কিছু না।
১
“তানভীর ভালো পারফিউম কতো দামে পাওয়া যাবে ?”
“@PULOK ভাই,আপনি যতো দামে কিনতে চান”
“ফাজিল,সোজা কথায় উত্তর দিতে তোদের কি সমস্যা !”
“ভাই সমস্যা নাইতো। কিন্তু এতো ফিটফাট হয়ে আপনি কই যাইতেছেন ? ভাইভা নাকি ?”
“আরে না। বোঝস না,আমার তো হয়ে গেছে। ”
“কি হয়ে গেছে ?”
সুযোগ পেয়ে আমাদের অতি প্রিয়,রোমান্টিক পুলক ভাই বলতে শুরু করলেন
“পথ ঘুরে ঘুরে আমি ক্লান্ত প্রান এক
আমার চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন
আমাকে দু’দন্ড শান্তি দিতে চলে এলো…………….”
“তাই নাকি।
কনগ্রেটজ”
আমার পাশে বসে থাকা বাবলু ক্ষিন স্বরে বলে উঠলো
“চুল তার কাউয়ার বাসা
এই বুঝি শেষ,পুলকের বাচা”
@JEWEL তো রীতিমতো কোলাকোলি করে পুলক ভাইকে মাথায তোলার অবস্থা। জুযেল বললো “ ভাই কি ভাবির সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন”
পুলক ভাইয়ের লাজুক উত্তর “হ্যাঁ যাচিছ। দোয়া করিস তোরা”
এবার বাবলু উঠে দাড়ালো আর চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কি জানি পড়লো। পুলক ভাইয়ের গায়ে ফু দিতে দিতে বললো “পুলক ভাই,আজকে কি দুইবার শেভ করেছেন?”
পুলক ভাইয়ের তড়িত জবাব “হ্যাঁ”
বাবলু আবার বললো “কি কি বলবেন,সেগুলো ১৫/১৬ বার রিহার্স করেছেন তো?”
ভাবাবেগ ছাড়াই পুলক ভাইয়ের জবাব “হ্যাঁ,কিন্তু কেমনে বুঝলি?”
“পুলক ভাই বাদ দেন। কোতায দেখা করবেন বলে ঠিক করেছেন?”
“সেটাই তো সমস্যা।
কই যে বসি একসাথে”
আমি পুলক ভাইকে আশ্বস্ত করে বললাম “প্রেম যেহেতু হয়ে গেছে place is not ব্যাপার। হোক স্যামারের পাঁচতলায় কিংবা গাছতলায়। কোন সমস্যা নাই। ”
“ওকে আমি আসি। দেরী হয়ে যাচ্ছে”
“জি পুলক ভাই।
বেস্ট অব লাক। কোন প্রবলেম হইলেই কল দিয়েন। ”
পুলক ভাই বিদায় নেয়ার পর বাবলু তো হেসে খুন। “পুলক ভাই তো শেষ। পুলক ভাই তো শেষ।
”
এর মাঝেই আমাদের আড্ডায় উপস্থিত হল @RAFI,@JULKERNAIN ও @NISHAT। আমরা সবাই বিনা টেবিল আলোচনায় বসলাম। আমাদের আলোচনার বিষয়, পুলক ভাইয়ের আগামী এক মাসের কর্মকান্ড। স্বঘোসিত মূল আলোচক আমি শুরু করলাম “আমাদের অতি প্রিয় ছড়াকার,মহাসতি পুলক আহচান অবশেষে প্রেমে পড়েছেন। বেচারা।
যাই হোক,আমরা ধরে নিতে পারি আগামী কিছুদিন উনি আমাদের মাঝে থাকবেন না। একন উনার দিন শুরু হবে ভাবির ঝাড়ি শুনে। সকালে ভাবি ফোন করে জানতে চাইবে ‘এতো বেলা পরযন্ত কেউ ঘুমায়। জলদি চলে এসো। ’ তারপর থেকে দৌড়ের উপর থাকবেন পুলক ভাই।
তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করবেন ভাবীর জন্য। সন্ধ্যায় নাশতার টাকা বাচিয়ে মোবাইল ফোন রিচার্জ করবেন রাতে কথা বলার জন্য। আর রাতে অপেক্ষা করবেন কতক্ষনে ভাবীর মিসকল আসে। ‘মিসকল পাওয়া মাত্রই কল করা বাধ্যতামুলক’ এই থিওরিতে পুলক ভাই কল করবেন। কল করে দিনের অবশিষ্ট ঝগড়াটুকু শেষ করে নিবেনাআর তাতে রাতও শেষ।
”
এবার আলোচনার দ্বিতীয় বক্তা বাবলু বললো “মোবাইল ফোন রিচার্জ করতে করতে পুলক ভাই হাফ ফতুর। আর বাকিটা হবে এদিক ওদিক ঘোরাঘোরি,ভাবরি এই আবদার ওই আবদার মেটাতে,প্রতিমাসে নতুন নতুন শার্ট,অবশ্যই হকার মার্কেট থেকে আর কারনে অকারনে নানা গিফট কিনতে। এই অর্থ বরাদ্দ আসবে বাবর পকেট থেকে,দুইটা টিউশনের টাকা আর বন্ধুবান্ধবের থেকে নেয়া ধার থেকে। আমিতো পুলক বাইয়ের করুন ভবিষ্যত দেখছি। অদুর ভবিষ্যতে কোন বন্ধুকে দেখা মাত্রই পুলক ভাই বলবেন ‘আরে দোস্ত,তোকে আমি মনে মনে খুজতেছি।
কিছু ধার দে তো। ’
মেহেদী বললো “আগামীতে উনার যাবতীয় ছড়া হবে ভাবীকে নিয়ে”
নিশাত ধুপ করে বোম ফাটানো তথ্য দিলো “পুলক ভাই হিন্দি সিরিয়াল দেখাও শুরু করে দিতে পারেন। জুয়েল ভাইও ভাবীর চাপে একসময় নিয়মিত হিন্দি সিরিয়াল দেখতেন। ”
জুয়েল তো রেগে আগুন “নিশাত ,কি কস এসব”
“সরি জুয়েল ভাই”
ঠিক সেই সময় আমার মোবাইল বেজে উঠলো। দেখি পুলক ভাইয়ের কল।
“হ্যালো পুলক ভাই,কোন সমস্যা”
“ওই ব্যাটা,বিশাল সমস্যা। আমার প্যান্ট জিপারের নিচের অংশে ছিড়ে গেছে। কি করি,তাড়াতাড়ি বল। ”
“ভাই , ভাবী কই”
“ভাবীর কথা রাখ। আছে সে পাশেই।
কি করি বল”
আমি লাউড স্পিকারে কথা বলছি। পাশে বাবলু,জুয়েল,রাফি,মেহেদী নিশাত সবাই হেসে খুন ।
“পুলক ভাই একটা লিস্ট মাথায রাখেন
১. কোন অবস্থাতেই বসা যাবেনা
২. অতি খুশি হওয়া যাবেনা। তাতে লাফিয়ে উঠতে পারেন। রাফ দিলেই সর্বনাশ।
৩. ড্রেন, নালা পার হওয়া যাবেনা।
৪. ভুলেও রিকশায় চড়া যাবেনা।
যাই হোক,প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে কিছুটা পার পেতে পারেন। ”
“ওকে”
“পুলক ভাই, সবচেয়ে বড় কথা তো বলাই হয়নি। শার্ট ইন রাখা যাবেনা।
কায়দা করে ইন খুলে ফেলেন। ”
“দোয়া রাখিস তোরা। বাই” বলেই ফোন রেখে দিলেন ।
২
আমার কথামতো পুলক ভাই শার্টের ইন খুলেছিলেন। আর বিপত্তিটা বাধলো তখনি।
ইন খোলা দেখে সোমা আপু মানে আমাদের ভাবী রেগে বললেন “পুলক ইন খুলেছো কেন?”
“এমনিতে,আসার সময় তানভীরদের সাথে দেখা। ওরা ইন নিয়ে হাসাহাসি করছিলো। ”
“তুমি তখন খুলে এখন খুলছো। আর কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি। চলো কোথাও বসি”
“চলো হাটিঁ”
“পুলক,চলো রিকশায় ঘুরি”
“এই তোমার জামা তো বেশ সুন্দর”
“কথা ঘোরাবে না।
তোমরা সব ছেলেরা এক রকম”
“মানে কি,কয়টা ছেলেকে চেন তুমি?”
“কি বলতে চাও তুমি”
“আচ্ছা বাদ দাও। আজ চলো উঠি। কাল আবার দেখা করি”
“পুলক……………………………………………….” (ঝগড়া চলবে)
যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়। হুট করে কোথা থেকে একটা রিকশাও এসে গেল। সেই রিকশা দেখে পুলক ভাইয়ের চোখ কপালে ওঠার অবস্থা।
সোমা আপু চটজলদি উঠে পড়ল রিকশায়। বেশ কায়দা করে পুলক ভাইও চেপে বসলেন রিকশায়। ইতোমধ্যে পুলক ভাইয়ের জান যায় যায়। খারাপ সময়ের স্থায়িত্ব নাকি অনেক বেশি,তাই বলে এতো!
এবার উনাদের প্রথম বিদায় পর্ব। পুলক ভাইয়ের চোখে যখন রাজ্য হারানোর বেদনা তখন খেয়াল করলেন সোমা আপু মিটিমিটি হাসছে।
পুলক ভাই জিজ্ঞেস করলেন “ হাসছো যে”
“পুলক তোমার প্যান্ট ছিড়ে গেছে তা বললেই পারতা। হা হা হা হা হা”
এসব শুনে পুলক ভাইয়ের ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্থা । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।