খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... সিন্ডিকেটের কবলে বিদ্যুৎ!
হাসান কামরুল
বিদ্যুৎ নিয়ে পুরো জাতিই অস্তিত্বে রয়েছে। সরকার আন্তরিক হয়েও এ সেক্টর নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত। এখন পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ বঞ্চিত। একটি জাতি তার অর্ধেক জনগোষ্ঠিকে অন্ধকারে রেখে আর যাইহোক মধ্যম আয়ের দেশের পরিগণিত হওয়ার স্বপ্ন বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়।
যদিও প্রত্যেকটি নির্বাচিত সরকারই নির্বাচনী মেনুফেস্টুতে বেশ জোর দিয়ে বিদ্যুৎ সেক্টরের উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু আসলে গত ৪০ বছরে বিদ্যুতের উন্নয়ন কতোটা হয়েছে এ হিসেবটা চোখবুলালেই ভেসে উঠে। কিন্তু বিদ্যুৎ সেক্টরে এ পর্যন্ত যতো টাকা ঢালা হয়েছে তা দিয়ে পুরো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে দেয়া সম্ভব হতো। অতচ বিদ্যুতের চেহারার যৎসামান্য উন্নয়ন কাঙ্খিত বাংলাদেশ বির্নিমাণের পথকে স্তিমিত করে দিচ্ছে। পূর্ববর্তী সরকারের খাম্বা নির্ভর বিদ্যুৎ সেক্টর যেমন বিদ্যুৎ খাতকে শুধু খাম্বার স্বপ্নই দেখিয়েছে।
এ সরকারের ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ খাত বিদ্যুতের বিনিয়োগের বিপরীতে যোগান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবুও আশার কথা হচ্ছে এ আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে। বিদ্যুতে যারা চাকরি করে তাদের অনেকেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। বিদ্যুতের মিটার রিডারের ৫ তলা ৭ তলা প্রাসাদের খবর নতুন কিছু নয়।
বিদ্যুতের সিস্টেমলস বলে বহুল প্রচারিত একটি শব্দ বাজারে চালু আছে।
আসলে সিস্টেমলসটা কি? হরহামেশাই বিদ্যুতের ভৌতিক বিলের গল্প শুনা যায়। এই ভৌতিক বিলটাও সিস্টেমলসের ফল। শহরে প্রায় প্রত্যেকটি বাসায় বৈদ্যুতিক চুল্লি বা হিটারের ব্যবহার রয়েছে। এসব হিটারের সংযোগ অবৈধভাবেই চুরি করে করা। কিন্তু কোন বাসায় কতোটা হিটার রয়েছে তার পরিসংখ্যান জানে সংশ্লিষ্ট এলাকার মিটার রিডার ।
এসব মিটাররিডাররা প্রতিমাসে হিটার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিচ্ছে। যা সরাসরি মিটার রিডাদের পকেট¯হ হচ্ছে।
প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায়ই বিদ্যুতের সাব স্টেশন বা উপকেন্দ্র রয়েছে। যেখান থেকে বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ন্ত্রন করা হয়। এসব সাবস্টেশনে যারা কর্মরত তাদের অনেকেই উপরুন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত।
বিভিন্ন এলাকায় নির্ধারিত টপচার্ট অনুযায়ী লোডশেডিং না দিয়ে কর্তব্যরত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের গোপন আতাতে লোডশেডিংয়ে স্বনির্ধারিত চার্টের প্রয়োগ হচ্ছে। যা ইন্ডাস্ট্রিয়ালযোগের সঙ্গে সম্পর্কীত বলে প্রতীয়মান। এসব কর্মে সাবস্টেশনে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের উপরিকামাই দৃশ্যমান।
মন্ত্রনালয়ে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট যারা ঘুষের বিনিময়ে শিল্পপতিদের বিদ্যুৎ বিল মওকুফ ও অবৈধ সংযোগকে বৈধ করার ব্যব¯হা করে দেয়। উপরুন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রুপ রয়েছে।
বিভিন্ন ব্যানারে সক্রিয় শ্রমিক সংগঠন। ট্রেড ইউনিয়নের কর্তাব্যক্তিদের রয়েছে প্রভুত ক্ষমতা। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বিদ্যুতায়ন বোর্ড সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারেনা। যেকোন প্রকারে শাস্তিমুলক ব্যব¯হা নেয়ার আগে ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে নিতে হয়।
বিদ্যুতের এসব কিস্যা কাহিনী সকলেরই জানা।
বিদ্যুতায়নের বিকল্প ব্যব¯হা কি হতে পারে? কি করলে বিদ্যুতের স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে? এমন চিন্তা সাধারন মানুষের মনেও ঘুরে ফিরে। আসলে প্রতিদিন আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা কতো? সরকার বলছে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াট। খুব বেশি কি? যদি পুরো বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ লোককে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয় তাহলে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে প্রতিদিন ১৩হাজার মেগাওয়াট। এই ১৩হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত পেলে এ দেশের আনাচে কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিদ্যুতের বাতি জ্বলবে। অর্থাৎ সভ্যতার আলোকবর্তিকায় গ্রামের মানুষজন উঠে আসবে।
একটা দেশের জন্য ১৩হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কি এতোই কঠিন? না, বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে তাতে ১০হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রডিউস করা সম্ভব। কিন্তু দেখা যাচ্ছে একটা কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে গেলে কোন না কোন কারণে অন্য একটি কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র কখনোই বিদ্যুৎ উৎপাদনে থাকছেনা। বন্ধথাকা কেন্দ্রগুলোর সবগুলোরই কি যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে? না হয়তো দু‘চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেকানিকেল সমস্যার কারণে বন্ধ থাকে। কিন্তু যারা এ সেক্টরের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করে তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল বা অচল হয়ে পড়ছে।
আর এ সিন্ডিকেটের দৌরত¦্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা অনেকটা ধরাছোয়ার বাইরেই অব¯হান করে। এটা সব সরকারেরই আমলেরই চিত্র।
প্রত্যেকটি উপজেলায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন প্রত্যেকটি পৌরসভায় এমন কি প্রত্যেকটি জেলায় বিদ্যমান সঞ্চালন লাইনের উন্নয়ন প্রয়োজন। এবং প্রত্যেকটি ইউনিটই হবে স্বয়ংক্রিয়।
এরুপ ১০হাজার ইউনিট করে পুরো দেশের বিদ্যুতের গ্রিড পুর্ণবিন্যাস করা যেতে পারে। এতে করে কোন ইউনিট বিকল হলে গেলেও তা অন্য ইউনিটে প্রভাব ফেলবেনা। প্রত্যেকটি ইউনিটের চাহিদা ও সরবরাহের প্রতিমহুর্তের তথ্য উপাত্ত কম্পিউটারাইজড করে অনলাইন ভিত্তিক করতে হবে। তাতে করে এক মহুর্তেই দেখে নেয়া যাবে কোন ইউনিটের বিদ্যুতের সরবরাহ চিত্র কি রকম। প্রাকৃতিক বা যন্ত্রপাতি গোলযোগের কারণে কোন ইউনিট যদি বিকল হয়ে পড়ে তাও সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে স্বয়ংক্রিয় ডিজিটালাইড পদ্ধতিতে।
আর সমস্যা চিহ্নিত করা গেলে সমাধানও বের করাও সহজ তা অনুমেয়। ডিজিটালাইড পদ্ধতিতে বিদ্যুতের চুরি রোধ করাও সহজ হবে। প্রত্যেকটি ইউনিটের নিজস্ব সাইবার পদ্ধতি থাকবে যাতে করে কতোগুলো সংযোগ রয়েছে এবং এসব সংযোগের ক্যাটাগরিসমেত প্রদেয় বা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের রেকর্ডও লিপিবদ্ধ থাকবে।
ক্যাশকার্ডের মতো স্কিম চালু করা গেলে বিদ্যুৎ বিল প্রদাণের হয়রানি কমে আসবে। ক্যাশকার্ডের বেলায় ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডের নিয়মে রিচার্জের ব্যব¯হা করা যেতে পারে।
যা মাসের প্রথমে সেন্ট্রাল মনিটরিং ব্যুথে ক্যাশকার্ড রিচার্জ করে মাস শেষে বিদ্যুৎ ব্যবহারের হিসেবকে আমলে নিয়ে তা এ্যাডজাস্ট করা যেতে পারে। পদ্ধতিগত উন্নয়ন ছাড়া বিদ্যুৎ সেক্টরের চুরি বা সিস্টেমলস নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবেনা।
বিশেষকরে অঞ্চলভিত্তিক বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বা গ্রিডকে আধুনিকায়ন করে অনলাইন ভিত্তিক সেবা চালু করা জরুরি। ¯হানীয় গ্রিডকে স্বয়ংক্রিয় করা গেলে অনেকাংশেই বিদ্যুতকে সাশ্রয়ী করা সম্ভব। তাই জেলাওয়ারি ¯হানীয় গ্রিডগুলোকে পর্যালোচনা করে ত্রুটি বিচ্যুতি বিমোচনে প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ ও কার্যকর করার সুষম ব্যব¯হাই বিদ্যুতের সুফল প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছে দেয়া সম্ভব হবে।
হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।