এই লেখার কারণ তসলিমার উক্তি "আমিও জনপ্রিয় লেখক ছিলাম এককালে" - নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা। জনপ্রিয়তা বলতে উনি কি বোঝেন, কেনই বা তিনি মনে করছেন নিজেকে প্রাক্তন জনপ্রিয় আর কেনইবা হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয়তাকে পাত্তা দিতে চাচ্ছেননা। আসলে জনপ্রিয়তা কি?
তসলিমার হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে কটুক্তির জবাব দেবার জন্য লেখা আমার ব্লগ ২ দিনে এখন পর্যন্ত ৬৬৭ বার পড়া হয়েছে, ৫ জনের ভাল লেগেছে, ১৮ জন এসে কমেন্ট করে গেছেন। তাই বলে কি আমি জনপ্রিয় হয়ে গেলাম এই লেখা লিখে? না, একটা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করাতে বেশি সংখ্যক পাঠক এটি পড়েন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু, এটাতে আমার জনপ্রিয়তা বা পাঠকপ্রিয়তা বাড়েনি বা আমার আরো লেখা পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি।
আমার ইতিহাস, রাজনীতি, জোতির্বিজ্ঞান বা জনসচেতনতামূলক লেখাগুলোর কাউন্টার আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে।
উদাহরণ হিসেবে আপাত দৃষ্টিতে বলতে পারি, কোন একটা বিষয়ে কোন লেখার পরে সে বিষয়ে আগ্রহীরা সেটার শিরোনাম দেখে পড়ার সিদ্ধান্ত নিবে, যেহেতু তারা লেখককে চেনেনা। আর যদি চিনে থাকে এবং তার লেখার ধরন সম্পর্কে পরিচিত থাকে, তবে তার লেখা পড়তে চাইবে, যেটাকে আমরা পাঠকপ্রিয়তা বলব। এই পাঠকপ্রিয়তা যত বাড়বে, ততই জনপ্রিয়তা বাড়বে। এখন, একটি লেখা প্রকাশ হবার সাথে সাথেই যে সবার ভাল লাগতে হবে, না লাগলে যে সেটা মানোত্তীর্ণ হয়নি, তা নয়।
অনেক শিল্পকর্ম বহু বছর পড়ে জনপ্রিয়তা পাবার বহু উদাহরণ আছে।
এখন তসলিমার লেখা এই কয়েকদিনে অনেকে পড়েছেন। আগেও এইরকম ভাবে অনেক পাঠক পড়েছিলেন। কিন্তু, কেন? কারণ, তসলিমা বিখ্যাত লোকের বিরুদ্ধে বাজে কথা রটিয়েছেন, চটি রচনার মত লিখেছেন, ধর্মের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করেছেন। এইসব কারণে তার নিন্দা করা হলে পাঠক তার বিচার করার আগে নিজে একবার পড়ে দেখতে চাইবে।
এইটুকুই। এতে ব্লগের ভাষায়, কাউন্টার বাড়লেও জনপ্রিয়তা বাড়া হয়না। তসলিমা কোনকালেই জনপ্রিয় ছিলেননা।
অন্যদিকে হুমায়ুন আহমেদ এর পাঠকরা উনার লেখা পড়ার জন্যই পড়তেন, উনার বিচার করার জন্য নয় (যেটা তসলিমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, পাঠক তসলিমার বিচার করার জন্যই পড়েন)। হুমায়ুন আহমেদের লেখা ভাল লাগতো বলেই পড়তেন।
এখানে আছে অকৃত্রিম ভালবাসা তার লেখার প্রতি, যেটা তসলিমা কোনদিন পান নাই, এবং হয়ত কোনদিন পাবেনোনা।
এখানে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করার মত। আমরা সাধারণেরা ব্লগ লিখি। এটা তসলিমার "উঁচু মানের সাহিত্য সৃষ্টির প্রয়াস" থেকে নয়। লিখতে ভাল লাগে বলেই লিখি।
এই ব্লগ সল্পর্কে এখনো তসলিমার কোন কমেন্ট না পেলেও একদিন আসবে। এই ব্লগের বিরুদ্ধে অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন। এই কিছুদিন আগেও লোকজন বলত, "আমরা বাংগালিরা নাকি ফেসবুক-ব্লগে ঝড় তুলি"। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে পোলাপান যে রাস্তা অবরোধ করে সেরকম ঝড় তুলল মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য, এটার থেকে ফেসবুকের ঝড় ভাল ছিল না? আর, এখনকার ফেসবুক-ব্লগের আলোচ্য বিষয় দিয়েই ঠিক হয় পত্রিকাতে কি নিয়ে লেখা হবে, টকশোতে কি নিয়ে আলোচনা হবে। সুতরাং নাক উঁচু করলেই উঁচুতে উঠে যাওয়া যায়না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।