আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রয়াস কবিতা

নদী, নারী ও ছেলেটা একটা গল্প বলছি শোন নদীর সাথে, নারীর সাথে- ছেলেটার গল্প। তিন এর গল্প, এখানেও বুঝি সেই পবিত্র ত্রিত্ব! যা হোক ছেলেটার কথায় আসি মায়ালু চোখ, যখন সময় সবুজ বয়সের ধীবর পুত্র, পৈত্রিক পেশাই যার শিরোধার্য। বয়স এর সাথে তাল মিলিয়ে ওর আছে এক নবিন নৌকো ছেলেটার ছোটবেলা থেকেই এক আজব নেশা যেমন করেই হোক অচিনপুর এর সুর তুলবেই বাঁশিতে যে সুরের মায়ায় স্বর্গ থেকেও মুখ ঘুরিয়ে নেয়া যায়। রাতের বেলা যখন সূর্য ঘুমে ছেলেটা তার নৌকোই ভেসে পড়ে ও নদীর কথা বলিনি এখনও মায়াবী, সুরেলা নদীর কথা রাত হলেই যে আদিম সঙ্গীতে বেজে চলে, বাজে জল এ। বাতাস মাঝে মাঝেই কান পাতে বাঁশীতে, নদীতে কত কথা যে হয়! সে এক অপূর্ব যুগলবন্দী বাঁশীর সুর বুকে নিয়ে, নদী বয়ে চলে, নদী বয়ে চলে।

আর যেদিন আকাশ ফুটে জ্যোৎস্না ঝরত নদীটা যে কেমন রূপালী শাড়ীতে সাজত! আহা, সে কি রূপ! চাঁদের আলোতে রূপার আভায় সে নদীর উথাল পাথাল যৌবন আর ওদিকে তরুন ধীবর ছোট্ট জাদুকর, রক্তে ওরও ডাকতো তুমুল বান রূপোর পাড় এ নৌকো ছেড়ে তুলত বাঁশীতে অচিন সুর নদীর শিরায়, বাঁকে, উজানে, জোয়ারে... চাঁদের আলোয় আকণ্ঠ সুর পান করে নদীও উঠত নেচে, স্রোতে, ঢেউয়ে, বাতাসে, তাল এ কোথায় কোথায় যে ভেসে যেত ওরা কোন প্রাচীন এ, কোন অচিনপুর এ। এভাবে যা হোক যাচ্ছিল দিন চলে নদীতে-বাঁশীতে-ছেলেতে চলছিল যুগলবন্দী মল্লার। মেয়েটা থাকত সেই নদীর পাড় ঘেঁষে সজীব, সবুজ, আলোর টুকরো এক মেয়ে রাতে যখন দূর বাঁশী ভেসে আসত ঝাপটা মেরে নাড়িয়ে দিত বুকের দরজাগুলো সিদুকের মধ্যে ঢুকে কোথায় যে এক মোচড় দিয়ে মেলে ধরত অজস্র পাল্লা... বাঁশীর সুর এ মজে গেল মেয়ে টা বাঁশীর সুরে ডুব এ গেল মেয়ে টা। । বাঁশি থেকে বাশিওয়ালা আর দূর কত আশিক পেল মাশুকের দ্যাখা সুর খুঁজে নিল বুকের একটা বারান্দা দেখা হল দুজনে, ছেলেটা মেয়েটা বেজে উঠল আদিম মানবীয় ঐকতান বাসনার ঢেউয়ে ছুটল আর এক তরী যার নাম তোমরা বলেছ ‘ভালবাসা’।

যে পূর্ণিমার গর্ভে এ গল্পের জন্ম এবার বলছি সেই পূর্ণিমার কথা মেয়েটার দাবী নদীর বুকে চাঁদের সভাতে শুনবে মাতাল বাঁশী বাজবে বাজাবে, নাচবে নাচাবে, মিলবে মেলাবে ছেলেটার কথা আর বলার কি? অভূতপূর্ব রোমাঞ্চ সুরে জেগেছে মানব এদিকে নদীও সেজেছে সাজ এ, আজ ওর জ্যোৎস্না বাসর চাঁদের আলোয় ঝলমলিয়ে ফুলে ফেঁপে আসর সাজিয়ে অপেক্ষায়, ঢেউয়ের পসরা তুলে... হাল ছেড়ে ভাসিয়ে নৌকো যাত্রা হল শুরু, উঠল বাঁশী বেজে। বাতাসে পাখা মেলল অচিন সুর মেয়েটার বুকের ঢেউগুলো নেচে ওঠে কিন্তু আজকে এমন কেন যে? কোথায় নদীর সেইসঙ্গত উচ্ছ্বাস? বাতাস তো উন্মাতাল নয় আকাশ জুড়ে তো মেঘের কাল বিস্তার ঘটেনি তবে ক্যানও নদীর বুকের ঢেউয়ে অচেনা বেসুরা বেরসিক মাতম বোঝেনি মানুষ বোঝেনা ছেলেটা, বোঝেনা মেয়েটা। দিঘীর জলের মত টলটলে নীরব এক জোছনায় আজব ঝড়ে ফুসে উঠল নদীর বুক প্রচণ্ড এক ঘূর্ণি তুলে নেচে উঠে হিংসুটে এক রাক্ষস জাগে করুণ গ্রাসে অন্ধকার যখন ছেয়ে যায় হাত টা যখন ছুটে যায় সব কিছু যখন ডুবে যায় ঠিক সেই মুহূর্তে, ঠিক এক মুহূর্তের জন্য মেয়েটা বুঝি বুঝেছিল নারী বুঝেছিল নদীর বেদন পুরুষ বোঝেনি, বাঁশি বোঝেনি... কেউ বোঝেনি... ২০। ০৬। ২০১২-নারায়নগঞ্জ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।