আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জনপ্রিয়তার অগ্নি পরীক্ষায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি

রাত পোহালেই ৯৭ উপজেলায় ভোট। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও এতে অংশ নিচ্ছেন সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও পৃথকভাবে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রথম সারির সব রাজনৈতিক দলও নির্বাচনী মাঠে। ফলে এ নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূলে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি নির্ধারণ সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য এ নির্বাচন একটি অগি্নপরীক্ষা বলে মনে করছেন তারা।

অবশ্য সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান দুই দলও এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও দল সমর্থিত প্রার্থীকে জেতানোর সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যদিও তারা এখনো পর্যন্ত সব উপজেলায় একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তার পরও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে। এতে যেমন প্রার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে তেমনি ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিধিও ছোট হয়ে আসছে। তার পরও তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কোনো কোনো দল মনোনয়ন দিচ্ছে। এটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।

তবে গণতন্ত্রচর্চায় জাতীয় নির্বাচনে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সুষ্ঠু ভোট হলে তৃণমূলে দুই দলের জনপ্রিয়তা যাচাই হবে বলেও মনে করেন তিনি। জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। দেশে-বিদেশে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে উপজেলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। অন্যদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৫ ভাগ ভোট পড়েছে_ এমনটি প্রমাণ করতে চায় বিএনপি।

জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এ নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনের সাংগঠনিক পথচলা। উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এরই মধ্যে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কথা মাথায় রেখে এবার উপজেলা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্য কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করি, অধিকাংশ উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হবে। দলের নীতিনির্ধারক মহল উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং এলাকায় জনপ্রিয় নেতাদের সমর্থন করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়েই শুরু হবে সারা দেশে তৃণমূল পর্যন্ত কাউন্সিল করে দলকে আরও গতিশীল করার অভিযান।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চায় দলটি। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ নিয়ে আশঙ্কা করছেন তারা। দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিদিন কেন্দ্রে র্যাব, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা প্রচার-প্রচারণায় নানাভাবে বাধার অভিযোগ আসছে।

এদিকে স্থানীয় নেতাদের পরামর্শে একক প্রার্থী দেওয়া নিয়েও হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এরই মধ্যে অন্তত ৬৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, এখনো হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে উপজেলায় অংশ নেওয়া প্রার্থীরা অনেকটা গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রকাশ্যে এলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের বাধানিষেধ আসছে।

তার পরও নির্বাচন মোটামুটিভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ হলে দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

এদিকে খুলনা বিভাগে উপজেলা নির্বাচন বয়কটের হুমকি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের এ অবস্থানের কথা জানান। তরিকুলের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মাঠপর্যায়ে একক প্রার্থী দেওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, মাঠপর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অজস মামলা। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ঠিকমতো প্রচারণাও চালাতে পারেননি। তাহলে কীভাবে আমরা বলতে পারি, এ নির্বাচনে প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তা যাচাই করা যাবে। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন।

হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে প্রার্থীরা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতেও ভয় পাচ্ছেন। যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লা বুলু জানান, তৃণমূলে যৌথবাহিনীর হামলার আশঙ্কায় প্রার্থীরা সঠিকভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। আমরা সরকারকে বলব, তৃণমূলে জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চাইলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.