আমি এক সাদামাটা শান্ত ছেলে। ভ্রমন পিপাসু পথিক। আমি এ ব্লগের একজন নতুন লেখক। খুব বেশি ভাল লিখতে পারিনা। তাই ব্লগে তেমন লেখা হয়না।
আজ এক্টু সাহস করে লিখে ফেলব ভাবছি। নতুন কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানাতেই আমার এ ব্লগ লেখা। নির্বাচন কমিশনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে এসে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা হয় আমার। এটা সুনামগঞ্জ ঠিক কত কিলোমিটার দূরে তা অবশ্য বলতে পারবনা। তবে নৌকা যোগে সুনামগঞ্জ থেকে আসতে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা লাগে।
তাও আবার একযোগে আসা য়ায়না। দিরাই নামে অন্য একটা উপজেলা হয়ে আসতে হয়। চারদিকে দিগন্ত বিস্রৃত পানির মাঝখানে একটি দ্বীপ শাল্লা। আয়তন বলতে বলার কিছু নেই। দৈর্ঘ্যে প্রস্থে দুই থেক তিন কিলোমিটার হবে।
চারদিকে পানি আর পানি। প্রথমে আমরা আটগাও নামে একটি ইউনিয়নে কাজ করতে যাই। শাল্লা উপজেলা থেকে আটগাও যেতে প্রায় ঘন্টা দেড় লাগে। নির্দিষ্ট সময়ে আমরা আটগাও পৌছি। আমাদের কেন্দ্র ছিল আটগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এক কিলোমিটারের ছোট্ট একটা দ্বীপ। সীমিত কিছু ঘরবাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। গ্রাম না বলে এ জায়গাটাকে মাছের আড়ৎ বললেই ভালো হয়। আসলে মাছের আড়ৎকেই কেন্দ্র করেই কিছু ঘড়বাড়ি তৈরি হয়েছে এখানে। স্কুলের দো-তলায়ই আমাদের টেকনিক্যাল রুম ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
শিডিউল ছিল পাঁচদিন। স্কুলের পাশেই একটা বাড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা করায় আমরা বেশ খুশিই হলাম। যথারীতি কাজ শেষ করে আমরা সবাই মিলে জায়গাটা ঘুরে দেখতে বের হলাম। সত্যি কথা বলতে পানি ছাড়া এখানে আর তেমন কিছু দেখার নেই। ছোট্ট এ দ্বীপের মাঝে হাওড়ের কাছে এসে দাড়াতেই মনে হলো যেন সমুদ্রের পাড়ে সৈকতে দাড়িয়ে আছি।
পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্তের কিছু মনোরম ছবি, এবং হাওড় পাড়ের মানুষের জীবিকার কিছু সুন্দর ছবি তুললাম। বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামল তখন দেখলাম কিছু লোক বড়শি পেতে বসে আছে। জিজ্ঞেস করলাম মাছ ধরে কিনা, তার বলল হ্যা মাঝারি আকারের বোয়াল হর হামেশাই ধরা পড়ে। মাঝে মাঝে বড় ধরনের বোয়ালও ধরা পড়ে। এই আড়তে বোয়ালের কেজি বড় এবং ছোট হিসাবে ১০০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
পরিচয় হলো জুলুপী বেগম (ছদ্ম নাম) নামের এক মহিলার সাথে। যে কিনা রাতের পর রাত বোয়াল মাছ ধরার আশায় বড়শি পেতে বসে থাকে। জিজ্ঞেস করে জানলাম তার আত্ম কাহিনী। এ বাজারে আড়তেই বারান্দায় তার অস্থায়ী সংসার। এক ছেলে আর দুই মেয়ের জননী সে।
আড়তে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সন্ধ্যা হলে বড়শি নিয়ে এসে মাছ ধরায় বসে পড়ে। সারা রাত জেগে থেকে মাছ ধরে। কোনো দিন মাছ ধরা পড়ে। আবার কোনো দিন মাছ ধরা পড়েনা।
স্বামী মারা গেছে বছর তিনেক হবে। দুই ছেলেমেয়ে সে অনেক কষ্টে দিনানিপাত করে সে। কথা গুলো বলতে বলেত তার চোখ দিয়ে গড়গড়িয়ে পানি নেমে এল। হঠাৎ করেই বড়শিতে টান পড়ায় সে সতর্ক হয়ে গেল। দেখতে দেখতে একটা বোয়াল তার বড়শিতে লেগে গেল।
এ জন্য সে আমাদের ধন্যবাদ দিল। বলল ভাই জানেরা গত তিন রাত ধরে কোনো মাছ পাইনা। আর আজ আপনার আওয়ার লগে লগে একটা মাছ ধরা পড়ল। আমরা মৃদু হাসি হেসে সেদিনের মতো চলে এলাম। তার পর থেকে প্রতিদিন আমরা জুলুপী বেগমের কাছে যেতাম এবং তার মনের কথা শুনতাম।
এখানকার ছেলেমেয়েদের দেখে আরও খারাপ লাগলো এই ভেবে যে তারা শিক্ষার আলো থেকে কিভাবে বঞ্জিত হচ্ছে। স্কুল থাকা সত্বেও পরিবেশের কারনে তারা ভাল শিক্ষা পাচ্ছেনা। বিশাল সমুদ্রের মাঝে থেকে তাদের মনটা বড় হলেউ জ্ঞানের পরিধিটা তেমন বড় হচ্ছেনা ভেব খুব খারাপ লাগছিলো। পাচদিন শেষ করে চলে আসার দিন জুলুপী বেগমের সাথে দেখা করে আসি। তিনি আমাদের সুন্দর বিদায় জানালেন, আর আমরা একবুক কষ্ট আর বিচ্ছিন্নতার হাহাকার স্বাদ নিয়ে শাল্লা সদরে ফিরে এলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।