আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুঁজিবাজার ধসের নেপথ্যেঃ তিন সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি লাখ লাখ বিনিয়োগকারী

সামুতে অর্থহীন অশুদ্ধ বাংলা ও বাংলিশ শব্দ পরিহার করি
দেশের সম্ভাবনাময় পুঁজিবাজারে বিরাজ করছে আতঙ্ক, আস্থাহীনতা আর অনিশ্চয়তা। ব্যাংক-বীমা, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে শেয়ার বেচাকেনায় লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে। তারা আজ অসন্তুষ্ট, ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ। ব্যাংক-বীমা, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের গোটা পুঁজিবাজার-অর্থনীতিকে। কম সময়ে অতি মুনাফা করার জন্য এই তিন সিন্ডিকেট ফাটকাবাজির আশ্রয় নিয়ে শেয়ারবাজারকে তছনছ করে দিয়েছে।

সুকৌশলে সংকটে ফেলেছে দেশের পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় যেমন সরকারের ওপর বর্তাচ্ছে, পাশাপাশি বাজার পতনে, কারসাজির পেছনে অঙ্গুলি উঠেছে সরকারসমর্থক ওই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দিকে। অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন সরকারদলীয় প্রভাবশালী এমপি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। এতে বিএনপির একাধিক সাবেক এমপির নামও রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছেন শেয়ারবাজারের সর্বকালের সব কেলেঙ্কারির হোতা হিসেবে পরিচিত এক ব্যবসায়ী যার নামের আদ্যাক্ষর 'এল'।

বিভিন্ন সময়ে তারা গ্রুপ-সাবগ্রুপে ভাগ হয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেলেঙ্কারির হোতাদের তালিকায় আছেন ঢাকা স্টক একচেঞ্জের বর্তমান পরিচালকদের অনেকেই। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের একজন তিন মাসে কয়েক হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজার থেকে তুলে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্রয় এবং ধারদেনা শোধ করেছেন। সব মিলিয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির লজ্জা আবারও পেয়ে বসল আওয়ামী লীগ সরকারকে। এর আগের আমলে ১৯৯৬ সালের শেয়ারবাজারে পতন থেকে শিক্ষা নেয়নি দলটি।

আগেও যেমন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এবারও তারা ধরাছোঁয়া বাইরে থেকে যাবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা পুঁজিবাজারের উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউস এবং কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছেন। তারা বার্ষিক হিসাবের নামে ঢালাওভাবে শেয়ার বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভ ঘরে তোলার কারণে বাজারের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুঁজিবাজার যখন নিম্নমুখী হচ্ছে তখন সরকারের উচিত ছিল প্রণোদনামূলক কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তা তো হয়ইনি, বরং সে সময় উল্টো এসইসির বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বক্তব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরায়।

নানা মহলের নানা কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। তিন সিন্ডিকেটের সম্মিলিত ফাটকাবাজির পরিণামে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর কোটি কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যায়। এ বিষয়ে ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী বলেছেন, শেয়ারবাজারের অস্থিরতার পেছনে কিছু ব্যবসায়ীর কারসাজি রয়েছে। অতীতের মতো এখনো কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর্থিক বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ধোঁকা দিয়ে তারা টাকা তুলে নিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নামে আরও কিছু কোম্পানি অতিমূল্যায়িত হয়েই তালিকাভুক্ত হয়েছিল। তারাও অনেক টাকা নিয়ে গেছে। বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এসব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, আরও কিছু মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায়, গত বছরে পুঁজিবাজারের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে সরকার ও বিরোধীদলীয় ব্যবসায়ীদের একাধিক চক্র সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করে। অক্টোবর-নভেম্বরে সূচক ও লেনদেন যখন লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে থাকে, তখন সুযোগ বুঝে আস্তে আস্তে সিন্ডিকেট সদস্যরা বাজার থেকে সরে পড়েন। ফাঁদে আটকে যান সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। প্রতিদিনই সূচক হারানোর প্রেক্ষাপটে রাস্তায় নেমে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

পুঁজিবাজারে ধসের দায় সরকার ও এসইসি কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। যেমনটি পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিন বছরে ব্যাংকগুলো জামানতের প্রায় অর্ধেক এবং শিল্প ও কৃষিঋণের টাকা বাজারে বিনিয়োগ করলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ছিল নিশ্চুপ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কারণেই বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে সূচক বাড়তে থাকে। তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আবার মুনাফা তুলে ব্যাংকগুলোর শেয়ার বিক্রি করায় সূচকের পতন দ্বিগুণ হারে ঘটেছে। এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে তাদের করার কিছুই নেই। কিন্তু নিয়ন্ত্রক হিসেবে তাদের ব্যর্থতার কারণেই বাজারের এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্টরা সবই জানত। এটা জেনেও অনেকে বিনিয়োগে এসেছেন।

তিনি বলেন, বাজার সংশোধন প্রত্যাশিত হলেও এতটা দ্রুত কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে বিনিয়োগকারীরা সর্বস্ব হারাচ্ছেন। বাজারকে নিজের গতিতে চলতে না দিলে পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হবে না।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.