আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়লার রঙ লাল!



প্রসতুতি নেওয়া হয়েছিল ব্যাপক । কেউ যাতে ঢুকতে না পারে। মোতায়েন করা হয়েছিল হাজার হাজার পুলিশ , বিডিআর ও র্যাব । কোন পথ দিয়েই কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না । তবু সংখ্যাটা 30 হাজারের উপরে গিযে েেঠকে।

পাহার বসানো হয়েছিল প্রতকটি মোড়ে । নির্দিষ্ট জায়গায় জনসভা করতে দেওয়া হয় নি । জনসভায় ছিল না কোন ক্যারিশমাটিক নেতা । ছিল না প্রধান বিরোধী দল। এটা কোন রাজনৈতিক সভা ছিল না যে নেতার ডাকে হাজার মানুষ জড়ো হবে।

তবু মানুষেরা ছুটে এসেছিল। তাদের হাতে ছিল লাঠি। তারা এসেছিল তাদের প্রানের তাগিদে । এদেরকে কেউ উস্কানি দেয় নি কিন্তু তবু তারা হামলা চালিয়েছে কারন তারা না হামলা চালেবে তাদের উপর হামলা চালাবে এক বহুজাতিক কোম্পানী ও তাদের এ দেশীয় দোসরারা । তাদের প েক্ষ আছে আমাদের সরকার , এবং আমাদের প্রধান বিরোধী দল।

এই মিছিল যখন বহুজাতিক কোম্পানীর অফিসের দিকে এগুতে চেয়েছে । তখন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের উপর গুলি বর্ষন করেছে, তাদের নিরাপত্তার জন্য যারা একদিন এ দেশকে লুটপাট করেছে এবং আজ বহুজাতিক কোম্পানীর রুপ ধরে আবার আমাদের শোষন করতে আসছে। এই গোলাগুলিতে কতজন মানুষ মারা গেছে সরকারী সংবাদ ভাষ্য তার কোনদিনই সঠিক চিত্র আসবে না । পত্রিকার লিখা হয়েছে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে বাড়ে । পত্রিকা অবশ্য একেটি সত্য ভবিষ্যত বানী করেছ্ নে;িজেদের ভূমি রাক্ষর্থে ভবিষ্যতে পড়বে আরো লাশ ।

কেন এই নিজেদের এই লাশ হতে চাওয়া ?মাটির নীচের সম্পদের কারনে আজ দিনাজপুরের ফুলবাড়ী নামক উপজেলার বাসিন্দাদের মরণ দশা । রক্ত ঝরছে এবং ভবিষ্যতে আরো রক্ত ঝরার খবরের জন্য সবাইকে তৈরী থাকতে হব। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জানা প্রয়োজন এর শুরু এর শেষ কোথায় ? প্রত্য ভাবে না হোক পরো ভাবে এর ফল বাংলাদেশর সব নাগরিককইে ভোগ করতে হবে। বর্তমানে প্রতিদিনই জ্বালানীর প্রয়োজন বাড়ছে। এই জ্বালানীর জন্য আমাদের নির্ভর করতে হয় গ্যাসের উপর ।

তেল বাকীটা । উল্লেখ্য যে আমাদের বাণিজ্যিক জ্বালানীর শতকরা 70 ভাগ আসে গ্যাস থেকে । বাকীটা তেল কিছুটা কয়লার উপর। এতে কয়লার অবদান মাত্র 1 শতাংশ। যেহেতু গ্যাসের মজুদ অফুরন্ত নয় সেহেতু আমাদের বিকল্প জ্বালানীর প্রয়োজন ।

সেই হেতু দরকার কয়লা । দিনাজপুরের বড় পকুরিয়ায হতে ইতিমধ্যে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। পাশপাশি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী নামক স্থানে ব্যাপক কয়লার মজুত রয়েছে। এই কয়লা এখন বাংলাদেশে মরণ ফাঁদ হয়ে এসেছে। একে ঘিরে শুরু হেেয়ছে এক ভয়ংকর খেলা ।

এশিয়ান এনার্জি এক চুক্তি বলে ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তেলন করার কাজ পায় । উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের কারন ,এতে কয়লার মজুদের ,পুরোটাই তোল সম্ভব। লাভ বেশী। বিকল্প খনন পদ্ধতিতে কয়লার মজুদের 30 শতাংশ তোলা সম্ভব। যাতে কোম্পানীর বিনিযোগে লাভের অংকটা ততটা বড় নয় ।

উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে কোম্পানীর যতটা লাভ ততটাই তি হবে বাংলাদেশের । এ পদ্ধতিতেত কয়লা উত্তোলন করতে গেলে খুড়ে ফেলতে হবে প্রায় 64 বর্গকিলোমিটার এলাকার পুরোটাই ্ । অথ্যর্াৎ প্রায় পুরো ফুলবাড়ী উপজেলাটিকে। এখন আসুন দেখি ফুলবাড়ী উপজেলাটিকে । দিনাজপুর জেলার মধ্যে অবস্থিত ফুলবাড়ী উপজেলা ।

যাকে ঘিরে আছে চিরির বন্দর, বিরামপুর, পার্বতিপুর ্ এবং দিনাজপুর সদর উপজেলা । এর আরেক পাশ্বের্্ আছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। 1875 স্থাপিত ফুলবাড়ী থানা 1984 সালে উপজেলায় রুপান্তরিত হয় । ফুলবাড়ী শহরের আয়তন 16.03 বর্গ কিলোমিটার, যার পুরোটাই খনি এলাকার মধ্যে । এখানেই প্রায় 28 হাজার লোকের বাস ।

এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী । এখানে আছে দুটি প্রত্ন স্থান , দমোদরপুর নগরী ও বড় গোবিন্দ ভিটা । এছাড়া আছে অজস্র স্কুল, কলেজ ,মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির এবং এখানকার জমি খুবই উর্বর । উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে গেলে ধ্বংস হবে প্রায় 6 হাজার হেক্টর এলাকা। যদি বাংলঅদেশের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে লোক বসতি 1000 জন হয় তাহলে প্রায় 60 হাজার লোককে এখান থেকে সরে যেতে হবে ।

এছাড়া সরাতে হবে ঢাকা দিনজপুর মাহাসড়ক । ঢাকা- দিনাজপুর ও দিনাডপুর রাজশাহী ব্রডগেজ রেল লাইন। একটি বিডিআর স্টেশন। একটি পুরো শহর । অজস্্র স্থাপনা এবং হাজার মানষ।

মাটির নীচের সম্পদ উঠাতে গিয়ে ধ্বংস হবে হাজার হাজার একর চাষের জমি। যারা অত্র এলাকার না তাদের জন্য একটা তথ্য উত্তরের শস্য ভান্ডার বলে পরিচিত দিনাজপুরের অন্যতম শস্য ভান্ডার হলো ফুলবাড়ী । ঢাকা শহরের চালের চালানের একটা বড় বেশ বড় অংশ আসে ফুলবাড়ী হয়ে । কয়লা তুলতে গিয়ে ধ্বংস করা হবে বাংলাদেশে বড় শস্য গোলাটি । বাংলাদেশের মতো জায়গায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার ফলে ফুলবাড়ীর কি অবস্থা দাড়াবে ? বাংলাদেশের মতো ঘন বসতিপূর্ন দেশে যদি 64 বর্গ কিলোমিটার খুড়ে ফেলে তাহলে এখানে বসবাসরত প্রায় 50 হাজার মানুষগুলোকে কোথায় সরানো হবে? বাংলাদেশের কোন প্রান্তে তাদের বসানো হবে?এমনিতে আমরা হারাচিছ কয়েকহাজার হেক্টর চাষের জমি , বাংলাদেশে নতুন কোন জায়গা আলাদা করে তৈরী করা সম্ভব নয় ।

তাহলে তাদের জন্য আরো আবাসন দরকার । সেটা কোথা থেকে আসবে? প্রশ্নগুলোর উত্তর খোজা যাক । যেহেতু দেশে বাড়তি জমি নেই তাহলে তাদের অন্য কোথাও বা অন্য কারো জমিতে বসাতে হবে । কার জমিতে? আপনার আমার ? কোন পাহাড়ী অঞ্চলে? তাহলে আরেকটা রক্তাত্ব অধ্যায় শুরু । যদি আপনার বাড়ীর পাশে এনে বসানো হয় এবং আপনার বাড়ী হয় নোয়াখালি বরিশাল কি আপনি তা মেনে নিবেন ? নিজ দশে উদ্বাস্ত হয়ে যাওয়া এসব মানুষেরা যাবে কোথায় ? এশিয়ান এনার্জি এদের সবার আবসনের ব্যবস্থা করবে বলে তো প্রতিশুতি প্রদান করেনি।

তারা কতজন লোকের আবাসন করে দেবে? কেউ জানে না । যে পঞ্চাশ হাজার লোককে তাদের ভূমি থেকে সরে যেতে হবে তাদের পেশা কি হবে? ধরে নিচ্ছি এশিয়ান এনার্জি কিছুু লোকের ব্যবস্থা করবে । তারা সংখ্যায় কত? এশিয়ান এনার্জি জানাচ্ছে সংখ্যাটা সরাসরি 2100 জন প্রায়। এদের সবাই তো এ অঞ্চলের হবে না । তাহলে বাকি লোকগুলো কি পেশা বেছে নেবে ? বাপদাদার পেশা চাষাবাস ? সেটার জন্য তো জমি কেড়ে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে আগে , নতুন করে বাংলাদেশে তো আর জমি সৃষ্টি করা সম্ভব নয় তাহলে তাদের অন্য পেশায় চলে যেতে হবে।

তারা তাদের দ পেশা হারিয়ে অদক্ষ শ্রমিকে পরিণত হবে। কি হবে তারা? মুটে, মুজুর, রিকশাচালক? পোপাল ভাড়ের একটা কৌতুক মনে পড়ে গেল । গোপালের চাকর গর্ত খুড়ছে , সে গোপালকে জিজ্ঞেস করছে গর্তের মাটি কোথায় রাখবো ? গোপাল ভাড় উত্তর দিলেন"গর্ত বেশী করে খুড়িস"। এশিয়ান এনার্জি গর্ত খুড়ে জমি ন্ষ্ট করে সেই জমির মাটি কোথায় রাখবে ? গর্ত খুড়ে বিতড়িত এই সব মানুষের আশ্রয় কোথায় হবে? তাদের পেশা কোথায় বা কি হবে? তাদের ভবিষ্যত কি হবে? গোপালের মতই তারা উত্তর দেবে গর্ত বড় করে খুড়িস । সেখানেই এদের ভবিষ্যত রাখা হবে? এতে গেল মানবিক বিপর্য়য়।

এবার আসুন প্রাতিবেশ বিপর্যয়ের দিকে তাকাই । উন্মক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হলে এখানে শুধু চাষের জমি নষ্ট হবে না,এ অঞ্চলে নেমে আসবে এক ভয়াবহ পরিবেশ বির্পযয় । কয়লা উত্তোলন ফলে যে গর্ত তৈরী হবে তাতে আর ভবিষ্যতে চাষ করা যাবে না । এমনকি কোন কিছু করা যাবে না । এই উত্তোলন প্রক্রিয়ার ফলে যে গ্যাসের সৃষ্টি হবে তাতে আশেপাশে প্রায় 100 বর্গ কিলোমিটার এলাকা সরাসরি ক্ষিতগ্রস্থ হবে ।

এতে প্রতিবেশের উপর পড়বে প্রচুর প্রভাব । এই সকল অঞ্চল আগামী 100 বছর পরও ঠিক হবে না । কবে এই অঞ্চল আবার চাষের জন্য তৈরী কেউ বলতে পারে না ? হাজার বছর ধরে তা চাষের অনুপযুক্ত হয়ে থাকবে । এই অঞ্চলে প্রত্নবস্তু ধ্বংস হবে। গাছপালা ধ্বংস হবে।

নদীর অবস্থান সরিযে নিতে হবে। পুরো এলাকাটাাই এক অনুর্বর মরুময় অঞ্চলে হয়ে উঠবে। নিজের জন্য , নিজের এলাকার জন্য কেন মানুষ লড়বে না । এলাকার মানুষেরা কি পেল তা তো আমরা দেখলাম? এই খনি বাংলাদেশের সম্পত্তি । বাংলাদেশ এই চুক্তিতে কি পাবে?অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অংক কষে দেখিয়ে দিয়েছেন চুক্তি দ্বারা বাংলাদেশ বছরে যা আয় করেবে তার চেয়ে প্রায় 300 কোটি টাকার তি গুনবে।

সরকারের বিনিয়োগ উপদেষ্টাও তা স্বীকার করে নিয়েছেন । কিন্তু তার পরেও এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চান কারন এতে দেশের তি হলেও তাদের লাভ আছে বিস্তর। এই রকম একটা রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরেও প্রধান বিরোধী দল অওয়ামী লীগরে কোন প্রতিবাদ নেই । কারন দেশ বিক্রির দাযে বিএনপির সঙ্গে তারাও এখানে সমান দায়ী। এই ধরনের চুক্তির ব্যাপারে কি আওয়ামী লীগ, কি বিএনপি, সবাই এক হয়ে যায় , জনগন যদি তিগ্রস্থ হয় তাতে তাদের কি ? তাদের পকেটে ভরে যায় টাকায় নাকি ডলারে? আমাদের এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবি ও পেশাজীবিও এশিয়ান এনার্জির সুরে গাইছেন ।

তাদের বক্তব্য আমাদের জ্বালানী দরকার । সেটা কি দেশেরে তি করে ? আবার আমাদের জ্বালানী কিন্তু আমাদের থাকছে না । এশিয়ান এনার্জি জ্বালানীর পুরোটাই রফতানী করবে ্ তাহলে দেশের রইলো কি? আপনারা কি এতই সস্তা যে সহজেই বিক্রি হয়ে যান এবং এতটাই বুদ্ধিহীন যে নিজেরাই কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ভাবনা ভাবতে অক্ষম? এই রক্তপাতের দায় কিছু প্রিন্ট ও টিভি মিডিয়া চাপিযে দিয়েছি সাধারণ জনতার উপর । কারো অবস্থান বহুজতিক কোম্পানীর পক্ষে। তারা জানেন কেন এবং কি ভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে,তবু তারা এবং সরকার বহুজাতিক কোম্পানীর পক্ষে, কারন সবার ধরনা বহুজাতিক কোম্পানী যে টাকা দেয় সেই টাকা দিয়ে আবার সবাইকে কিনে নেওয়া যায ।

এই হাজার জনতার কতজনকে আপনার কিনবেন? ্ বহুজাতিক কোম্পানীটির ঘেষানাপত্র দূ:সাহিকস ঘোষনা । তেল, গ্যাস, বিদু্যৎ বন্দর রক্ষা কমিটির লোকজনকে তারা বহিরাগত হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। ফুলবাড়ী তাদের জন্য কি বাইরের দেশ? এদেশের মানুষের অধিকার আছে তার দেশ নিয়ে তার কথা বলার । আপনারা কারা ? আপনাদের আলাদা করে কি বলবো? , আমাদের সীমাহীন লোভ আমাদের দেশের সম্পদকে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আমারা ভুলে গেছি মাটির উপরেও আমাদের সম্পদ আছে ।

সেই সম্পদে আমাদের পূর্বপুরুষেরা হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে । মাটির নীচে যে সম্পদ তিরিশ বছরের শক্তি দেবে, তারই লোভে পরবর্তী হাজার বছরের জন্য মাটির উপরের সম্পদ ধ্বংস করে ফেলবে কেউ ? আমাদের তো বাঁচাতে হবে। বাঁচার জন্য লড়াই করতে হবে হবে। তাতে আরো রক্ত ঝরবে। কিছু লাশ গুম হবে ।

সেই লাশগুলো যাবে কোথায়? নিশ্চয় মাটির তলে । মটির তলে গ্রোথিত মানুষের লাশ হয়তো একদিন কয়লায় রুপান্তরিত হবে । আরেকদল লোক আসবে সেই কয়লা তুলবে । তারা শুধু দেখবে না সেই কয়লার রঙ লাল।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.