আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলক ভাইয়ের না বলা কথাগুলো

কিছু না। পুলক ভাই কবি মানুষ । কবি কবি ভাব আনার জন্য উনি বাপের দেয়া নাম আহসানুল হাকীম বাদ দিয়ে পুলক আহসান বানিয়েছেন । আকিকা হিসেবে আমাদের কাউয়া বিরিয়ানি দিয়ে ভূরিভোজের ব্যবস্থাও করেছেন । হঠাৎ করে তিনি উদাও হয়ে যান আবার হুট করে ফিরেও আসেন ।

এসেই আমাদের জরুরী তলব করেন । আমি বাবলু আসিফ উনার সভাসদ । পুলক ভাই এবার বেশ হন্তদন্ত হয়েই তলব করেছেন । “তোরা কিছু একটা কর” পুলক ভাই বেশ শান্ত গলায় বললেন । আসিফ অতি উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করলো “ভাই কি হইছে ?” এবার পুলক ভাইকে বেশ হতাশ মনে হল ।

“বোঝস না কেন । ভাবি তো তোদের দরকার । ওই যে মেয়েটার কথা বলেছিলাম । ” “পুলক ভাই,এই শেষ বয়সেও !” ব্যঙ্গ করেই বলরো বাবলু । আমি সবাইকে থামিয়ে বললাম “পুলক ভাই,ডিটেইলস বলেন” ।

আর এতেই পুলক ভাই চলে গেলেন ফ্লাশব্যাকে । “কেউ বুঝলো না,আমার না বলা কথাগুলো। আমি তখন মাত্র ক্লাস এইটে। আমাদের পাশের বাড়িতে থাকতো রিমিরা। রিমি সবে মাত্র ক্লাস সিক্সে।

ওর জন্য পাড়ার সবাই তাদের রুটিন বদলে ফেলেছিলো। যেই আমি স্কুল পালিয়ে খেলার মাঠে পড়ে থাকতাম,সেই আমিও খেলার মাঠের বদলে বিকেলে বাড়িতে থাকতাম। বারান্দায় বসে বই পডার ছলে ওকে দেখতাম। এতে আমার গুড বয় ইমেজ সৃষ্টি হয়েছিলো তার বাবার কাছে। আহ সেই দিনগুলো…………” একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন পুলক ভাই।

খানিক নিরবতা। আবার শুরু করলেন “আমি বেশ আশাবাদী হয়ে উঠলাম। একদিন বিকেলে পাড়ার বন্ধুরা এসে বললো,চল পুলক,এক জায়গায় যাব। আমিও রাজী। গিয়ে দেখি রিমির স্কুল বাসের অপেক্ষায় দাড়ালো সব রোমিও।

কিছুক্ষনের মধ্যে স্কুল বাস তো এলো,সাথে রিমির বাবাও। টের পেয়ে সবাই পালালো,আমি ছাড়া। বোঝ অবস্থা” বলে আবার চুপ হয়ে গেলেন। “আমার মনে হয় কি, রিমি বুঝতো……………………….” পুলক ভাই একটা বৈশিষ্ঠ্য উনি গল্প শুরু করলে শেষ করেই থামেন। আর আমাদের মনযোগ দিয়ে শোনা বাধ্যতামুলক।

গল্পের মাঝে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা নিষেদ। তাই আমরা চুপ হয়ে বসে আছি। উনি আবার শুরু করলেন “মেট্রিকে ভালো রেজাল্ট করায় ভর্তি হলাম শহরের কলেজে। চারিদিকে ভালো ছাত্রের ছড়াছড়ি। এই ক্লাস,ওই ক্লাস এই স্যারের বাসা তো ওই স্যারের বাসা।

আর আমার দু’চোখ শুধু কারে জানি খোজে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেটে গেলো দুইটা মাস। কলেজে তখন বেশ ঘটা করে নবীনবরন করা হত। আবৃত্তি করতাম,তাই আমারও ডাক পড়লো। জানানো হল ১১টায় রিহার্সেল।

আমি খানিক পরেই গেলাম। রুমে ঢুকতেই আমার চোখ আটকে গেলো একটা মেয়ের দিকে। খোজ নিয়ে জানলাম তার নাম সোমা। এ সেকশানে পড়ে,আর আমি বি সেকশানে। উঠেপড়ে লাগলাম সেকশান পাল্টাতে।

অল্প ক’দিনেই বেশ খাতির জমিয়ে ফেললাম তার সাথে। দাড়ি উঠি উঠি করা গালে নিয়মিত শেভ করে,দু’দিন ধরে রিহার্স করা ডায়ালগ মনে রেখে তার সামনে যেতাম। কিন্তু হায়,তার সামনে গেলেই সব ওলটপালট হয়ে যেত। না,এভাবে কাজ হবে না। ভাবলাম বিকল্প পদ্বতিতে বলতে হবে।

” পুলক ভাই আবার চুপ। “ভাই বলেছিলেন” আসিফ বললো। “সে এক বিরাট ইতিহাস। ইটস এ লং স্টোরি। নিত্যনতুন ছড়া লেখা শুরু করলাম।

একটাও আমার মনে ধরেনা। তারমাঝেও কিছু দেখালাম ওকে। একদিন দেখি সোমা তার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে হাজির। আর আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো,“ ও পুলক খুব ভালো ছড়া লিখে যদিও আমি ওসবের মাথামুন্ডু কিছুই বুঝিনা”। হায়রে,অভাগা যেদিকে যায় সাগরের জল শুকিয়ে যায়।

” “ভাই লং স্টোরি কি সর্ট্ করা যায়” বাবলু কিছুটা রেগেই বললো। পুলক ভাই আক্ষেপ করেই বললেন “কি আর বলবো। আমার এক বন্ধু বললো ‘আজকাল মেয়েরা কবি নয়,ব্যবসায়ী দেখে প্রেম করে’। এতক্ষন চুপ থাকার পর আমি বললাম “তারপর কি করলেন ’’ “ভার্সিটি উঠলাম। ভাবলাম ব্যবসাপাতি ধরতেই হবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। MLM পার্টিতে যোগ দিলাম। সাথে খোঁজও চলতে থাকলো। হাউ ফাউ কোম্পানীতে টাইমও ভালো চলছিলো। বৃহস্পতি তখন তুঙ্গে।

লীনার সাথে ভাবটাও গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছিলো। শুধু এই বলি এই বলি বলে বলা হচ্ছিলো না আমার না বলা কথাগুলো। কত কথাই তাকে বলতাম কিন্তু কাজের কথায় এলেই কেমন জানি চুপসে যেতাম। হঠাৎ একদিন আমার হাউ ফাউ কোম্পানি উধাও”। বলেই পুলক ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

আসিফ বেশ কৌতুহলি দৃষ্টিতে তাকিয়ে “তারপর পুলক ভাই”। “সপ্তাখানেক লীনাও উধাও। তারপর একদিন এলো তার বর নিয়ে। আফসোস থেকে গেল। কাউকে বলা হলো না আমার না বলা কথাগুলো।

” প্রিয় পাঠক,আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন,পুলক ভাই এর না বলা কথাগুলো। সেই বালিকারাও হয়তো জানতো,না বলা কথাগুলো। আধুনিক ঈশপ এর মতো গল্পের শেষে বলতে চাই “দরজায় দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই। দোরঘন্টি বাজান” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.