পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলী আজ আমি স্বার্থপর রুমের ভিতর ভ্যাপসা গরম। তাই রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এল এলিন। নির্মল বাতাস বইছে, সেই সাথে বেলি ফুলের সুগন্ধ। অপরূপ মনোরম পরিবেশ। লাইটার জ্বালিয়ে সিগারেট ধরাতে যাবে ঠিক তখনই মেয়েটির দিকে চোখ পড়ল।
ছোট্ট একটি শিশুর সাথে খুন-সুটি করছে।
মেয়েটির সাথে কথা বলার লোভ সামলাতে পারল না। কাজিনের বিয়েতে এসেছে এলিন, মেয়েটি হয়তবা তাদের কোন আত্নীয় কিংবা কারো বান্ধবী হবে। সাহস করে এগিয়ে গেল। টুক-টাক কথা হতে থাকল।
মেয়েটির রেসপন্স ভাল।
এলিনঃ চলুন না সামনে থেকে হেঁটে আসি।
মেয়েঃ উঁহু, মা বকবে।
সেই সাথে হাসি, পরিতৃপ্তির হাসি। এলিনকে অপমান করার পরিতৃপ্তি।
মুখের মনোরম হাসিটি যেন তার স্বভাবসিদ্ধ। তার সবকিছুই যেন মনোমুগ্ধকর।
অন্ধকার থেকে উষ্ণ জোরালো বাতাস তাদের মুখের উপর আছড়ে পড়লো। মেয়েটির সাদাসিধে পোশাক আর ধূসর চিন্তা মনে আসতেই একটা ভয় মেশানো উল্লাসে তার অন্তর যেন নেচে উঠল। মেয়েটি তার হাত চিবুকে রাখল।
ছোট্ট গ্রামে গ্রীষ্মের রাত্রির উষ্ণতা আর বিচিত্র গন্ধে বাতাস মুখরিত।
মেয়েটির নাম তখনো অজানা রয়ে গেল। মেয়েটি তার পরিচয় গোপন রেখেই পরদিন চলে গেল।
মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে আনন্দ চিত্তে ঘরে ফিরে এল এলিন। নিজেকে পাখির মত হাল্কা মনে হচ্ছিল।
তা সত্ত্বেও কী যেন একটি পরিবর্তন ঘটেছিল। মেয়েটি নেই, রুমটিকে কেমন যেন ফাঁকা আর শুন্য মনে হচ্ছিল। অথচ মেয়েটি যতক্ষণ ছিল সব কিছুতে প্রাণের ছোঁয়া ছিল। মেয়েটির অস্তিত্ব সর্বত্র, তবুও কেমন যেন শুন্য। এলিনের নাকে তখনও মেয়েটির পারফিউমের গন্ধ লেগে ছিলো।
কথার ফাঁকে ফাঁকে তার ছিঁড়ে ফেলা গাছের পাতাগুলো এখনও ছড়িয়ে আছে, অথচ মেয়েটি নেই। চলে গেছে। এলিনের হৃদয় বেদনায় মোচড় দিয়ে উঠল।
তাড়াতাড়ি একটি সিগারেট ধরিয়ে রুমের ভিতর পায়চারি করতে লাগল। এখন সে কি করবে? এই আকস্মিক আর অপ্রত্যাশিত প্রেমকে সে তাড়াবে কেমন করে? সে এও জানে এর হাত থেকে তার মুক্তি নেই।
সে ভেবেছিল ধূমপান তার যন্ত্রনা কাতর মনকে সুস্থ করে দিবে। কিন্তু তার বদলে তার মানসিক অবস্থা আরো বিষাদঘন হয়ে উঠল।
তার জীবন থেকে মেয়েটি চলে গেল? এতক্ষনে মেয়েটি হয়ত অনেক দূরে চলে গিয়েছে। আচ্ছা তার কথা কি মেয়েটির মনে পড়বে? হয়তোবা মাঝে মধ্যে।
তার স্মৃতিপটে মেয়েটির খুটিনাটি ঘটনা ভেসে উঠতে লাগল।
তার মিষ্টি কণ্ঠস্বর মনে পড়তে লাগল। সুখের অনুভুতিগুলো এখনও যেন তার প্রতিটি শিরায় নেচে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এখন আরেকটি নতুন অনুভুতি অন্য সকল অনুভুতিকে ছাড়িয়ে তাকে উতলা করে তুলছিলো। অদ্ভুত বোধাতীত অনুভুতি মেয়েটি যখন সাথে ছিল তখন সে বুঝতে পারে নি। গতকাল এ ধরণের অনুভুতি ছিল বলে তার আদৌ মনে পড়ছে না।
মেয়েটির সান্নিধ্য তাকে আবিষ্ট করে রেখেছিল।
এলিনের হৃৎপিণ্ডটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। জীবনটা এখন তার কাছে কেমন যেন নীরস আর একঘেয়ে। পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।
সে গতকাল কয়েকবার মেয়েটির নাম জানতে চেয়েছিল।
মেয়েটি প্রতিবারই হেসে বলেছিল, “আমি কে তা আপনার জানবার দরকার কি?”
অদ্ভুত! সে অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠল। তার মুখে মৃদু হাসি, চোখ দুটি আবেগে অশ্রুসজল। মেয়েটির কথাগুলো তার মনে গুন গুন করতে লাগল। তারপর আপন মনে বলে উঠল “রহস্যময়ী নারী”।
চেনা নাই, জানা নাই ঠিকানাও বলে নাই
তবু তারে দুই নয়নে খুঁজিয়া বেড়াই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।