স্বার্থপরতার নাম যদি হয় চালাকি - থাকতে চাই বোকা, করতে চাই বোকামি। “বোকামন” কখনো বৃদ্ধ, কখনো শিশু আবার কখনো যুবক .... (আমি বোকামনের হয়ে লিখছি ! তাই সাহিত্যের শিল্পগুন-মান হীন পোস্টগুলোর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী)
রাষ্ট্রশাসন বা রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি কে রাজনীতি বলা হয়; রাজনীতির সহজ সংজ্ঞা। একজন খেটে খাওয়া দিনমজুর কে প্রশ্ন করা হল রাজনীতি কি,
সে সম্পর্কে তার উত্তর- “বুঝিনা স্যার, তিনবেলা কয়ডা খাইয়া পইড়া বউ-বাচ্চা লইয়্যা টিইক্যা থাকতে পারলেই হইলো, মূর্খ-সুর্খ আমরা; আফনেরাই ভালো জানেন। এইদল আহে, ঐ দল যায়, কিন্তু আমরা গরীব গরীবই থাহি, সব চোর-বাটপার হইয়্যা গেছে। কারে ভালা কমু”।
উত্তর থেকেই বুঝাই যাচ্ছে, সংজ্ঞা তার জানা নাই, জানবেই বা কী করে! হয়তো তার পক্ষে রাজনীতির তাত্ত্বিক সংজ্ঞা বলার মত জ্ঞান নেই। কিন্তু তার উত্তরের মূলভাব কিন্তু রাজনীতির সংজ্ঞাকে দারুণভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে! অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে, যা ঐ দিনমজুরের “টিইক্যা থাকা” নিশ্চিত করে। এছাড়া রয়েছে শিক্ষা, অন্য চারটি চাহিদা পূরণ করা গেলে শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থার করাটা সহজ হয়ে পরে। এবং এ সকল কিছুর জন্যই প্রয়োজন কর্মসংস্থান। তাহলে যদি বলি, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার নিমিত্তে রাষ্ট্র যে নীতির আলোকে কাজ করে তাকে আমরা রাজনীতি বলতে পারি।
শুধুমাত্র মৌলিক চাহিদা নয় এছাড়া রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বোভেীমত্ব রক্ষা করতে এবং জাতি হিসেবে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করাটাও রাজনীতির অংশ। যাই হোক এ নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু আসলেই কতখানি গণতন্ত্র চর্চা আমরা করছি বা করতে পারছি তা বিলিয়ন ডলার প্রশ্ন!
দলীয় স্বার্থ উদ্ধার থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য চরম দুর্নীতি, লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার, নিজ দলের মতাদর্শ জোরপূর্বক বাস্তবায়ন করার নাম রাজনীতি, এবং সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র কে বলা হচ্ছে গণতন্ত্র। আমাদের দেশের বর্তমান সার্বিক অরাজনীতির রাজনৈতিক সংজ্ঞা।
আমি এজন্যই অরাজনীতি বলছি, কারণ লুটপাটের কর্মকাণ্ড কে কোন ভাবেই রাজনীতি বলা যায় না! প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কী আমাদের দেশের উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কোন ভূমিকা নেই? অবশ্যই আছে! যত ধরনের বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমরা সফল হয়েছি, তা রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে ধরেই এসেছে। সমস্যাটা হচ্ছে কিছু ব্যক্তিগত দ্বিমত কে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মূল মতাদর্শের সাথে সংযুক্ত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই তা হানাহানি এবং হিংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাজনৈতিক পথচলা এবং সুস্থ চর্চা মারত্বকভাবে ব্যাহতই করছে না পাশাপাশি নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি করছে। বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না এবং নতুন উৎপন্ন সমস্যা সামগ্রিকভাবে জাতিকে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে দিন কে দিন। এ সকল কিছুই লুটপাট-কারী ডাকাতদের ডাকাতি করে যাওয়ার পথ মসৃণ করে দিচ্ছে।
তাহলে সমস্যা মোকাবেলা এবং সমাধান করা সম্ভবপর নয়! সমাধানের পদ্ধতি লুকায়িত থাকে সমস্যা সৃষ্টির অন্তরালে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে প্রধান দুটি দল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে দল দুটির মতাদর্শে খুব বেশী পার্থক্য নেই। অতীতের কর্মকাণ্ডের জের ধরে ব্যক্তি-পর্যায়ের হিংসা-বিদ্বেষ এবং তা পর্যায়ক্রমিক ভাবে পুরো দলীয় বিদ্বেষে পরিণত হয়। ফলাফল চোখের সামনেই আমরা দেখতে পাচ্ছি।
নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতি ভোটের হিসেবে মানুষ গুনে, তাদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন গঠাতে চায় না। এছাড়াও রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি ব্যাপকহারে বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক।
রাজনীতি করা একটি উত্তম মহৎ নেশা। যদিও তা পরবর্তীতে পেশায় পরিণত হয় কিন্তু প্রকৃত রাজনৈতিক ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদ কখনই মানুষের সেবা করার নেশা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় না। জী এককথায় জনগণের সেবা করাই রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদের মূল লক্ষ ও উদ্দেশ্য।
আমাদের রাজনীতিতে অনেক এমন ব্যক্তিকে আমরা পেয়েছিলাম, যাদের আজীবন কর্মকান্ডে একশতভাগ রাজনীতি করার মন-মানসিকতা বিদ্যমান ছিল। যদিও সংখ্যার বিচারে নিতান্তই কম! অনেকের ক্ষেত্রে দলীয় বিদ্বেষ ও একক ক্ষমতার অধীনে কাজ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা কঠিন।
আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চর্চা করছে না, তারা কীভাবে গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক হবে! এক্ষেত্রে মাইনাস-টু ফর্মুলার কথা অনেকেই বলতে পারেন। যদিও দুটি দলের দীর্ঘ সময়ের রাজনীতি এবং বাস্তবিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা আমাকে এই ফর্মুলার সাথে একমত হতে দেয় না। তাদের মাইনাস করতে হবে কেন, মাথাব্যথার চিকিৎসায় কী মাথা কেটে ফেলতে হবে! উভয়দলের মাননীয় প্রধান নেত্রীদের কাছে অনুরোধ আপনাদের আশেপাশে থাকা চাটার দলকে মাইনাস করুন।
নিজ কানে, নিজ চোখে জনগণ কে দেখুন শুনুন। চাটার দল কোন মতাদর্শে বিশ্বাস করে না। এদের পাশে রেখে আপনাদের দলের অবনতি ছাড়া উন্নতি হবে না কখনো। ১৬ কোটি মানুষের আন্তরিক ভালোবাসা পেতে ব্যক্তিগত হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিশোধ স্পৃহা ভুলে যান। কারণ শেষ পর্যন্ত মানুষের ভালোবাসাই টিকে থাকবে।
যেমনটি টিকে আছে বঙ্গবন্ধু প্রতি ভালোবাসা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি ভালোবাসায়।
ব্লগে, ফেসবুকে, পত্রিকায়, চায়ের আড্ডায় আমার তরুণ ভাই বন্ধুদের দেখি রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে তুমুল সমালোচনা করতে। তা কখনো গালাগালির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আমরা সবাই মানুষ, কেউ ফেরেশতা নই। জঘন্য কার্যকলাপে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অনেক বাবা–মার ইচ্ছে নেই তার সন্তান রাজনীতি করুক। কাহারো কাছে রাজনীতি করা মানেই নোংরামি। এভাবেই আমাদের মেধাবী তরুণ সমাজ, কর্মঠ যুব সমাজ রাজনীতির প্রাঙ্গণ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছে। যারা রাজনীতিতে প্রবেশ করছে তাদের অসুস্থ রাজনীতি কলুষিত করে ফেলছে। পারা-মহল্লায়, ওয়ার্ড, থানা জেলা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় কমিটিগুলোর পদে আসীন তরুণদের অবস্থা কারোই অজানা নয়।
ছাত্র রাজনীতির নাম করে ছাত্রদের অছাত্রে পরিণত করা হচ্ছে। একটি মহল যেন চাচ্ছেই নোংরা পরিবেশ তৈরি করে মেধাবী রুচিশীল যুব-সমাজকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে।
আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অথবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করতেই পারি। কোন আদর্শইতো বলেনা দুর্নীতি করতে, পথ দেখায়নি দেশের অমঙ্গল সাধন করতে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে, যে যার আদর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য রাজনীতিতে যোগদান করাটা যুব সমাজের জন্য আবশ্যিক।
তরুণের শক্তি ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র; শুধু সমালোচনা নয় প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করে নিজেদের শক্তিকে আরও বেশী শক্তিশালী করতে হবে। মেধাবী তরুণ সমাজ তাদের মতামতকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে এর বিকল্প নেই। রাজনীতি বুঝা হয়তো সহজ তবে প্রত্যক্ষ রাজনীতির মাঠ অনেক বিস্তৃত … একদমই সহজ নয় কিন্তু! আমরা আদর্শ নিয়ে ঝগড়া না করে, বাস্তবায়নে উদ্যোগী ভূমিকা রাখি। এ সকল বিষয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে, কোন মতটি গ্রহণযোগ্য তা জনতাই ঠিক করুক।
আমাদের জনগণের অধিকাংশ সমস্যার সমাধান সুস্থ, উদার, পরমত সহিষ্ণু রাজনৈতিক চর্চা এবং সঠিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
কারণ গণতন্ত্রের বিকল্প উন্নততর গণতন্ত্র।
পৃথিবীতে আমরা যে মহান রাজনৈতিক নেতাদের আদর্শ নিয়ে আলোচনা করি; সেই আদর্শ গড়তে তাদের পুরো জীবনকাল ব্যয় করেছে। সৎ, নির্ভীক, দূরদর্শী, জন-দরদী নেতৃত্বই পারে আমাদের বাংলাদেশ কে উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে। কবি যে কাজের ছেলেদের কথা বলে গিয়েছেন তাদের আমরা পেয়েছিলাম বাংলাদেশ কে স্বাধীন করতে। হয়তো আবারো পাবো, আমরা তো তাদেরই উত্তরসূরি।
জনগণের চাহিদা খুব বেশী নয়, তবে তাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা অসামান্য। তরুণ সমাজ রাজনীতিতে আসুন। জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসাকে আপন করে নিন। এই প্রত্যাশায় সবাইকে ধন্যবাদ।
(আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পোস্ট বড় হয়ে যাবে।
যা সাম্প্রতিক পাঠক হারাবে, তাই আপা:তত ক্ষান্ত। আমার লেখায় কোন মতাদর্শের প্রতি অবজ্ঞা বা হেয় করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলনা। তারপরও যদি কেও মনক্ষুন্ন হন তবে দু:খিত। আমার ফোকাসে সঙ্গত কারণেই প্রধান দুটি দল নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনারা নির্ধিদ্বায় পোস্টে উল্লেখিত যেকোনো বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন অবশ্যই গঠনমূলক ও শালীন ভাষায়।
আমাদের বাংলাভাষা কিন্তু যথেষ্ট সমৃদ্ধ বিশেষ করে ব্যক্তি আক্রমণ না করলেই আমি অনেক বেশী কৃতজ্ঞ থাকবো)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।