগী ও বাসত্মবায়ন করা হবে। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা কর্মসংস্থান, চলাফেরা, যোগাযোগ সহজ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

’’ ভিশন ২০২১ অর্জনের ক্ষেত্রে কিছু গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় উলেস্নখ করা ছিলো যেখানে প্রতিবন্ধীদের গুরম্নত্ব না দিলে অর্জন সম্ভব নয়। আয়বর্ধকমূলক কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের সম্পৃক্ত না করলে তারা মর্যাদা ও সকল আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে। সে জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নের খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হবে তার ১৫ ভাগ প্রতিবন্ধীদের মানব সম্পদে পরিণত করার জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষ মানব সম্পদরূপে গড়ে তুলতে হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অর্থাৎ ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে। যা কেবল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব সংগঠন ও তাদের সদস্যদের শক্তিশালী করতে ব্যয় হবে।

তবে একটি কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশে রয়েছে ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী নাগরিক। ওদেরকে কাগজে কলমে নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হলেও সবদিক থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। এই বৃহৎ সংখ্যা নাগরিকদের কথা বিবেচনা করে মোট বাজেটের ১০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া উচিত। কারণ, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিলে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাথে সাথে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কাঠামোকে শক্তিশালী করতে হবে।

এছাড়াও যেসব সমস্যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়াই তা হলো তথ্য-প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের অভাব, নির্মাণ-কাঠামোগত পরিবেশ ও জনপরিবহন সমূহে অভিগম্যতার অভাব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-সংগঠন কাঠামো দুর্বল, সক্ষমতা উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা এবং দীর্ঘস্থায়ী জীবিকা কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাব। সেজন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন। এ ছাড়াও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে যেসব অসচ্ছল প্রতিবন্ধীরা ভাতা পেয়ে থাকেন ওসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নিজস্ব সংগঠন তৈরী ও টেকসই করার জন্য আলাদা বরাদ্দ প্রয়োজন। লেখক- আজমাল হোসেন মামুন উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিক বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) দক্ষিণণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। মোবাইল নং-০১১৯১০৮৯০৭৫।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.