বাড়ীর সবাই গোল হয়ে বসে আছে বারান্দায়। দীর্ঘ দিন পর আর সকালে সূর্য্যের দেখা মিলেছে। আকাশে ছেড়া সাদা মেঘের উড়া উড়ি। শরতের শুরুতে হালকা বাতাস.... বহু দিনের ক্লান্তিকেও দুর করে দেয়।
কিন্তু এই নির্মল হাওয়া বা সুন্দর সকালের দিকে মন নেই চৌধুরি বাড়ীর কারো।
সবাই বসে আছে মন্টু মিয়ার মৃত দেহকে ঘিরে। কখন কিভাবে কেন এই মৃত্যু... সে উত্তর এই মানুষগুলোর কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না। সবাই ভাবছে বুলবুল চৌধুরীর কথা। এ খবর তার কানে পৌছুলে কি করবেন তিনি?
এই অস্বাভাবিক পরিবেশটা বুঝে নিয়ে বাড়ীর সবচে ছোট তুতুন ও চুপ। আড়ায় বছরের কৌতুহলী মন যেন হারিয়ে গেছে।
ছোট চাচার কোলে চুপ করে বসে সেও যেন অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
ভোর বেলা কাজের বুয়া প্রথম আবিষ্কার করে মন্টু মিয়ার মৃহ দেহ। আলগোছে পড়ে আছে তার ঘরের বাইরে। ভাইজান বলে প্রথম চিৎকার আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই সবাই জেনে গেল মন্টু মিয়া আর বেচে নেই। অথচ খুব বেশি একটা বয়স হয়নি মন্টুর।
বছর দুয়েক হলো বুলবুল সােহবের হাত ধরে এই বাসায় আসে মন্টু। সেবার বুলবুল চৌধুরী গেছিলেন, রাঙ্গামাটি, অফিসের কাজে। কাচ শেষে ফেরার পথে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তুলে এনছিলেন মন্টু কে। তারপর কিছু দিরে মধ্যেই বাড়ীর সবার প্রিয় পাত্র হয়ে যায় মন্টু। আর সব কাজের দায়িত্ব তুলে নেয় নিজের কাধে।
সকালে সবাই ডেকে তোলা, কে কোথায় যাবে... সব কিছু বলে বলে করাতো মন্টু।
অথচ সেই মন্টু আজ বহু দুরে। অজানার দেশে। এখন সবার ভাবছে, বুলবুল সাহেব কি ভাবে নেবে এই খবর। বছর খানেক হল অবসর নিয়েছে।
তারপর থেকে, বুলবুল সাহেবের সব কাজের সঙ্গি মন্টু। তার সাথে গল্প তার সাথে খাওয়া। বিকেলের বেড়াতে যাওয়া। মাত্র এক মাস হল হার্ট অপারেশন করিয়েছে বুলবুল চৌধুরি। এ খবর সইতে পারবেন তো?
সময় কতো দ্রুত পেরোয়।
বাসার বড় ঘড়িটা ঢং ঢং করে জানান দিলে আট টা বেজে গেছে। ঘড়ির কাটার সাথে সাথে বাড়ছে সবাই হার্টবিট। বুলবুল সাহেবে বাসায় ফেরার সময় হয়েছে।
বাড়ীর কাজে বুয়া চলে গেছে রান্না ঘরে। মালি পানি দিচ্ছে গাছে।
আর সবাই এখনও বসে সম্ভাব্য ঝড়ের অপেক্ষায়।
সিড়িতে পায়ের শব্দ।
"কইরে মন্টু কই তুই?"-দীর্ঘক্ষণ পরে নিরাবতা ভাংলো বাড়ী। কিন্তু আসলে কি ভাংলো নাকি আরো বাড়লো।
অন্য আর দশটা দিনের মতই বাড়ীতে ঢুকে বুলবুল চৌধুরী অভ্যাস মতই ডাকলেন মন্টুকে।
কিন্তু সাড়া নেই। উত্তর দেবে কিভাবে? মন্টু তো এখন বহু দুরের দেশে।
পুরো বাড়ীতে নিরবতা, হাতে খবরের কাগজ নিয়ে বারান্দায় ঢুকলেন বুলবুল সাহেব। তাকে আর কিছু বলে দিতে হলনা। ৬৫ বছরের অভিজ্ঞ মত বুঝে নিল সাথে সাথে।
শুরু হাত থেকে পড়ে গেল কাগজ। হাটু মুড়ে মন্টুর মৃত দেহের পাশে...... হাতে তুলে নিয়ে আলগোছে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো.......
"আমার প্রিয় পোষা ময়না" ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।