আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যময়ী

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

১। প্রতিদিন সন্ধায় অফিস থেকে ফিরে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানের পাশে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি একটা অজানা অচেনা মেয়েকে। ব্যপারটা আমার কাছে বেশ অবাকই লাগে। এত মানুষ জনের সামনে সেই মেয়ে কেন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে? কি করে সে ওখানে? অনেক প্রশ্ন মনের ভিতর উকি দিতে থাকে। মেয়েটির বেশভুষায় তাকে বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের বলেই মনে হয়েছে।

তাই তার সম্পর্ক এ বিরূপ ধারণা পোষন করাটাও শোভন হবে বলেও মনে হচ্ছিল না। মেয়েটির দিকে যখনই তাকাই তখনই দেখি সে আমার দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে। তার চোখ যে কথা বলে সেটা বোঝাই যায়। কি এক প্রবল আকর্ষনে তার দিকে আবার ফিরে তাকাই। নিজেকে সামলে নেই।

এভাবেই চলছে প্রতিনিয়ত। গত শনিবার সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিনের অভ্যাসবশতই ফিরে তাকালাম সেদিকে যেদিকে মেয়েটি দাড়িয়ে থাকে। কিন্তু তাকে সেখানে দেখলাম না। কেন জানি অস্থির হয়ে উঠলো আমার অবচেতন মন।

আমার চোখ খুজে ফিরছে সেই মেয়েটিকে একবার দেখার জন্য। হঠাৎ খেয়াল করলাম খানিক দূরে মেয়েটা দাঁড়িয়ে। কার সাথে জানি কি একটা বিষয় নিয়ে সমানে ঝগড়া করছে। আমি সেখানে আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলাম নিজের বাসায়। কেন জানি এভাবে থাকতে মন চাইছিল না।

একবার অন্তত মেয়েটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু লোকচক্ষুর ভয়ে বলা হয়ে ঊঠেনি। তাকে একটা প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছা করছিল। তুমি কে আর এখানে প্রতিদিন কেন দাঁড়িয়ে থাকো? আমার মনের আড়ালে তা লুকিয়ে রাখতে হল। ২।

শুক্রবার সকাল ১১টা। সাধারণত ছুটির দিনগুলোয় আমি কোন কাজ হাতে রাখি না। আর তাই ঘুম থেকে উঠতে উঠতে আমার দেরি হয়ে যায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে একটু বারান্দাতে বসলাম খবরের কাগজ পড়ার জন্য। ওখানে যেয়েই অবাক হয়ে গেলাম।

পাশের বিল্ডিং এর ছাদে ওই মেয়েটি হাটাহাটি করছে। আমাকে দেখেই সে এদিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললাম। এভাবে কোন মেয়ে তাকিয়ে থাকে কোন ছেলের দিকে!! তার চোখের ভাষা পড়তে পারি নি। সে আসলে কি চায় তাও বুঝতে পারি নি।

তারপরও কিছু বোঝার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। এবার কেন জানি চুপ করে থাকতে ইচ্ছে হল না। তাকে ইশারায় ডাক দিলাম। সে এতে বেশ লজ্জা পেল। মুখ একবার ফিরিয়ে নিয়ে আবার আমার দিকে ফেরালো।

এর মানে হল সে আমার সাথে কথা বলতে চায়। ৩। শনিবার ১২ টা। কানিজ ফোন দিয়েছে এই অফিস টাইমে। একপাশে সরে গিয়ে মোবাইলে ওর সাথে কথা বললাম।

যেকোন কারণে হোক, তার আজকে মেজাজ খুব খারাপ। কোনভাবেই সে ঠিক করতে পারছে না তা। আর তাই এই অবেলায় ফোন করেছে সে। সাধারণত কানিজ এর মেজাজ কিংবা মন খারাপ থাকলে তাকে মানানো খুব কষ্টকর। তারপরও তার মন ভাল না করা অবধি আমার শান্তি নেই।

তাকে বলে দিলাম লাঞ্চ টাইমে সে যেন থাকে। আজ একসাথে আমরা লাঞ্চ করবো। সময়মত এসে হাজির হল কানিজ। তাকে আজ বেশ হতাশ লাগছে। খাবার এর মেনু বলে দিয়ে তার সাথে কথা বলা চালিয়ে গেলাম।

তার বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু কানিজ এতে রাজি না। আমাদের সম্পর্ক এর আজ প্রায় ৪ বছর হতে চললো। এই ৪ বছরে তার অনেক বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমার কারণে তার পরিবার সম্বন্ধ করতে পারছে না কারো সাথে।

কানিজ এর কথায় আমার হুশ ফিরে এল। অনেক কথা বলছি তার সাথে। তার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছি। হঠাৎ পাশের টেবিলে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি আমার পাশের টেবিলে বসে আছে।

আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। তার সাথে আর একজন ভদ্রমহিলা আছেন। তারা এখানে কি করছে? ৪। এটা আমার কাছে বেশ রহস্যময় মনে হচ্ছে। অফিসে বসে ভাবছিলাম।

কি করে ওই মেয়ের সামনা সামনি হওয়া যায়। এরকম সাতপাচ ভাবতে ভাবতেই মোবাইলে রিং বেজে উঠলো। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সুরেলা কন্ঠের একজন বলে উঠলো - সেঃ হেলো...... মিঃ ......। আমিঃ জি, বলছি সেঃ কেমন আছেন? আমিঃ ভাল। কিন্তু আপনি কে? সেঃ আমাকে আপনি খুব ভালমতই চিনেন।

আমিঃ সরি, পারলাম না চিনতে আপনাকে। সেঃ আমাকে আপনি আমার বাসার মোড়ে প্রতিদিন দেখেন আমিঃ (এবার আমার বুঝতে বাকি রইলো না) ও আচ্ছা। তা আমার নম্বর কি করে পেলেন? আপনি আমাকে কি করে চিনেন? আমি যেখানেই যাই সেখানেই আপনি আমাকে অনুসরণ করেন কেন? কি চান আপনি? সেঃ এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আমিঃ দিতেই হবে আপনাকে আমার প্রশ্নের উত্তর সেঃ আমি আপনাকে অনুসরণ করি সব সময়। কেন করি, এটা আমি বলবো না।

আমিঃ হতবাক হয়ে গেলাম। কিছুই বলছি না দেখে সেই বলল - সেঃ আপনি যেখানেই যাবেন, যেখানেই থাকবেন সব যায়গায় আমাকে পাবেন। এতে কিছু মনে করবেন না যেন। আপনি আমাকে দেখতে পেলেও অন্যরা আমাকে দেখতে পাবে না। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সুরেলা হাসি দিয়ে ফোনটা কেটে দিল মেয়েটা।

রহস্যটা রহস্যই থেকে গেল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।