আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাচের দেয়াল উত্তপ্ত করছে পরিবেশ

নিজের জাতি আর মানুষের কল্যাণেই শান্তি পাই।

দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের উপযোগী না হলেও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রাজধানীর বহুতল ভবনগুলোতে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে কাচের দেয়াল। বহুতল ভবনের এসব দেয়াল উত্তপ্ত করে তুলছে পরিবেশকে। জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ও বাণিজ্যিক এলাকায় বহুতল ভবনগুলোতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নানা রংয়ের কাচের দেয়াল। শুধু নতুন ভবনই নয়, অনেক পুরনো ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও সেগুলোর গায়ে কাচের দেয়াল লাগানো হচ্ছে।

কিন্তু এসব দেয়াল পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য কতটুকু উপযোগী সেই দিকে খেয়াল নেই কারো। এ ব্যাপারে বুয়েটের সিভিল বিভাগের অধ্যাপক সফিউল বারী বলেন, রাজধানীর ভবনগুলোতে কাচের দেয়াল দেয়ায় নগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পাশাপাশি পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আর ভবনগুলোতে কাচের দেয়াল দেয়ার নীতিমালা না থাকলে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তর ও রাজউককে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসরকারি হাউজিং প্রতিষ্ঠান নীড় লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের মতে, ইট, বালি সিমেন্ট দিয়ে দেয়াল নির্মাণের চেয়ে কাচের দেয়াল নির্মাণ অনেক ব্যয়বহুল। এ ধরনের কাচের দেয়াল পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি।

এ দেয়ালের স্থায়িত্বও কম। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কাচের দেয়ালের স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া সম্ভাব্য ভূমিকম্পের তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। ভূমিকম্পের জন্য কাচের দেয়াল মারাত্মক হুমকি। বাংলাদেশের জন্য দেয়াল, খোলা জানালা, বাতাস চলাচলের উপযোগী জানালা, উঁচু সিলিং উপযোগী।

জানা যায়, ১৯২৮ সালে বিশ্বে প্রথম কাচের দেয়ালের ব্যবহার শুরু হয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ১৯৫০ সালের দিকে এ ধরনের দেয়ালের ব্যবহার বিস্তৃতি লাভ করে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কাচের দেয়ালের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। মতিঝিলে সেনাকল্যাণ ভবনে প্রথম কাচের দেয়াল ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, মতিঝিলসহ বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণে কাচের দেয়ালের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, কাচের দেয়াল এ দেশের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। কারণ এ দেশের আবহাওয়া এমনিতেই নাতিশীতোষ্ণ। এসব দেয়াল পশ্চিমা বিশ্বের আবহাওয়া উপযোগী। এছাড়া গ্রিন হাউজ ইফেক্টের জন্যও এসব দেয়াল দায়ী। এসব দেয়ালে প্রতিফলিত সূযরশ্মি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগকে উত্তপ্ত করে তুলছে।

তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব ভবনের ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি আর যাতে কোনো ভবন মালিক তার ভবনে কাচের দেয়াল দিতে না পারেন সে উদ্যোগও নিতে হবে। কাচের দেয়াল নির্মাণ প্রসঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ইমারত পরিদর্শক মো. আবুল কাশেম বলেন, রাজধানীতে নির্মিত ভবনগুলো ইটের গাঁথুনি না কাচের দেয়াল হবে তার নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। ভবন মালিকরা কত তলার ভবন এবং কতটুকু জমির ওপর নির্মাণ করবেন এ সংক্রান্ত প্ল্যান করে রাজউক জমা দেন। এরপর রাজউক থেকে তদন্তসাপেক্ষে সবকিছু সঠিক থাকলে অনুমোদন দেয়া হয়।

এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ভবন মালিকরা ভবনে ইটের গাঁথুনির দেয়াল না দিয়ে কাচের দেয়াল দিলেও আইনানুগ কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না। ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভবন মালিকরা তাদের ভবনে কাচের দেয়াল দেয়ায় নগরীর আবহাওয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে_ এটা ঠিক। তবে নীতিমালা না থাকায় এ ব্যাপারে ডিসিসি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.