কারার ঐ লৌহ-কপাট ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট রক্ত-জমাট শিকল পুজার পাষাণ-বেদী ওরে ও তরুণ ঈশান বাজা তোর প্রলয় বিষাণ ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি ৪ জুন, ২০১৩
সকাল ১০ টাই খাওয়া দাওয়া করে এক জন ৫৫ বছরের লোক কাজে গেছেন। যাবার পর থেকেই তার কিছুক্ষণ পর পরই হেঁচকি উঠতে লাগলো। তিনি পানি খেলেন, বার বার খেলেন কিন্তু হেঁচকি কমে না। অবশেষে তিনি বিকাল ৪ টাই তার বাড়ির পাশের ১ বছর আগের এমবিবিএস পাস করা এক ডাক্তার ছেলেকে ফোন দিলেন। সে তাকে beclo( beclofen 5mg) এখন একবার এবং রাতে একবার ও seclo 20 mg খেতে বললেন।
তিনি বললেন তার কিডনির রোগ আছে, বর্তমান s. Creatinine level 1.7 । সে বলল এটাতে কোন সমস্যা হবে না। তবে তিনি সে ওষুধ খেলেন না। পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৭ টাই তিনি ওষুধ খেলেন, এবং দেড় ঘণ্টায় কোন উপকার না হওয়াতে সাড়ে আটটায় স্বপন ডাক্তারের কাছে গেলেন এমবিবিএস। তিনি কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার।
তিনি এই লোক কে opsonil(Chlorpromazine hydrochloride 50mg) একটি করে পাঁচদিন ও motigut খেতে বললেন। লোকটি রাতে খাওয়া দাওয়া করে এসে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। সকালে ৬ টাই তিনি হাঁটতে যান, তিনি উঠলেন না। সকাল ৮ টাই উঠে দাঁড়ালেন এবং দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তিনি পরে গেলেন এবং তার ৮ বছরের মেয়ে তাকে ধরতে পারল না। তার উচ্চ ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিসের রেকর্ড আছে।
এর পরে লোকটার কি হল তা জানা নেই।
এই ব্লগে কোন ডাক্তার থাকলে তার কাছে জানতে চাই এই ওষুধ দেবার সিদ্ধান্ত কত টুকু যৌক্তিক ছিল? এই ডাক্তারকে উপরোক্ত রোগী তার বিগত ৪ বছরের মেডিকেল রেকর্ড নিয়ে গেছিলেন।
আমি শুধু একটি প্রশ্ন করতে চাই একজন রোগী যে ওষুধ টি খাবেন তার কি অধিকার নেই তিনি যা খাচ্ছেন তার সম্ভাব্য প্রভাব কি হতে পারে এ সম্পর্কে জানার? উপরোক্ত ওষুধ টি ঘুমেরপরিমান বাড়িয়ে দেয় কিন্তু এ ব্যাপারে ডাক্তার কোন সতর্কতা দেন নি রোগীকে, রোগীর বাড়িতে আর কেউ ছিল না ছোট্ট মেয়ে ছাড়া। একবার আপনাকে এই অবস্থায় ভাবুন তো।
যারা চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে কিছু জানেন না এমন মানুষের জন্য internet ভিত্তিক কিছু সাহায্যের কথা বলবো যাতে আপনি জানতে পারেন আপনি যে ওষুধটি একটু পরে খাবেন সেটি আপনার শরীরে কি কাজ করবে এবং কেনই বা ওষুধটি ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হঠাৎ করে কোন মুহূর্তে ডাক্তার কে পাওয়া সম্ভব না হতেও পারে কিন্তু এইলেখা হইত কারো জীবন বাঁচাতে পারে। তবে মনে রাখবেন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না কিনবেন ও না। কারণ নেটে দু লাইন পড়ে আপনি যদি ওষুধ নির্ধারণ করতে পারেন তবে দেশের সেরা মেধাবীরা ৫ বছর ধরে এ বিদ্যা পড়ত না।
বিষয় ১ সম্ভাব্য রোগ নির্ণয়ঃ এই কাজটি একটু কঠিন। কারণ এখানে আপনাকে বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল টার্ম জানতে হতে পারে।
আমি এখানে ক্লিনিকাল টার্ম না জানলে কি করবেন তা লিখলাম।
ধরুন আপনার হাতে ব্যথা। প্রথমে নির্ধারণ করুন কোথায় ব্যাথা। দেখা গেল আপনার বুড়ো আঙ্গুলে ব্যাথা। আপনি গুগোলে লিখবেন causes of pain in thumb একটু অপেক্ষা করুন গুগোল আপনাকে সাজেশন দিবে।
যেইটা বেশি নির্ভর যোগ্য মনে হয় ক্লিক করুন( ছবি দেখুন)
সার্চ হলে দেখুন ৫ বা ৬ টি রোগ বলা আছে প্রতি টিকে আলাদা ভাবে খুলে পড়ুন। নিচে ছবিদেওয়া আছে।
যদি এমন আলাদা ভাবে না এসে আর্টিকেল আসে তবে তাই পড়ুন ধারণা বাড়ান আপনার রোগ সম্পর্কে । সার্চ লিস্টে প্রথম আসা চার পাঁচটা পেজ খুলুন পড়ুন। কোন রোগের বর্ণনা দেখে যদি মনে হয় এটি আপনার হতে পারে তবে ঐ রোগের আরও বিস্তারিত দেখতে পারেন যেমন signs of _________, best treatment of _______, how to cure ________ ইত্যাদি।
পড়ার সময় যদি কোন ক্লিনিকাল টার্ম বারবার আসে তবে গুগোলে আবার লিখুন এভাবে define ______। ব্যাখ্যা পেয়ে যাবেন। আমি আবার বলছি এ সবই শুধু মাত্র জানার জন্য, নিজের শরীরে যে রোগ বাধা বেসেছে তাকে বোঝার জন্য, চিকিৎসার জন্য নয়। আমার এক প্রফেসর, তিনি বর্তমানে মালয়েসিয়াতে আছেন, বলছিলেন “সে খানে নাকি রোগীরা ডাক্তারের কাছে যাবার আগেই রোগের সব কিছু পড়ে নেয়। অবশ্যএতে মাঝে মাঝে চিকিৎসা দিতে অসুবিধায় হয়।
”
ওষুধ কি এবং কেন জানার উপায়ঃ
বাংলাদেশের মোটামুটি সব ওষুধের নাম ও কেমিক্যাল নেম আছে http://www.bddrugs.com এ। এখানে যাবেন তার পর উপরে ডান কোণায় দেখবেন সার্চ অপশন আছে সেখানে brand name select করবেন এবং ওষুধের যে নাম ডাক্তার লিখেছে তা লিখে সার্চ দিবেন। এতে ওষুধের মূল কাজ এবং কেমিক্যাল নেম এবং দাম আসবে।
এর পর ওষুধের ক্যামিকেল নেম কপি করে আবার গুগোলে যান, পেস্ট করুন ও সার্চ দিন। নিচের ছবির মত আকারে আসবে, ডান পাশে সাদা অংশে যে লেখা গুলো বড় করে এসেছে তা নেওয়া হয়েছে National library of medicine থেকে।
সেখানের side effect বা তার পাশের যেকোন লিঙ্ক ট্যাবে ওপেন করে পড়ুন, সব চেয়ে ভালো বুঝবেন। এরপর আর চার পাঁচ টা আর্টিকেল পড়ুন, মোটামুটি আপনার যে টুকু না জানলে চলবে না তা জেনে যাবেন আশা করি।
পরিশেষে আমার সিনিয়র সব ডাক্তার ভাইয়াদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি অনেক হইত আমাকে বলবেন যে সাধারন মানুষের এধরনের জ্ঞান নিতে শুরু করলে চিকিৎসা দেওয়া কষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু আমি মনে করি আমাদের দেশে রোগীর অত্তাধিক চাপের জন্য আমাদের খুব কম সময়ে রোগী দেখতে হয়। অনেক সময় রোগীর অনেক লম্বা হিসটরি শোনা সম্ভব হয় না,তাদের ওষুধ বিষয়ে বোঝানোর সময় হয় না, এতে অনেক সময় অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
আসুন আমরা আমাদের মান সম্মান আমাদের কষ্ট নিয়ে না লিখে লিখি কোন রোগে সামান্য এমন ছোট্ট কি আছে যা করলে রোগী হইত বেঁচে যাবে। যেমন কিডনি রোগী, হঠাৎ করে electrolyte imbalance হয়েছে, বুঝতে পারেন নি, দু দিন পর ডাক্তারের কাছে গেছেন, সন্ধায় টেস্টের রিপোর্ট পেলেন দেখলেন সোডিয়াম কমে গেছে একটু বেশি এবং ভাবলেন কাল ডাক্তারের কাছে যাবো। ডাক্তার মাত্রই জানেন, যদি টা আর একটু কমে যাই তবে রোগীর জীবনে পরের সকালটা আর আসবে না। অথচ সামান্য এক গ্লাস স্যালাইন তাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
একটি লেখা তাকে বাঁচাতে পারে।
আপনি জীবনে অনেক ক্রিটিকেল কেস সল্ভ করেছেন টা নিয়ে লেখুন, সেই লেখা পড়ে হইত পরিচিত কারো এই ধরনের লক্ষণ দেখলে সাহায্য করতে পারবে।
কারো এ লেখার বিষয়ে ভিন্ন মত থাকলে জানাবেন, অবশ্যই জানাবেন,কারন এই লেখা যেমন উপকার করতে পারে অপকারও করতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।