আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষবৃক্ষ

ইট কাঠের খাচায় আটকে থাকা মানুষ, উড়তে চায় আকাশ পানে... হাজারো ছাত্র-ছাত্রী যখন আজ অডিটোরিয়ামে আইডি কার্ড মেলে ধরল, আমিও আজ তাদের একজন ছিলাম। অন্যায় এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার জন্য সবাই একজোট হয়ে যায় মুহূর্তেই। সবাই দ্বিধাহীন কন্ঠে ঘোষণা করে অন্যায় কে আর মেনে নেয়া হবে না। অনেক বাড় বেড়েছ, এবার বেরিয়ে যাও। অথচ মানুষের টনক নড়ে না তাও।

মাসের পর মাস চলে যায়, ভার্সিটি গুলো বন্ধ হয়ে থাকে, কারো কোন দায় নেই। গায়েই লাগে না। নীতিনির্ধারকরা দলের খুটা গাড়তে ব্যাস্ত। ভিসি কে সরালে যে কিছু সুবিধাভোগীদের শেষ খুটা টাও বুয়েটে থাকে না, এটা বুয়েটের কাক গুলাও বুঝে। দেশের হাজারো ছাত্র বুঝে, যারা স্বপ্ন দেখে দেখে বড় হয়েছে যে একদিন বড় প্রকোশলী হবে, দেশের সেবা করবে, আরো কত কিছু।

কোথায় দেশ, কোথায় সেবা করবে সে? দেশ ছেড়ে পালাতে পারলেই আজ বাঁচে। তার নামে মামলা দেয়া হবে, হলের আড়ালে আবডালে কিংবা জনসম্মক্ষেই পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে দেয়া হবে। অথচ বিচার হবে না। এই ছেলেগুলার কিভাবে আর দেশপ্রেম অবশিষ্ট থাকবে? স্কুল কলেজে পড়ুয়া উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের মনে থাকে কত হাজারো স্বপ্ন। রঙ্গিন রঙ্গিন স্বপ্ন।

সাদা কালো খাতায় লিখে আসা স্বপ্ন। বড় হয়ে ডাক্তার হবে, প্রকোশলী হবে। আস্তে আস্তে যে ঘুণে ধরতে থাকে সেই স্বপ্নগুলোকে। একসময় ধারণা জন্মায়, পৃথিবীটাতে এসেছো, কোনরকমে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা করে চালিয়ে দাও। কি দরকার বিশেষ বাহিনীর রডের বাড়ি খাওয়ার, কি দরকার পিঠে বেসবল ব্যাটের স্বাদ নেয়ার।

কি দরকার পুলিশের টিয়ার গ্যাস শুকে দেখার। বাড়ি যাও, ঘুমাও। মুভি দেখ। এত নিরাশা, এত হতাশা কোথা থেকে আসে? দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ বন্ধ হয়ে আছে কয়েক মাস ধরে, কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। এরপরেও বলি, আসেন আমরা আলোচনা করি।

চলেন বসি, গোলটেবিল এ। গতকালই তো একদল শিক্ষক মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে ফিরে এসে নমঃ নমঃ করছে। তাদের কি দোষ দেব, তাদের পরিবার আছে, ঘর আছে, দ্বায়িত্ব আছে। নিজের জীবন বিপন্ন করে নিজের প্রিয়জনদের কেউ বিপদে ফেলতে চায় না। বৈঠকে কোন হাশরের ময়দান দেখানো হয়েছে কে জানে।

বৈঠক তো আর আমরা টিভিতে লাইভ দেখি না। তারপরও আমরা আশাবাদী, এই মর্মে তৈল লেপন করি। প্রোভিসি কে সরিয়েছেন, আহা কি সৌভাগ্য আমাদের। এতটুকুই বা কম কি, কয়টা ভার্সিটির ছাত্রদের কয় জন্মে এই ভাগ্য হয়। তাই আমরা বলি, আমরা আশাবাদী, ব্যাপারটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।

সংবাদ মাধ্যমে গরম গরম কথা বলা থেকে বিরত থাকি। তাতে আমাদের কি লাভ। লাভ কেবলি সংবাদ মাধ্যমের। এমনিতেই তাদের লাভের শেষ নাই, দেশে এত এত ঘটনা, নিউজের অভাব নাই। এর মধ্যে বুয়েট।

কত সুন্দর মনোরম একটা যায়গা। ক্যাফেতে বসে কফি কিংবা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দুটো রিপোর্ট লেখা যায়। তবে ঝামেলাও আছে। আবার না কমার্স এর স্টুডেন্টদের রোষের স্বীকার হতে হয়। বেটারা খেপে আছে, মাত্রই বুয়েটে খেপ দিতে এসেছে কিছু কামাই এর আশায়।

আর পেটের ভাতটাই না মেরে দিল কোন সাবজেক্টে পড়েন জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে। একটা গাছ যখন বিষাক্ত হয়ে যায়, এটা যখন আশেপাশের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন একে সমূলেই উৎপাটন করতে হবে। দুই একটা পাতা ছেটে লাভ নেই। এটা তাতে আরো তরতরিয়ে বেড়ে ওঠবে। বুয়েটের দুর্নীতির এই বৃক্ষের গোড়াটাই যে ভিসি।

তাকে না সরিয়ে এসব প্রুনিং করে লাভ হবে না। বুয়েট বিক্রির এখতিয়ার যে কেবলি ভিসির আছে। বাইরে থেকে শিক্ষক ভাড়া করে ক্লাস করানোর এখতিয়ারও যে তার। বাইরে থেকে কমার্স এর স্টুডেন্ট ভাড়া করে ক্লাস করাতে সে পিছপা হবে না। এত দম্ভ যার, এত অহংকার যার, তাকে শাবল দিয়ে না উপড়িয়ে আমরা বুয়েট থেকে যাব না।

আজকে শুধুমাত্র প্রোভিসি কে সরানোর অফার টা ছাত্ররা মেনে নিয়ে ক্লাসে চলে গেলে কি হবে তা ভেবেই গা টা শিউরে ওঠছে। ভিসি তার পোষা বিশেষ বাহিনি দিয়ে সাইজ করবে বুয়েটের নিরীহ নির্ভীক ছেলেগুলাকে। পেছন থেকে সবুজ সঙ্কেত দিবে, তোমরা যাও, উচিত শিক্ষা দিয়ে আস, যাতে আর জীবনে আন্দোলন করার সাহস না পায়, আমি আছি তোমাদের সাথে, তোমাদের কিছু হবে না। তোমরা যে দেশপ্রেমিক, সোনার টুকরা ছেলে। শুধু কি তাই, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে আটকে দেয়া হবে সিনিয়র ব্যাচের ফলাফল, বিশেষ করে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা অন্যায় এর বিরুদ্ধে কথা বলেছে, যারা দেখিয়েছে যে নিজেরা উটপাখির সগোত্রীয় নয়।

যাবে কোথায় বাছারা। বুয়েটে পড়বা, জনমের শিক্ষা নিয়ে যাও। তাইতো আমরা আজ মধ্যস্থতা করি। আলোচনা করি, বলতে ভয় পাই, মানি না মানব না। শুধু বলি ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন, আমরা আশাবাদী।

কি দরকার নিজের জীবন টা নষ্ট করার। তবে ধারনাটা মূহুর্তে বদলে যায় পাশে যখন দেখি আরও দশজন দাড়িয়েছে। চোখে মুখে জ্বলে ওঠে আগুন। অডিটোরিয়ামের হাজারো জ্বলজ্বলে চোখের তারা আর কন্ঠের গর্জন শুনতে কি পায় আমাদের ভিসিরা, মন্ত্রীরা? কন্ঠে স্পন্দিত হয় চাপা ক্ষোভ। যে ক্ষোভে দেশে জ্বলে ওঠেছিল বায়ান্ন, উনসত্তর কিংবা একাত্তর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.