আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যন্ত্রণা



তমার মেজাজ খারাপ। মেজাজ চরম খারাপ। ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে-চুরে একাকার করে ফেলতে। অথচ অনেক ভেবেও সে এই মেজাজ খারাপের কোন কারণ বের করতে পারছে না। এটা অবশ্য তমার জন্য নতুন কিছু না।

প্রায়ই ওর এমন বিনা কারণে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সবকিছুর ওপর বিরক্ত লাগতে থাকে। অসহ্য ভাঙচুর টাইপের রাগে মাথা গরম হয়ে যায়। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকে। আর তারপরই শুরু হয়ে যায় মাথাব্যথা।

ভয়াবহ মাথাব্যথা। মনে হতে থাকে মাথা কেউ চারদিক থেকে চাপতে শুরু করেছে। সেই চাপ এত প্রচন্ড আকার ধারণ করে যে সে চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করে। কোন কিছুতেই ব্যথা কমানো যায় না তখন। সহ্যও করা যায় না।

তমা দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে। মাথাব্যথা শুরুর আগেই মেজাজ ঠান্ডা করতে হবে। কিন্তু তার কোন উপায়ই দেখা যাচ্ছে না। অস্থিরভাবে উঠে দাঁড়াল বিছানা ছেড়ে। ফুলস্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ফ্যানের নিচে দাঁড়াল কিছুক্ষণ।

চোখ বন্ধ, কপাল চেপে আছে দু'হাতে। খুব সুন্দর কিছু ভাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু........ঠোঁট কামড়ে ধরল তমা। ও এটা সবসময়ই লক্ষ করেছে। যখনই জোর করে ভাল কিছু ভাবার বা মনে করার চেষ্টা করে তখনই সবচেয়ে বিরক্তিকর, রাগের কথাগুলো মনে পড়ে যায়।

এখনও তাই হচ্ছে। এলোমেলো পায়ে হেঁটে গেল ড্রয়িং রুমে। ভাবছে কিছুক্ষণ টিভি দেখি, যদি ভাল লাগে। পাঁচ মিনিট মাত্র। তারপরই অস্থির হয়ে গেল।

একটার পর একটা চ্যানেল বদল করল। কিন্তু ভাল লাগছে না। গান, হাসি, ভাঁড়ামি সবকিছুই অসহ্য। টিভি জিনিসটা যে কার আবিষ্কার! তমার ইচ্ছে হল আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। কিন্তু কিছুই করল না।

টিভি ওই রকম চলতেই থাকল। এক অতি সুন্দরী মহিলা ঢং করে করে কি সব বলে যেতে লাগল। তমা ফিরে এল নিজের ঘরে। মাথাব্যথাটা হাল্কাভাবে জানান দিচ্ছে। নাহ্ শেষ পর্যন্ত বুঝি আর বাঁচা গেল না।

আয়নার সামনে বসল তমা। ভাবল একটু সাজি। কেন যেন মনে হল সাজার পর যদি ভাল দেখা যায় তাহলে মেজাজ ঠান্ডা হবে। কিন্তু সাজতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তমা মরা চোখে তাকিয়ে রইল নিজের দিকে।

চোখ লাল হয়ে গেছে। কেমন খুনি খুনি দৃষ্টি। আই ভ্রু পেন্সিলটা তুলে নিল। চোখের উপরে-নিচে গাঢ় করে কাজল টানল। ভাল করে তাকাল এবার।

বাহ্, কেমন ডাইনি ডাইনি দেখাচ্ছে! চোখ টকটকে লাল হয়ে গেছে। একটু একটু ঝাপসা দেখছে চোখে এখন। ব্যথাটা বাড়ছে। একটা কটকটে লাল লিপস্টিক নিল তমা। ঠোঁটে টানতে গিয়ে হাত কেঁপে গেল।

লিপস্টিকের টান চলে গেল গাল পর্যন্ত। কেমন অপ্রকৃতিস্থের হাসি বের হয়ে এল তমার মুখ থেকে। দুই গালেই লিপস্টিক টেনে দিল তমা। জোকারের যেমন থাকে। আবার ভাল করে তাকাল নিজের দিকে।

ঠিক ওইরকম দেখাচ্ছে.........."woman with red lips and dead white skin".......... হা হা হা........পাগলের মত হাসছে তমা। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছে। ভাল করে দেখার জন্য হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছল তমা। কাজল লেপ্টে গেল চোখের, ছড়িয়ে পড়ল গালে। ভয়ংকর দেখাচ্ছে ওকে।

উঠে এল তমা আয়নার সামনে থেকে। মাথা চেপে ধরল দুহাতে। মনে হচ্ছে মাথার তালুতে হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে। টলমলে পায়ে হেঁটে এল টেবিলের কাছে। চোখের চারপাশে চাপচাপ অন্ধকার।

সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে ব্যথাটা। পানি বেরিয়ে এল চোখ থেকে। চোখের কাজল ধুয়ে নিয়ে কালচে একটা রেখা নেমে এল গাল বেয়ে। এক হাতে টেবিল থেকে ফুলদানিটা তুলে নিল তমা। ছুঁড়ে মারল সামনের দেয়ালে।

আআআহহহহহহহহহ.................চিতকার করে উঠল তমা। 'কেন? কেন? আমার সাথেই কেন? আর কোন মানুষ ছিল না পৃথিবীতে? আমাকেই কেন? উহ্.......' দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না আর তমা। দুপায়ের ওপর দেহের ভরটা বড্ড বেশি মনে হচ্ছে। হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল মেজেতেই, হাপাচ্ছে, অস্পষ্ট গোঙানি বেরুচ্ছে মুখ থেকে। 'ওহ মা........আর কত সহ্য করবো?' অস্ফুট কথাগুলো বলেই এলিয়ে পড়ল তমা।

জ্ঞান হারাল। পালিয়ে বাঁচল। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মুক্তি পেল এই দু:সহ যন্ত্রণার হাত থেকে। চলবে..........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।