আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি মারাত্মক ভুল কর্মপন্থা : দলিল নয়, এমন বিষয়কে দলিল বানানো

হ্যা আমি সেই সত্যবাদীকে সত্যবাদী মনে করি মূল লেখা বাংলার গর্ব বিখ্যাত হাদিসবেত্তা মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক এর লেখা থেকে....................................... শরীয়তের দলিল কী কী এবং কোন প্রকারের দলিল দ্বারা কী বিধান প্রমাণিত হয় তা দ্বীন ও শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এর ফয়সালা হতে পারে এবং হয়ে আছে। শরীয়তের দলিল-প্রমাণ কয়টি ও কী কী-এ সম্পর্কে কমবেশি সকল মুসলমান অবগত আছেন। কিন্তু আহলে বিদআত ও আহলে বাতিল সব সময় নিজেদের পক্ষ থেকে নতুন নতুন দলিল উদ্ভাবন করতে থাকে। যেন নিজেদের বিদআত ও বাতিল বিষয়ের পক্ষে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনে বেগ পেতে না হয়।

আজকাল অজ্ঞতার এত ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে যে, ভালো ভালো শিক্ষিত মানুষকে আশ্চর্য বিভ্রান্তির শিকার হতে দেখা যায়। যেমন কোনো রেওয়ায়েতকে হাদীস হিসেবে কিংবা কোনো নবীর ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করার জন্য শুধু এটুকুই যথেষ্ট মনে করা হয় যে, তা কোনো গল্পকারের মুখে শুনেছেন অথবা কোনো বইয়ে পেয়েছেন। এতটুকু খোঁজখবর নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না যে, ঐ রেওয়ায়েত বা ঘটনাটি ইলমে হাদীসের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে আছে কি না, তার কোনো সনদ আছে কি না; সনদ থাকলে তা গ্রহণযোগ্য কি না। নিজে তাহকীক করতে না পারলে কমপক্ষে এতটুকু খোঁজ নেওয়া তো অতি জরুরি যে, ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য মনে করা হয় এমন কোনো আলিম সেটাকে গ্রহণযোগ্য ও বর্ণনার উপযোগী বলেছেন কি না। কোনো প্রকার তাহকীক ছাড়া শুধু কোনো কিতাব বা রিসালায় আছে বলেই তা প্রচারের চেষ্টা করা কোনো বিবেকবান ও দায়িত্বশীল মানুষের কাজ হওয়া উচিত নয়।

শরীয়তের নিয়ম এই যে, কোনো রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য ইলমে রেওয়ায়েত-বিশেষজ্ঞদের নিকট তা স্বীকৃত ও সমাদৃত হওয়া জরুরি। কমপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হতে হবে। কেবল সাধারণ মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি ও প্রচলনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তেমনি কোনো দায়িত্বজ্ঞানহীন লেখকের কিংবা সিহহতের শর্ত করেননি এমন কোনো লেখকের উদ্ধৃতি ও সনদবিহীন বর্ণনাও নির্ভরযোগ্য নয়। অধিকাংশ মনগড়া ও মওযূ রেওয়ায়েত তো কোনো না কোনো বইয়েই লেখা থাকে শুধু এ কারণেই কি তা গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে? নাউযুবিল্লাহ।

মনে রাখা উচিত, কোনো বে-সনদ রেওয়ায়েত সনদহীন হওয়ার পাশাপাশি যদি মুনকারও হয় এবং তার মতনে শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর কিছু থাকে, কোনো মাসুম ব্যক্তির মাকাম ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণকারী কোনো বিষয় তাতে থাকে তাহলে তা ওয়াজ-নসীহতে বর্ণনা করা কিংবা আমলের জন্য লিখিত কিতাবসমূহে লিখে দেওয়া আরো মারাত্মক গুনাহ। আলকাউসারের কোনো এক সংখ্যায় এ ধরনের বে-সনদ মনগড়া ও আপত্তিকর একটি রেওয়ায়েতকে বাতিল ও ভিত্তিহীন বলা হয়েছিল। আর মুনকার হওয়ার কারণে বলা হয়েছিল যে, এ ধরনের আকীদা পোষণ করা জায়েয নয়। এক ভাই ফোন করে বললেন, ‘ঐ রেওয়ায়েত বর্ণনা করা বা তার আকীদা পোষণ করা নাজায়েয হল কীভাবে এ তো অমুক অমুক ব্যক্তি উল্লেখ করেছেন!’ অথচ ঐ অমুক অমুক ব্যক্তি না ইলমে রেওয়ায়েতের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন, না নিজেদের কিতাবে প্রতিটি রেওয়ায়েত যাচাই-বাছাই করে শুধু গ্রহণযোগ্য রেওয়ায়েত উল্লেখ করার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এজন্য ইলমে রেওয়ায়েতের বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতিতে যদি কোনো রেওয়ায়েতকে ভিত্তিহীন লেখা হয় এবং এর বিপরীতে ইলমে রেওয়ায়েতের অন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির সিদ্ধান্ত না থাকে তবে অমুক অমুক ব্যক্তি তা লিখেছে-শুধু এ কথা বলে তা বর্জন করা ভুল।

হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. ‘আততাকাশশুফ’-এ বলেছেন, এই রেওয়ায়েত ভিত্তিহীন হওয়ার বিষয়টি যেহেতু অমুক অমুক ব্যক্তির জানা ছিল না তাই তারা মাজূর হবেন। কিন্তু আহলে ফনের উদ্ধৃতিতে সঠিক বিষয়টি তোমাদের সামনে আসার পর তোমরা আর মাজূর গণ্য হবে না। তোমাদের জন্য এখন এ বিষয়ে অমুক অমুকের অনুসরণ করা জায়েয নয়। হাকীমুল উম্মতের এই কথা আমাদের সব সময় স্মরণ রাখা উচিত। আলকাউসারে যাকারিয়া আ.-এর যে ঘটনা সম্পর্কে লেখা হয়েছিল তা একটি ইসরাইলী রেওয়ায়েত।

উপরন্তু কোনো কোনো কেচ্ছাকার তার সাথে এ কথাও যোগ করেছে যে,-নাউযুবিল্লাহ-যাকারিয়া আ. যেহেতু আল্লাহ তাআলার পরিবর্তে গাছের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন এজন্য আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। এরপর করাত চলার সময় যখন তিনি উহ! বলতে লাগলেন তখন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করলেন, যদি তুমি উহ বল নবুওয়তের তালিকা থেকে তোমার নাম বাদ দেওয়া হবে!! নাউযুবিল্লাহ। এই বর্ধিত অংশটুকু কোনো ইসরাইলী রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন হল, এই মনগড়া ও ভিত্তিহীন কথা বিশ্বাস করাকে (আকীদা পোষণ করা) যদি নাজায়েয বলা হয় তবে কি এতেও আপনি আপত্তি করবেন? আফসোস যে, এক মুরববী চিঠি লিখেছেন, ‘‘পান্দে নামা’’র অমুক পংক্তিতে তো এই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত আছে। আর বাংলা অনুবাদক এর টীকায় সে ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

আফসোসের বিষয় এই যে, তিনি পান্দেনামার ইশারাকেও সহীহ-যয়ীফ নির্ণয়ের মানদ বানিয়ে নিয়েছেন। অথচ তিনি বা অনুবাদক কবির ইশারা যথার্থ অনুধাবন করতে পেরেছেন-এটাও তো অপরিহার্য নয়। এ কথা কার জানা নেই যে, আত্তার রাহ.-এর কিতাব থেকে উপদেশ-নসীহত গ্রহণ করা যায়, কিন্তু শুধু তাঁর কিতাবে উল্লেখ থাকার কারণে কোনো রেওয়ায়েতকে সহীহ বলা যায় না। এটা নির্ণয়ের জন্য ইলমে হাদীসের আলিমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ‘তালীমুদ্দীন’ কিতাবে উল্লেখিত হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ.-এর সাবধান বাণী গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য রাখা উচিত।

আমরা যদি এই নির্দেশনা অনুযায়ী আমল না করি তাহলে আমাদের ও আহলে বিদআতের মাঝে কী পার্থক্য থাকবে? শায়খুল ইসলাম হযরত মাদানী রাহ.-এর এই কথাও সোনার হরফে লিখে রাখার মতো। একটি দীর্ঘ চিঠিতে তিনি লিখেছেন-মাসআলার ক্ষেত্রে ভক্তিকে স্থান দেওয়া উচিত নয়। ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আসলাফের পদাঙ্ক অনুসরণের তাওফীক দান করুন, যারা ছিলেন হেদায়েতপ্রাপ্ত, সুন্নাহর অনুসারী ও তাহকীকপ্রেমী। আবু আবদুর রশীদ মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.