আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজস্ব ভবন নির্মাণ ও রাজস্ব খাত সংস্কারে ৫০৪ কোটি টাকা দিচ্ছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অর্থ উপদেষ্টার অনুমোদন পেলেই প্রজেক্ট শুরু হবে

অবসরের আড্ডা!!!

রাজস্ব বোর্ডের নিজস্ব ভবন ও পুরো রাজস্ব খাত সংস্কারের জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সরকারকে ৫০৪ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের বাইরে এই প্রথমবার সরকারের কোনো সংস্থা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এতো বড় অঙ্কের অনুদান পেতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ইতিমধ্যে এ টাকা ব্যয়ের খাতসহ একটি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এনবিআর অনুদান গ্রহণের অনুমতি চেয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক রাজস্ব খাতকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি এনবিআরের বাইরে থেকে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনজন মেম্বার নিয়োগের ব্যাপারেও প্রস্তাব করেছে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল করিম যায়যায়দিনকে বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ৭২ মিলিয়ন ডলারের একটি অনুদান দিতে চায় রাজস্ব খাতের সংস্কারের জন্য। আমরা তাদের প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করে দেখছি। তবে ২০ মিলিয়ন ডলার বা ১৪০ কোটি টাকা দেয়া হবে শুধু রাজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য। এটা একটা বড় ব্যাপার। তিনি বাইরে থেকে তিনটি খাতে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী মেম্বার নিয়োগের ব্যাপারে বলেন, মেম্বার নয় আমরা তিনজন অ্যাডভাইজর নিয়োগের চিন্তা করছি।

এক সময় আমাদের অফিসারদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে এসব পদে নিজেদের লোক নিয়োগ দেয়া হবে। সূত্র থেকে আরো জানা যায়, রাজস্ব খাত সংস্কারের জন্য গত সেপ্টেম্বরের ১৭ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) একটি প্রতিনিধি দল এনবিআর সফর করে। এ সময় তারা চট্টগ্রাম ও ঢাকার কাস্টম হাউসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর প্রতিনিধি দলটি গত ৫ অক্টোবর এনবিআরকে রাজস্ব খাতে ঢেলে সাজানোর জন্য একটি বিস্তারিত প্রস্তাবনা পাঠায়। এ জন্য ৭২ মিলিয়ন ডলার বা ৫০৪ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিবরণীও পাঠায়।

তাদের প্রস্তাবনার মূল বক্তব্য হলো- তথ্য প্রযুক্তি, অডিট ও মানব সম্পদ বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা মেম্বার পদ সৃষ্টি করা। বর্তমানে এনবিআরে এ ধরনের কোনো পদ নেই। তাদের প্রস্তাবনা পাওয়ার পর এনবিআর কর্তৃপক্ষ তা পর্যালোচনা করে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসকৃপশন অনুযায়ী আলাদা তিনটি মেম্বার পদ সৃষ্টির ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করা হয়। এনবিআর মনে করে এসব সেক্টরে অ্যাডভাইজর নিয়োগ দেয়া যায়।

তবে প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পর এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই মেম্বার নিয়োগ করা হবে। এনবিআর ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রস্তাবনা নিয়ে গত ১৬ নভেম্বর একটি বৈঠক করে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনবিআরের মতামত জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলির কাছে অনুদান গ্রহণের অনুমতি চেয়ে একটি চিঠি দেয়া হয় গত ২১ নভেম্বর। অনুমতি পেলে অচিরেই রাজস্ব খাত সংস্কারে এ অর্থ ব্যয় হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। প্রজেক্টটি প্রথম পর্যায়ে পাচ বছর মেয়াদি হচ্ছে এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত চলবে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তাদের প্রস্তাবনায় যে যে খাতের উন্নয়ন দরকার বলে মনে করছে তাহলো- ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন। এ খাতের মধ্যে কর প্রশাসন পরিকল্পনা পলিসির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি টাকা। যোগাযোগ ও চেঞ্জ ম্যানেজমেন্টের জন্য সাত কোটি এবং ট্রেনিং অ্যাকাডেমির প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। অটোমেশনের ক্ষেত্রে অবকাঠামো খাতে ২১ কোটি, সার্ভার, পিসি ও অফিস অটোমেশনের জন্য ৫৬ কোটি, আইসিটি ট্রেনিংয়ের জন্য ১০ কোটি ৫০ লাখ, সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট ও ক্রয় ১৭ কোটি ৫০ লাখ, স্টাফ বেতন ১৪ কোটি, সফটওয়ার যুক্তকরণ সাত কোটি, বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিং ১০ কোটি ৫০ লাখ, ডেটা সেন্টার এবং ডেটা ওয়ার হাউস ২১ কোটি, নিরাপত্তা এবং ফায়ার ওয়ালস তিন কোটি ৫০ লাখ, সফটওয়ার আপগ্রেড সাত কোটি এবং ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের জন্য সাত কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। রাজস্ব সেবা খাতের শক্তিশালীকরণের ক্ষেত্রে উত্সে কর পদ্ধতির সংস্কার তিন কোটি ৫০ লাখ, রাজস্ব আদায়ের নতুন কৌশল ১০ কোটি ৫০ লাখ, আইনের পুনঃ ব্যাখ্যা তিন কোটি ৫০ লাখ, এলটিইউ-এর আরো সংস্কার ২১ কোটি, কাস্টমস খাত সংস্কার ৩১ কোটি ৫০ লাখ, ভ্যাট খাত সংস্কার ১০ কোটি ৫০ লাখ, আয়কর, এমটিইউ ও সার্কেল অফিস সংস্কার ১৭ কোটি ৫০ লাখ, লেজিসলেটিভ চেঞ্জ সাত কোটি এবং সহজে বোধগম্য বাংলা ও ইংরেজি সার্কুলারের জন্য তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সার্ভে, করদাতার সচেতনতা ও সুযোগ-সুবিধা, গুণগত মান, যোগাযোগ ও মনিটরিং-এর জন্য সাত কোটি, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও নৈতিক দিকের উন্নয়ন তিন কোটি ৫০ লাখ, ট্রেনিং ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্টাডি টুরের জন্য ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। শুধু রাজস্ব বোর্ডের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ ভবন নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে রাজস্ব খাত সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০৪ কোটি টাকা। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক রাজস্ব খাত সংস্কারের জন্য এতো বড় অঙ্কের টাকা দিলেও বাস্তবে এর পেছনে অনেক দীর্ঘ মেয়াদি স্বার্থ থাকতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.