ঢিলেঢালা ময়লা শার্ট গায়ে, পুরনো ছেড়া জুতো পায়ে শহরের ভাঙা রাস্তায় প্রায়ই দেখা যায় তাকে। সবাই বেখেয়ালি মন নিয়ে নিজস্ব গতিতে তার পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলে আপন আপন গন্তব্যের দিকে। সবার চোখের সামনে থেকেও যেন অদৃশ্য হয়ে আছে সে। বহু বছর ধরে সে আছে এই শহরে। যখন ওই রাস্তাগুলো কাঁচা ছিল, পাশে বেশ কিছু গাছও ছিল।
সকাল-সন্ধ্যা ওই গাছগুলোতে পাখিদের আনাগোনা দেখা যেত। তখন ওই রাস্তা দিয়ে সে হেটে যেত দূরের মাঠ পর্যন্ত যেখানে বিকাল হলেই একদল দুষ্টছেলে মেতে উঠত শৈশবের অকৃত্রিম আনন্দে। এখন সেখানে বড় বড় ইমারত, জমকালো বিপণি-বিতান। এক সময়ের শান্ত-কোমল কিশোরী শহরটাকে ধীরে ধীরে আধুনিক রমণী হতে দেখেছে সে। শুধু ওই শিশুদের পবিত্র আনন্দটুকু হারিয়ে গেছে।
যাক হারিয়ে তাতে এমন কিই বা আসে যায়।
ঢিলেঢালা ময়লা শার্ট গায়ে, ছেড়া জুতো পায়ে এই শহরের ভাঙা রাস্তায় ক্ষুধার্ত থেকেও লোকটা তবু কেন যেন বড়ই প্রশান্তি অনুভব করে। মাঝে মাঝে রাস্তার ভিখিরি টোকাই ছেলে-মেয়েদের উচ্ছলতা, অসহ্য গরমে হটাৎ আইসক্রিম ভাগাভাগি করে নেয়া কিংবা গ্রাম থেকে সদ্য আগত মানুষের বিস্মিত মুখ প্রায়ই মুগ্ধ করে তাকে। অল্প কিছুক্ষণের জন্য সে যেন সেই অকৃত্রিম আনন্দটুকু অনুভব করে।
এক রাতে এক মৃত মহিলার পাশে অনেকক্ষণ বসে থাকতে দেখা গেছে তাকে।
রাস্তার ফুল বিক্রেতা সেই মহিলা তার গর্ভে লালিত ফুলটিকে পৃথিবীর পরশ দিতে গিয়ে বিদায় নিয়েছিল। প্রাণের বিনিময়ে সেদিন প্রাণ এসেছিল ঠিকই কিন্তু অর্থাভাব সেদিন কেড়ে নিয়েছিল এক শিশুর কাছ থেকে তার মমতাময়ী মাকে। সেদিন বড়ই আঘাত পেয়েছিল লোকটি। বহুদিন ধরে সে আছে এই শহরে, আরও অনেক বীভৎস দৃশ্য সে দেখেছে, কিন্তু ঢিলেঢালা ময়লা শার্ট গায়ের, পুরনো ছেড়া জুতো পায়ের সেই লোকটির বয়েস তখন অনেক। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটির আগমনী ধ্বনি তাকে সেদিন খুব আঘাত দিয়েছিল।
এক সকালে তাকে এক রাস্তার পাশে নিথর পরে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় পাশে বসে থাকা কিছু টোকাইয়ের। ট্রাফিক সার্জনের সাহায্যে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অনেক বয়স হয়ে ছিল লোকটার, অনেক দিন বেঁচে ছিল এই শহরে। অভুক্ত শরীর, রোগ-জীবাণুতে পূর্ণ জামাকাপড়, শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। আর কিভাবেই বা থাকতেন বেঁচে ?
অনেক দিন মর্গে পরে ছিল তার লাশ।
পত্রিকার ভেতরের কোন পাতায় ছোট্ট করে খবরও বেরিয়েছিল। তবুও শনাক্ত হয়নি তার মৃতদেহ। হটাৎ করে চুরি হয়ে যায় তার লাশ। কিছুদিন হইচই, তার পর আর কোন খবর আসে নি। শুধু লাশের পাশে পাওয়া যায় একটি ডায়রি বিভিন্ন হাত ঘুরতে ঘুরতে এক সময় বিশ-ত্রিশটি ছোট ঠোঙায় পরিণত হয়।
প্রথম পাতার ঠোঙাটি এক ডাস্টবিনের কাছে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে সব লেখাই প্রায় অস্পষ্ট ছিল, শুধু নামের বিপরীতে লেখা ছিল গোটা গোটা স্পষ্ট অক্ষরে......বিবেক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।