আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি বোকা ছেলে ও একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

আপন আলোয় আলোকিত হবার অব্যাহত চেষ্টা একটি বোকা ছেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০০৪-২০০৫ সেশনে ভর্তি হয়। বিষয় কম্পিউটার সায়েন্স। পাশ করার কথা ২০০৮ এ হলেও পরীক্ষা হয় ২০১১ তে, রেজাল্ট প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে! না, অবাক হবার কিছু নেই তো। বলাই তো হয়েছে এটি "বোকা" ছেলের কথা। বোকা না হলে কি আর ৪ বছরের অনার্স ৮ বছরে শেষ হয় ! বোকা ছেলেটি কিন্তু কোন পরীক্ষায় ফেল করা তো দূরে থাক, এ কথা তার কল্পনাতেও আনেনি।

তাহলে কেন এত সময় লাগলো ? কি হয়েছিল এমন ? বোকা ছেলেটির কিছু হয় নি, হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। মহামান্য গুণীজন, শিক্ষকগণ সময়মত পরীক্ষা নেয়া, খাতা দেখা এবং রেজাল্ট দেবার ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন থাকেন। থাকবেন ই বা না কেন ? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পরে তারা কি কোন ছাত্র নাকি ? এরা তো গরু ছাগলেরও অধম। কোথাও চান্স না পেয়ে এখানে ভর্তি হয়েছে। আমরা যে তাদের রেজাল্ট দিচ্ছি ( ৪ বছরের টা ৮ বছরে ) এই তো বেশি।

হ্যা, ঠিক আছে। বোকা ছেলেটি এতেই খুশি। সে আর কোন উচ্চবাচ্য করে না। ঠিকই তো, সে তো বুয়েটে , ঢাবিতে চান্স পায় নি, ওর আবার এত কথা কিসের ? তার কি অধিকার আছে সেশন জ়ট নিয়ে কথা বলার। হোক সেটা ৮ বছরে ! আচ্ছা ঠিক আছে, তাই হোক।

বোকা ছেলেটি সব মেনে নিয়ে চলতে থাকে। একসময় তার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়( যেটা হবার কথা ছিল ৪ বছর আগে)। তার সব বন্ধু-বান্ধব ততদিনে কেউ চাকরি করে ১ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছে, কেউ মাস্টার্স করে ফেলেছে। বোকা ছেলেটি হতাশ হয় না তাও। রেজাল্ট এর আশা না করে চাকরি খুজতে থাকে।

পায় না। সবাই রেজাল্ট চায়, সার্টিফিকেট চায় আর অভিজ্ঞতা তো আছেই। তাও সে হতাশ হয় না। জীবন যুদ্ধে হার মানতে চায় না। বোকা ছেলে যে ! শেষমেষ একটা চাকরি হয়েই যায়।

তার সার্টিফিকেট নয়, কাজ করার সামর্থ্য আর প্রবল ইচ্ছাশক্তির বলে সে চাকরি পেয়ে যায়। যেখানে তার সহকর্মী কেউ বুয়েটের,কেউ চুয়েটের, কেউবা এ আই ইউবির। তারা সবাই ভাল ভাল জায়গা থেকে এসেছে। বোকা ছেলেটি তাদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে থাকে, কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের চাইতে ভাল করতে থাকে। দিন যেতে থাকে।

বোকা ছেলেটি ততদিনে আরো ভাল করে চাকরিতে। নিজের অবস্থানটি আরো শক্ত করেছে সে এ কদিনে। সে বুঝতে পারে সে আরো ভাল করতে পারবে,তার জন্য দরকার মাস্টার্স বা এম বি এ এর মত ডিগ্রি। কিন্তু তার তো মাত্র রেজাল্ট দিয়েছে, সার্টিফিকেট তো এখনও দেয় নি। কবে দিবে তাও জানা নেই।

বোকা ছেলেটি তখন যাত্রা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বোকা ছেলেটি আবেদনপত্র সহ যাবতীয় কাগজ জমা দেয় (যা সে আগেই সংগ্রহ করে পূরণ করে রেখেছিল সময় বাচানোর জন্য)। সে গিয়েছিল সকাল ৮ টায়, তাকে জানানো হল যে তার সাময়িক সনদ দেয়া যাবে কিনা তা জানানো হবে বিকেল ৪ টায় !!! বোকা ছেলেটি জিজ্ঞেস করে এত সময় কেন লাগবে ? দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারী তার দিকে অবজ্ঞাভরে তাকিয়ে বলে, "সময় লাগলে তো ভাল, আগে দেখ কাজ হয় কিনা"। বোকা ছেলেটি আর কথা না বাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। ৪ টার কিছু পরে তাকে জানানো হয় যে তার সাময়িক সনদ এখন দেয়া যাবেনা, আরো পরে এসে খোজ নিতে হবে যে কবে পাওয়া যাবে! বোকা ছেলেটি এতক্ষণ পরে, পারতপক্ষে এতদিন পরে,এতকাল পরে এসে হতাশ হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এতদিন পর বোকা ছেলেটি প্রশ্ন করে, ৪ বছরের অনার্স ৮ বছরে শেষ হল, কিন্তু শেষ হল কি করে যদি না সাময়িক সনদ পেয়ে প্রমাণ করতে পারে যে সে একজন গ্র্যাজুয়েট। উত্তর দেবার কেঊ নেই, বোকা ছেলেটির প্রশ্ন শোনারই যে কেউ নেই।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.