আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি জোছনা রাত, একটি লাইটার, ও একটি অপমৃত্যুঃ

An Engineer needs not to be a perfectionist or a fastidious intellect. An Engineer needs to be someone who can keep pursuing the goal with whatever resources available at a particular moment.

জানুয়ারি ১১, ২০০৯: রাত তিনটা। বাইরে অপরুপ জোৎস্না ফুটে উঠেছে। ভরা চাঁদ, পূর্নিমা নাকি? জানিনা। হয়তবা। কিছুক্ষন আগে ছাদে বসে ছিলাম।

একা। চাঁদের আলোর নিচে। এক হাতে benson , আর আরেক হাতে lighter. বারবার চেস্টার পর ও ধরাতে পারছিলাম না। হাত কেঁপে যাচ্ছিলো। আর কেন জানি মনে পড়ে জাচ্ছিলো একজনের কথাঃ “ধুর! দে, ধরায়ে দিচ্ছি।

আমার হাতে দে। তুই ধরাতে পারবি না…” জুলফিকার আলি আহসান আপেল। আমার বন্ধু। বুয়েটে পদার্পনের প্রথম দিন যে কয়েকটি ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম। ওর সাথে আমার প্রথম দেখা বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের পর subject selection এর দিন।

প্রথম ১০০ জনের সেদিন subject choice ছিল। আমার এখনো সে দিনের কথা মনে আছে। আমাদের লাইনে serial করে দাঁড়িয়ে ছিলো আপেল, অভি, আমি, রিফাত(রণ) এরা। ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ তম। আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে মজা করছিলাম typical ছেলেদের মত।

Jokes, কোন subject নিলে সবচেয়ে ভালো হবে, কে কোন college এর, মেডিকেল test এ আমাদের সাথে কি কি করতে পারে… এরকম হাজারো না হলেও শত কথা, মজা… আমি বাদে আমার লাইনের সবাই EEE নিলো, আর বেরোনোর পর, অভি আমাকে খোচা মারা শুরু করলো। আমরা ৪ জন ই ৪টি different স্থান থেকে এসেছিলাম। আপেল কে,বি,আই কলেজ, ময়মনসিংহ; অভি কুমিল্লা ক্যাডেট; আমি বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজ;আর রিফাত নটরডেম। বেরোনোর পর সারিবদ্ধভাবে সকলের বুয়েটের মেডিকেল ল্যাবে গমন ও torture… আর checkup থেকে বেরোনোর পর, সকলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং typical boys type jokes.. আমার প্রথম দিনের স্মৃতি। আপেল থাকত শেরে বাংলা হলে।

ঘটনাক্রমে, সে আমার বন্ধু প্রতীকের roommate. কাজেই মাঝে মাঝে ওর সাথে দেখা হত room এ গেলে। আর, দেখা হত, সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়াতে, EME ভবনে, অথবা রাস্তায়, কখনো শহীদ মিনারের সামনে, অথবা কখনো register ভবনের সামনে। হেসে মৃদু nod করে আমরা চলে যেতাম, সময়ের স্বল্পতার কারনে। ওর সাথে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বের সূচনা ২-১ এর দিকে থেকে। জয় তখন হঠাৎ চিকিৎসার জন্য india গেল।

আমরা , জয়ের সকল বন্ধুরা, departmental ও non-departmental মিলিয়ে ওর জন্য টাকা তোলার ব্যাবস্থা করলাম। তখন, আমরা বসে জয়কে কিকরে সাহায্য করা যায় এ নিয়ে কথা বলতাম। কখনো আমাদের সাথে থাকতো নাদিম আর সাগর, কখনো বা প্রতীক। দেখা হত ক্যাফেটেরিয়াতে, নাস্তা করতে করতে আমরা জয় কে নিয়ে কথা বলতাম। কি করা যায়, এখন কেমন আছে… আলোচনা কিভাবে গল্পে পরিণত হত টের পেত না কেউ… ফ্ল্যাশব্যাকঃ লেভেল -২ , টার্ম -২: কালান্তরি EEE: term এর মাঝের দিকে জানতে পারলাম, এর experiment no. 8 একটা প্রজেক্ট!!! আমার প্রথম মন্তব্য ছিল কিছুটা এরকমঃ “@#৳%ঁ&*()_)(*&ঁ%৳#@#৳%ঁ&* … শালার…@#৳%ঁ&(*&ঁ%৳#”।

যাইহোক, প্রতীক প্রথমদিন স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে এসে আমাদেরকে বলল, “আপেল বলসে wires, chips গুলো stadium থেকে কেনা better হবে না। পাটুয়াটুলির দিকে কম দামে পাওয়া যাবে, ওরা মনে হয় ২-১ এ প্রজেক্ট করেছিল, তাই ওরা জানে”। যাইহোক, সময়ের স্বল্পতার কারনে আমি আর প্রতীক মিলে স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে কিনে আনলাম সবকিছু। এবার শুরু হল বিপত্তি। “সল্ডারিং করে কিকরে??” ঃ আমার প্রথম কথা।

“wires কে connector এর সাথে সল্ডারিং করব কিকরে?” এই সময়ে দেখা গেল রুমে আপেলের আগমন। প্রতীক আপেলের কাছে যন্রপাতি নিয়ে আমাকে দিলো, আর আপেল আমাকে দেখালো কি-করে করতে হয়। শুরু হল ঝালাই!!! বেচারা archi-06 এর মিশুর টেবিল দিলাম পুড়িয়ে… একটা তার লাগাই, আর বিরক্ত হয়ে ১৫ মিনিট হাটি… আর এদিকে আপেল হাসে…”বেচারা…”। কিছুক্ষন পর প্রতীক ঝালাই করে, আর তার পর আমি আবার বসি। এভাবে চলতে থাকল কাজ… ২৩ ঘন্টা পর কাজ শেষ হল।

মাশুক কে দিলাম আমাদের connector টা। ততক্ষনে , আমি ঝালাই expert হয়ে গেসি। দেখা গেল, তার পর আমি অন্যদের কে ঝালাই করা সেখাচ্ছি…( হাহাহা… আপেল পরে শুনে হেসে দিয়েছিল)। হায়, অন্যদের ঝালাই পরে হয়েছিল, কিন্তু আমাদের connector কয়েকটা পুড়ে যাওয়ার পর আবার করা লেগেছিল… স্মৃতি… শুধু স্মৃতি… ফ্ল্যাশব্যাকঃ লেভেল ৩: টার্ম ১: সেপ্টেম্বর ২০০৮: হঠাৎ একদিন প্রতীকের রুমে গেলাম…দেখলাম প্রতীক নেই। আপেল রুমে বসে prison break দেখছে।

প্রচন্ড জোরে। প্রতীকের আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছিলো, আমরা গল্প করতে লাগলাম… “off –topic ” এ। মজার গল্প। prison break এর plot –ছিল আমাদের বিষয়! যাইহোক, প্রতীক আসার পর আমরা project এর details এর আলোচনায় মেতে উঠলাম। কিছুক্ষন পর পর ই আমাদের আপেল কে ঝাড়ি মারা লাগলোঃ “দোস্ত, আস্তে দে volume টা।

টেকা যাচ্ছে না। ” বেচারা… Project এর কাজে মেতে ঊঠার কারনে আমাদের ৩ জন কেই( আমি, প্রতীক, শাহেদ) regular প্রতীকের room এ যাওয়া লাগত। অক্টোবর এর প্রতিটি দিন আমরা ওই রুমে থাকতাম। বসে তর্ক করতাম, আর করতাম মজা। প্রতীক আর শাহেদের fifa খেলার চেস্টা, আর আমার software analysis এর ঝাড়ি!!! প্রতীক আর শাহেদের project outlook description, আর আমার “ঊম-উম্ম-জোকস…”, আর আমাদের কাজ দেখে আপেলের হাসি… যখন দরকার পরতো, আমাদের জন্য PC ছেড়ে দিত।

কখনো আমাদের কে থামাতো। কখনো আমাদেরকে “পচাতো”। আমাদের team এর ৪র্থ member ছিলো সে। শাহেদ-কে একবার মজা করতে গিয়ে আমি বলেছিলাম, “cheerleader পাইসি!! হেহেহে…”। আমাদের প্রতিটি discussion এ সে থাকতো।

শেষ week আসলো। আমাদের সবার মাথায় হাত। এক লাইন-ও code লেখা হয়নি। সবার মাথার চুল ছিড়া বাকি মাত্র। বাধ্য হয়ে আমি হলে আমার PC নিয়ে উঠে আসলাম আপেলের আর প্রতীকের room এ।

আপেল নির্দ্বিধায় আমার PC রাখার জন্য জায়গা করে দিতে সাহায্য করলো। শুরু হল আমাদের team এর অমানুষিক পরিশ্রম। নির্ঘুম রাত্রি যাপন, আর আমাদের মজা ও কাজ। শাহেদ কখনো মিশুর PC, কখনো প্রতীকের PC তে। প্রতীক বই ঘাটে, আমি মিশুর headphone হাইজ্যাক করে গান শুনি, আর পাশের বিছানাতে বসে আপেল আমাদেরকে খেপায়… মজার ৫ টি দিন।

কখনো আমরা ৪ জন মিলে archi er মিশু আর তার roommate কে জ্বালাই…কখনো আমি আর আপেল মিলে রুমের বাইরে গিয়ে ধোয়া উড়িয়ে আসি-কারণ, বেচারা শাহেদ room এ ধূম্র এর জ্বালা সহ্য করতে পারে না! তার লাইটারের উপর আমার অবাধ অধিকার জন্মায়ে গিয়েছিলো। কাজ করতে করতে হঠাৎ ciggerate এর নেশা চাপত, আর তার লাইটার টা নিয়ে আমি চলে জেতাম রশীদ হলে, পরোটা, চা, benson মারতে…লাইটার টা দিতেও ভুলে জেতাম। মজার ৫ টি দিন, কস্টকর ৫ টি দিন, গালি-আর কাজের মিশ্রণের ৫ টি দিন…কিভাবে কেটে গেল আমাদের ৪ জনের একসাথে, কেউ টেরই পেলাম না। কে জানতো, এই হবে ওর সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল স্মৃতি, আর সর্বশেষ স্মৃতি? Project করার সময় হঠাৎ দেখতাম ওর মধ্যে উদাসীনতার ছায়া। ভেবেছিলাম সাময়িক, স্বাভাবিক।

বুয়েটের চাপ! কেউই ভাবতে পারিনি…ওর এই উদাসীনতা কত গভীর হতে পারে। শেষ দেখার সময় আমি জ্বালাতে পারছিলাম না আমার cig. তখন ওর ঝাড়ি! “ধুর! দে, ধরায়ে দিচ্ছি। আমার হাতে দে। তুই ধরাতে পারবি না…” হেসে দিয়েছিলাম। নড করে চলে এসেছিলাম।

এই ছিলো আমাদের শেষ দেখা। শেষ কথা। বর্তমানঃ আজকে সন্ধায় হঠাৎ শুনলাম কে জানি আত্মহত্যা করেছে। আমাদের ব্যাচের। মেইল চেক করতে ঢুকলাম… সৌরভের মেইল টা পেলাম।

খুলে আমি চমকায়ে উঠলাম। আমাদের আপেল। বিশ্বাস হচ্ছিল না। একের পর এক call করা শুরু হল। মিশু, সৌরভ, মাশুক, শাহেদ, প্রতীক… সবাই বলল, গতকাল রাত্রের ঘটনা।

নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এভাবে? তাই বলে এভাবে? রাতের আধারে ছাদে বসে আছি। আর কানে আসছে ওর শেষ কথা। মনে পড়ছে, শেষ স্মৃতি। আর, সেই দিনগুলোর কথা।

আজকে আমরা সবাই আছি। সেই রাতটার মত জোৎস্না পড়েছে আজকেও। শুধু তুই নেই partner, আমাদের cheerleader… যেখানেই থাকিস না কেন, ভাল থাকিস বন্ধু। ভাল থাকিস। তোর স্মৃতি গুলো আমাদের মাঝে অক্ষয় হয়ে বেচে থাকবে।

-dedicated to Zulfikar Ali Ahsan Appel. Born : 14 December 1987 Died: 9 January, 2009. May you rest in peace bro.

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.