আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাচের ঘরে বিচার বিভাগ



কাচের ঘরে বিচার বিভাগ বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী জাতীয় সংসদে স্তূতিবাক্য শোনার জন্য আমরা ভোট দিয়ে তাদের সেখানে পাঠাইনি। জাতীয় সংসদের কাজ হলো জনগণের কথা বলা, জনগণের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা এবং একটা সিদ্ধান্ত দেয়া, কিভাবে এই জাতীয় সমস্যাগুলো দূর করা যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা আমরা ভুলে গেছি। আমরা একে-অপরের প্রতি কটুবাক্য প্রয়োগ করছি। তারপরও বিরোধী দল যখন সংসদে আসল, যা দেখলাম, যা শুনলাম তা উচ্চারণ করাটাও বিবেকে বাধে।

অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি। এটাই কি আমাদের জাতীয় প্রত্যাশা? আমরা ভোট দিয়ে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছে এ কারণে যে, আমাদের শিক্ষা দিতে হবে কিভাবে গালাগালি করতে হবে? কিভাবে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করতে হয়? বাচ্চারা কী শিখছে এখান থেকে? উচিত ছিল এ অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করার আগে টেলিভিশন ও রেডিওতে সম্প্রচার বìধ করে দেয়া। তারপর একে অন্যকে যা খুশি গালাগালি করেন, আমরা কিছুই জানব না। তারা মনে করেছেন, এটা রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু রুমের মধ্যেই এটা সীমাবদ্ধ নয়।

বিদেশেও এটা প্রচার হয়। বিদেশীরা জিজ্ঞেস করে, কী হলো তোমাদের পার্লামেন্টে? আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল এই তথাকথিত কেয়ারটেকার গভর্মেন্টের আমলে ব্যবসায়ীদের ওপর, রাজনীতিবিদদের ওপর, স্কুল-কলেজের ছাত্রদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তার ওপর আলোচনা করা। এবং সেটা কনডেম করা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তিনটা মাস আমরা কাটালাম। এ বিষয়ে একটা বর্ণও আলোচনা হলো না।

আমাদের দেশে ওয়ান-ইলেভেনের কুশাসন ছিল। এটাতো আমরা তাদের কাছ থেকে আশা করিনি। এট লিস্ট কিছু না করেন, কনডেমতো করতে পারতেন। কনডেমও করেনি। বিরোধী দল প্রথম অধিবেশনই বয়কট করলেন এটা বলে­ ইলেকশন যেটা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি।

কারচুপি হয়েছে। সুতরাং বয়কট! পরের অধিবেশন, তারপরের অধিবেশন একই অবস্খা এবং একই অবস্খা। এখনকার অবস্খা আরো হাস্যকর। আমাকে প্রথম চেয়ারে বসতে দেয় নাই। আমাকে আমার নির্ধারিত চেয়ার, যেটা আমরা পাওয়ার কথা সেটা দেয়নি।

সুতরাং আমি যাব না। জনগণকে কি বলে এসেছিলেন, আমার ফিক্সড চেয়ার থাকলে সেখানে আমি বসব। আমি প্রধানমন্ত্রী হলে বসব। জনগণের কাছ থেকে এ ম্যান্ডেট নেননি। ম্যান্ডেট নিয়েছেন, জনগণের ভোট নিয়েছেন পার্লামেন্টে গিয়ে বসবেন।

সরকার পক্ষ যদি ভালো চেয়ার বা সোফা চেয়ার না দেয় মোড়া নিয়ে বসেন। ফ্লোরে বসেন। জনগণের কথা সেখানে বলেন। না বলে পার্লামেন্ট বয়কট করে তা অকার্যকর করে দিলেন। এটাতো গণতন্ত্র নয়।

স্পিকার যদি সঠিক চেয়ার না দেন লাস্ট বেঞ্চে বসেন। সেখান থেকেওতো কথা বলা যায়। কিন্তু আমরা বয়কট করলাম। সংসদীয় গণতন্ত্র বা যেকোনো গণতন্ত্র বলেন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্খা গণতন্ত্র সফলতার পূর্বশর্ত। কিন্তু আমাদের জুডিশিয়ারিতে কী হচ্ছে? তথাকথিত কেয়ারটেকার সরকারের সময় থেকে আমাদের সমস্ত জুডিশিয়ারি অস্খির হলো।

জজ সাহেবরা ভয় পেতে শুরু করলেন। নানা ধরনের নির্দেশ আসতে শুরু করল। কিছু কিছু ক্যাঙ্গারু কোর্ট সৃষ্টি হলো। যারা ওদের কথামতো শাস্তি দিতে আরম্ভ করল। জুডিশিয়ারির ভাঙন সেখান থেকে শুরু হলো।

আমি বহু দিন থেকে জুডিশিয়ারিতে ছিলাম। কোনো কোর্ট যদি কোনো আসামিকে জামিন দিত, অর্ডার স্টে হওয়ার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারতাম না। এখন কী হচ্ছে? কোনো কোর্ট জামিন দিলে প্রয়োজনে সরকার পক্ষ বা বিরোধী পক্ষ পিটিশন দিতে পারত। আমাদের যারা সরকারি অ্যাডভোকেট আছেন তারা কোর্টে এমন ভাব করেন যে আমি যা বলব তা মানতে হবে। আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল, তাকে সম্মান করি; তিনি এর সবচেয়ে বড় হোতা।

অথচ ওনার অ্যাপয়েনমেন্টে লেখা আছে হি ইজ দ্য অ্যাটর্নি জেনারেল অব দ্য কান্ট্রি। হি ইজ নট দ্য অ্যাটর্নি জেনারেল অব অ্যানি পলিটিক্যাল পার্টি। এই অ্যাটিচুড যদি পরিবর্তন না করেন, কোর্ট থেকে দুষ্টু পরিবেশ কোনো দিন যাবে না। আমি এই কোর্টে বহু বছর ছিলাম। বেশ কয়েকজন অ্যাটর্নি জেনারেল দেখেছি।

কিন্তু বর্তমানে যে অবস্খা তাতে তো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলে মনে হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল যদি এভাবে কথা বলেন, তাহলে তার অধীনস্তরা আরো জোরে বলবেন। এ অবস্খা থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। সম্প্রতি সবচেয়ে বড় বিষয় যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, সরকার ১৭ জন বিচারককে অ্যাপয়েনমেন্ট দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি দুইজনকে বাদ দিয়ে ১৫ জনের শপথ দিয়েছেন।

দুইজনকে দেননি। কেন দেননি; এটা তার জানার কথা। আমাদের জানার কথা নয়। বিষয়টা এখানে শেষ হয়ে গেল। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ যেটা হলো, আমাদের আইনমন্ত্রী দুই দিন পর একটা অনুষ্ঠানে বলে বসলেন, যাদের শপথ দেয়া হয়নি তাদের চরিত্র ভালো, ক্যারিয়ার রেকর্ড ভালো, জ্ঞানীগুণী সবকিছুই সার্টিফিকেট দিলেন।

তাদের শপথ না দেয়াটা অন্যায়। আমাদের আরেক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, উনি একটা প্রেস কনফারেন্স ডাকলেন বড় করে। ডেকে একটা থ্রেট দিলেন। দুইজনকে শপথ না পড়িয়ে তিনি সংবিধান অবমাননা করেছেন। হি হ্যাজ ভায়োলেটেড অলসো হিজ ওন ওথ (শপথ)।

এ জন্য বিস্তৃত ব্যবস্খা নেয়া যেতে পারে। মানে চিফ জাস্টিসকে থ্রেট দিলেন আপনি যদি ওথ দেন, তাহলে ঠিক আছে। আর যদি ওথ না দেন, তাহলে আপনার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠাব বা অন্য কিছু করব। দিস ইস অ্যা ডাইরেক্ট থ্রেট অন দ্য জুডিশিয়ারি। চিফ জাস্টিসকে থ্রেট দেয়া মানে ডাইরেক্ট থ্রেট অন দ্য জুডিশিয়ারি।

এ অবস্খায় চিফ জাস্টিস যদি কাল, পরশু বা দুই দিন পর ওই দুইজনকে ওথ দেন তাহলে জনগণ বলবে, সরকারের ভয়ে চিফ জাস্টিস তাদের ওথ দিয়ে দিয়েছেন। যদি ওথ না দেন তাহলে সুপ্রিম জুডিশিয়ালের কাছে রেফার করতে পারেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল দু’টি কথা বলতে পারেন। এখানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ইন্টারফেয়ার হস্তক্ষেপ করার কিছুই নেই। তাহলে সরকারের করার কিছুই নেই।

অন্য দিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যদি বলে, চিফ জাস্টিসের অ্যাটিচুড সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। সেই অবস্খায় চিফ জাস্টিসের আর থাকার কোনো অধিকার থাকবে না। তখন শুধু তিনি যাবেন না; যাওয়ার সময় পুরো সুপ্রিম কোর্টটা সাথে নিয়ে যাবেন। এখন যে অবস্খা চলছে, তাতে আমার মনে হয় জুডিশিয়ারি ইজ ইন এ গ্লাস হাউজ। এটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।

সেটা গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যারা গণতন্ত্রের ধজাধারী, গণতন্ত্রের জন্য চিল্লাচিল্লি করেন, তাদের এটা বোঝা উচিত। এ সম্বìেধ একটা ভালো ব্যবস্খা নেয়া উচিত। জুডিশিয়ারিতে কোনো দিন অ্যাকাউন্টিবিলিটি ছিল না; আমরা নিজেরাই বলতাম, জুডিশিয়ারি অফিসারদের কোনো আইনগত অ্যাকাউন্টিবিলিটি নেই; যা আছে সেটা তাদের চাকরিতেই আছে। যেমন, একটা লোয়ার কোর্টের মুন্সেফ বলেন বা অ্যাসিস্টেন্ট জাজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, তার অর্ডারের বিরুদ্ধে হায়ার কোর্টে যায়।

এরপর হাইকোর্ট ডিভিশন আছে। এরপর আছে অ্যাপিলেট ডিভিশন। প্রত্যেক স্তরেই অ্যাকাউন্টিবিলিটি আছে। এ জন্য অন্য কোনো অ্যাকাউন্টিবিলিটির দরকার নেই। সবচেয়ে বড় অ্যাকাউন্টিবিলি হচ্ছে তার বিবেক।

নিজের বিবেকের কাছে সবসময় দায়বদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে কী হচ্ছে? বর্তমান যা হচ্ছে তাতে মনে হয় জুডিশিয়ারির আলাদা অ্যাকাউন্টিবিলিটি দরকার। কার ভয়ে অর্ডার দেবে, কার ভয়ে বেইল দেবে, কার ভয়ে রিমান্ডে পাঠাবে­ সব জিনিস দেখার জন্য একটা অ্যাকাউন্টিবিলিটি কমিশন দরকার। যদি সবাই মনে করেন­ দেশের সচেতন নাগরিক, পার্লামেন্ট মেম্বার, রাজনীতিবিদ, তাহলে একটা জুডিশিয়াল অমবুডসম্যান করা যায় এসব বিষয় দেখার জন্য। কী অবস্খার পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট এ অর্ডার দিলো।

অ্যাপিলেট ডিভিশন অর্ডার দিলো। আমি শুনেছি, তবে নিশ্চিত নই। দক্ষিণ আফিন্সকায় এ ধরনের ব্যবস্খা আছে। ওদের ছয়জন কি আটজন রিটায়ার্ড চিফ জাস্টিসকে দিয়ে ওটা করা হয়েছে। আমাদের এখানেও আমরা সিনিয়র তিনজন অ্যাপিলেট ডিভিশনের জজ বা রিটায়ার্ড চিফ জাস্টিসকে দিয়ে এ ধরনের কমিটি করতে পারি।

তারা এসব কিছু দেখবে। তাতে দেশও বাঁচবে, গণতন্ত্রও বাঁচবে। আমরা পরিশেষে আবার বলতে চাই­ জুডিশিয়ারি ইজ” ইন অ্যা গ্লাস হাউজ। এখনই ব্যবস্খা নিতে হবে। Source: Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.