কিছু না।
পুলক ভাইয়ের ছেড়া স্যান্ডেল
ইদানিং পুলক ভাই এর আমুল পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে । বেশ ফিটফাট, ক্লিন শেভড । একটা এক্সিকিউটিভ এক্সিকিউটিভ ভাব । বিষয়টা আমাদের বেশ চিন্তার মধ্যে ফেলে দিলো ।
“ভাই, কি হইছে আপনার?” নির্ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম ।
“কি আর হবে । ”
“না ভাই । এই ফরমাল গেট আপ । ফরমাল চলাফেরা ! ’’
“ হা হা হা এই কথা ।
শোন, এইটা আব্বার শার্ট । তাই ইন করে নিলাম । ”
“ আর সু ? ”
“এই কাহিনী তো আরো মারাত্মক । বড় ভাইরা সু পরলে মনে করবি স্যান্ডেল ছিড়ে গেছে । ”
কথায় যুক্তি আছে, তাই আর কথা বাড়ালাম না ।
আমি বাবলু আর জুয়েল বসে আছি পুলক ভাইয়ের পাশে । কেএফসি তে (কামাল ফুড কর্নার) বসে আমাদের নিয়মিত আড্ডা চলছে । এর মাঝে আমাদের সাথে যোগ দিলো জুলকারনাইন মেহদী । এই মিছকা শয়তানের একটু বর্ননা দেয়া দরকার । উদ্ভট এর গত সংখ্যায় তার আইডিয়া ছাপা হইছে বলে এখন হাওয়ায় উড়ছে ।
সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে উদ্ভট এর মতো নাকি ফান ম্যাগাজিন হয়না । আর উদ্ভট সম্পাদকদের তো মহামানব বানিয়ে ছাড়ছে । নারী মহলে জুলকারনাইন মেহদী একটা বিশেষ নাম । এই নাম শুনলে নাকি মেয়েদের রাতের ঘুম হারাম ! তনিশা নামে জনৈকার সাথে তার ইদানিং নাকি বেশ ভাব । এই কথা শুনে তার পাড়ার অসংখ্যা রমনীর নেত্রকোনা জলে টলমল করছে ।
জগতে এমন কোন কুকাম নাই যা এই গুনধর মেহদী করে নাই । সেদিকে আর না যাই । মেহদী এসেই বললো “ আরে পুলক ভাই, একদম জামাই বাবু । বাহ, কেয়া বাত হ্যায় । কাহিনী কি ?”
পুলক ভাই রেগে গিয়ে বললেন “ মেহদী, তোরে ফাসিঁর মন্ঞে নিয়া জুতাপেটা করা উচিত ।
সব কিছুতেই ফাজলামো । ”
“ভাই ফাসিঁর মন্ঞে নেযার আগে আমার আখেরী ইচ্ছা কি পুরন হবে? ”
“বল তোর আখেরী ইচ্ছা কি?”
“ভাই এই বাবু সাঁজের কাহিনী কি?”
“ফাজিলের ফাজিল,বদের বদ । বান্দর, কান ধর”
“ভাই এই ধরলাম । তবু কাহিনী কন”
জুয়েল বললো “ভাই এতো করে যাতে বলছে, বলেই দেন ”
“পুলক ভাই প্লিজ, বলেন । ” বাবলুও যোগ করলো ।
আসলে এতক্ষন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম পুলক ভাইকে খোঁচা মারার । আমাদের উদ্দেশ্য আংশিক সফল । পুলক ভাই বলতে শুরু করলেন “ জুতা বিষর্জনের কাহিনী জানিস ?”
বাবলু বললো “ভাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জুতা আবিষ্কারের কাহিনী শুনেছি। কিন্তু জুতা বিসর্জনের কাহিনী তো নতুন । মজার তো ।
”
“আমার স্যান্ডেল ছিড়ে যাওয়ার পর গেলাম মুচির কাছে । দেখি সে মুচকি হাসছে । আমি জিগ্ঞেস করলাম ‘মামা কি হইছে’ । সে বললো, মামা এই স্যান্ডেল তো আপনার কাছে টাকা পায় । আমি বললাম , মানে ? ।
সে বললো ,‘মামা এই স্যান্ডেল আমি সাতবার সেলাই করছি । আর কতো । এবার রেহাই দেন । ’ আমি বললাম ‘মামা লাস্ট টাইম । ’ সে তখন আমার স্যান্ডেল ঠিক করে দিল ।
আমি র্ওনা হলাম । কিন্তু পথিমধ্যে দেখি আমার পায়ে কেমন জানি ঠান্ডা বাতাস লাগে । হায় খোদা, এবার এমন ভাবে ছিড়লো যে সেলাই করারও সুযোগ নাই । কি আর করা । হালকা অন্ধকার দেখে একটা জায়গায় দাড়ালাম ।
খুব কায়দা করে পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম আর পা থেকে খুলে ফেললাম স্যান্ডেল । এমন ভাব করলাম,আমার ফোন আসছে তাই দাড়ালাম। তারপর চলে গেলাম বাসায় । এই হল আমার স্যান্ডেল বিসর্জনের কাহিনী । ” বলেই চুপ হয়ে রইলেন ।
আমরা সবাই পুলক ভাইয়ের স্যান্ডেল বিসর্জনে বেশ মর্মাহত । সান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে সবাই চুপচাপ বসে আছি । পুলক ভাই বললেন, ‘আজ আর ভালো লাগছেনা । আমি ফুটলাম । ’ এই বলে বলে হাটা শুরু করলেন ।
এদিকে দেখি মেহদী মুচকি হাসছে । “কি রে মেহদী, কি হইছে?” বাবলু বেশ রেগে বললো । এতে দেখি মেহদীর হাসির মাত্রা আরো বেড়ে গেল । জুয়েল বললো “ ওই ফাজিল, কি হইছে? হাসছ কেন” । “ ভাই সে এক লম্বা কাহিনি ।
ইটস এ লং হিসটোরি । ”
নিরবতা ভেঙ্গে আমি বললাম “ লং হিস্ট্রি শর্ট করে বল । ”
“সেদিন বিকেলে পুলক ভাইয়ের এক বন্ধু এল । বেশ আড্ডা হল উনার সাথে । রাত তখন সাড়ে আটটার মত ।
উনি বললেন,চল আজ ভালোমন্দ কিছু খাই । যেই বলা সেই কাজ । গিয়ে ঢুকলেন একটা কমিউনিটি সেন্টারে । খাওয়ার এক পর্যায়ে আমাদের পাশে বসা এক লোক পুলক ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না । পুলক ভাইয়ের তো অবস্থা ‘ছেড়ে দে মা কেদে বাচি’ ।
উনার বন্ধু বললো “পুলক আঙ্কেলের সাথে পরিচিত হয়ে নে । আঙ্কেল, ও পুলক । বরের খালাতো ভাইয়ের বন্ধু । ” শুনে আঙ্কেল বললেন ‘ দেখ দেখি বাবা কি কান্ড । যা হোক, পরিচিত হয়ে ভালো হল ।
” খাওয়া শেষে আমরা বের হলাম । পুলক ভাই উনার বন্ধুকে বললেন ‘ আঙ্কেল বেশ কিছুক্ষন আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো । ” “ব্যাটা বেকুব, আগে কইবি না । এই স্যান্ডেল নিয়ে কেউ বিয়েতে যায় । ”
এখন আমাদের প্রানপ্রিয় পুলক ভাই বেশ ফিটফাট চলেন ।
”
সেদিন বিকেলে পুলক ভাই স্টেডিয়াম গিয়েছিলেন
১
“একটা টি’শার্ট এর দাম কত হবে ? ” পুলক ভাই জিজ্ঞেস করলেন ।
“১২০০ টাকা । ” কোন ভাবাবেগ ছাড়াই বলে দিলাম ।
“ ফাজিলের ফাজিল । থাপড়াইয়া গালের দাঁত একটাও ফেলবো না ।
তবে এমন অবস্থা করবো যাতে দাঁত রাখতেও পারবি না, ফেলতেও পারবি না । ”
“ভাই কই থেইকা কিনবেন, সেটাই ব্যাপার । দাম ১২০০ ও হইতে পারে আবার ৮০ টাকাও হইতে পারে । ”
“সেটা বল । বাংলাদেশ টিমের টি’শার্ট কি এই দামে পাওয়া যাবে ।
”
’টাইম ওয়েস্ট’, ক্রিকেট বিষয়ে এমন হিটলারি মনোভাবের লালনকারি পুলক ভাই বাংলাদেশ দলের টি’শার্টের দাম জিজ্ঞেস করছে ! আমরা বেশ বিস্মিত ।
বাবলু বললো “ ভাই, টি-২০ ম্যাচ কয় ওভারে হয় এসব প্রশ্ন ফেলে সরাসরি টি’শার্ট এর দাম, কাহিনি কি ? ”
জুয়েল দারুন এক সুযোগ নিলো “ ভাই, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পরীক্ষায় না ক্রিকেট বলের ওজন লিখেছিলেন আধা কেজি । ”
আমাদের প্রায় পৌনে এক গ্লাস হাসির শেষে পুলক ভাই থমথমে মেজাজে বললেন “ আপনাদের জোকস শেষ হলে এবার কাজের কথায় আসি”
“জি ভাই, টি-20 ম্যাচে এক ওভারে ২৭ বল হয় । বল এর ওজন কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ কেজি । আর কি জানতে চান?” বাবলু রসিকতা করেই বললো ।
“ এত কিছু জানতে হবেনা । শুধু বল কম দামে টি-শার্ট কোথায় পাবো ?”
“ হকার্স মার্কেট”
“চল, কিনে আনি”
“ জ্বি ভাই, চলেন”
সবাই রওনা দিলাম হকার্স মার্কেটের দিকে রওনা হলাম । বেশ খোঁজার পর পুলক ভাইয়ের সাইজের একটা টি-শার্ট মিললো । পুলক ভাইকে বেশ আনন্দিত মনে হল । তিনি এবিপি হোটেলে গিয়ে আমাদের বললেন “মন বেশ ভালো ।
তোরা যা খুশি খেতে পারিস”
টেকনিক্যালি কম খরছে টি-শার্টের আকিকা দেয়ার যে গভীর ষড়যন্ত্র পুলক ভাই করেছেন তা সহজেই ধরে ফেলেছি । কিন্তু আমরা তিন উচ্চ শ্রেনীর খাদকের কাছে খাবার যাই হোক সেটা গলদগর্ম করাই প্রধান কর্তব্য । ফলে মাত্র ৮০ টাকার টি-শার্টের জন্য আকিকা বাবদ পুলক ভাইকে গুনতে হল ১৮২ টাকা । মাথায় হাত পুলক ভাইয়ের ।
হঠাৎ হঠাৎ পুলক ভাইয়ের এমন আচরনে আমরা বিস্মিত হওয়া ছেড়ে দিয়েছি ।
ক্রিকেট নিয়ে পুলক ভাইয়ের এমন উঠে পড়ে লাগার কাহিনি তাই আমাদের তেমন আর কৌতুহলি করে তুললো না । যা হবার হবে । তবে অবাক লাগলো যখন তিনি রাতে ফোন করে বললেন “স্টেডিয়াম যাব , যাবি ? ”
“কনসার্ট আছে নাকি?”
“না । খেলা দেখতে”
“মানে”
“বাংলাদেশ পাকিস্তান ম্যাচ”
“ওকে”
“টিকেট কোথায় পাবো”
“ভাই টিকেট ছাড়াও যাওয়া যাবে”
“তাই নাকি ! কেমনে?”
“ দেয়াল বেয়ে উঠতে হবে । কিন্তু আপনার এই সাইজ নিয়ে সেই রিক্স নেয়া ঠিক হবে না ।
বল বয় হওয়া যায় । যদিও এই বয়সে আপনার সাথে ঠিক বল বয় যায় না । ”
ফাজলামো করিস । থাপড়াইয়া গালের দাঁত ফালায়া দিমু ”
ভাই সরি । ভাই হোমড়া চোমড়াদের সাথে তো আপনার এখন বেশ উঠাবসা ।
তাদের থেকে মাগনা টিকেট পেতে পারেন”
“না না টিকেট কিনবো । সকালে আমার থেকে টাকা নিয়া দুইটা টিকেট কিনে নিস । ”
“ভাই জুয়েল বাবলু ওরাও যাবে । তাদের ব্যাপারটা”
“যা যা ,চারটা কিনে নিস”
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, খুশির খবর জানিয়ে দিলাম বাবলু আর জুয়েলকে । বাবলু বেশ খুশি.মাগনা টিকেট পাওয়াতে ।
বিপত্তি হল জুয়েলের । হেলবেশিয়ায় তার ৩১তম ফার্স্ট ডেট । বেচারা পড়লো ঝামেলায় । একদিকে পুলক ভাইয়ের আদেশ শিরোধার্য , অন্যদিকে ফার্স্ট ডেট ।
২
আমরা স্টেডিয়ামে পৌছালাম খেলা শুরুর মিনিট দশেক পর ।
বিগত ঘন্টাখানেক সময়ের একটু বর্ননা দেয়া দরকার । আগে থেকে প্ল্যান ছিলো জিইসি থেকে সবাই একসাথে যাবো । জিইসি এসে দেখি পুলক ভাই বিলবোর্ড সমান দুইটা প্লাকার্ড নিয়ে হাজির । একটাতে লেখা “আমরা বাঘ” আরেকটাতে লেখা “বুমবুম আফ্রিদি” । পুলক ভাইয়ের অবস্থা ‘যেদিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা’ প্রবাদকে রিমিক্স করতে বাধ্য করলো ।
নতুন প্রবাদ “ রেইনকোট ও ছাতা দুইটাই আছে, বৃষ্টি যেদিক থেকেই আসুক । ” যা হোক, স্টেডিয়াম এলাকায় এসে পুলক ভাইয়ের কিছু জিনিষ সংগ্রহ করলেন, যেমন বাংলাদেশের পতাকা, মুখে বাঘের উল্কি আঁকলেন । “তোরাও উল্কি লাগা” পুলক ভাই বললেন । কিন্তু আমরা কেউ উল্কি লাগালাম না । স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকতেই জুয়েলের বুকের বামপাশের ব্যাথা বেড়ে গেল ।
কারনটা সিম্পল । দেখি জুলকারনাইন মেহদী আর তনিশা আমাদের ঠিক নিচের সারিতে বসা । তাদের দেখে পুলক ভাই শুধু বললেন “ফাজিলের ফাজিল, বান্দরের বান্দর ”। যা হোক, মহা উৎসাহ নিয়ে বসলাম খেলা দেখতে । পুলক ভাই উনার “আমরা বাঘ” লেখা প্লাকার্ড তুলে স্টেডিয়ামে থাকা বিরাট টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেন ।
কিন্তু হায়, বাট আলাস । টিভি পর্দায় গ্যালারিতে বসা তরুনীদের দেখানো হচ্ছে , চার ছয় হলে অথচ বরাবরের মত পুলক ভাই এখানেও উপেক্ষিত । তারপরও হাল ছাড়লেন না পুলক ভাই । এর কিছুক্ষন পর শুরু হল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিল । আফ্রিদি বল করতে আসার আগেই বাংলাদেশী বাঘের দল অল আউট ।
হায় বিমর্ষ বাঘের চেহারাও তো আসা উচিত টিভি পর্দায় । মানে বাঘের উল্কি আঁকা চেহারাটা । পরের অধ্যায় আরো যাচ্ছেতাই ।
সবারই মন খারাপ । পুলক ভাই বললেন “১৫০০ টাকা জলে গেল ।
হারামজাদা সবগুলোরে ফাঁসির মন্ঞে নিয়া জুতাপেটা করা উচিত । ”
বলতে না বলতেই বেজে উঠলো পুলক ভাইয়ের ফোন । ওপাশ থেকে সোমা আপু বললো “পুলক , তুমি টিভি স্ক্রিনে । উল্কিটা দারুন হইছে” । মুহুর্তেই পাল্টে গেল সব ।
এবার পুলক ভাই বললেন “ আরে মন খারাপ করিস না । তোদের এই একটাই সমস্যা, তোরা অল্পতেই হতাশ হয়ে যাস । খেলায় হার জিত থাকেই । এসব মেনে নিতে হয়” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।