১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ । রোদ্রোজ্জ্বল চমত্কার সকাল । শুক্রবার সকাল ছয়টা । বন্ধের দিন । এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার কোন মানে হয় না ।
কিন্তু পুলক ভাইয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেছে ।
ওয়ালটনের হ্যান্ডসেট টা এত জোরে ভাইব্রেট করে ! মেসেজ আসলেও যেন মনে হয় ছোট খাটো একটা ভূমিকম্প হয়ে গেল ! মোবাইলটার দিকে তাকাতেই খানিকটা অবাক হলেন । আনসেইভড একটা নাম্বার
থেকে একটা মেসেজ এসেছে । কিন্তু এখন তো আর কেউ মেসেজ
লেখে না । আসলে মানুষ এত বিজি থাকে যে এসএমএস করার টাইম ই পায় না ! তাহলে তাকে মেসেজ দিল কে ?
আবার স্ক্রিনে তাকালেন ।
নাম্বারের ছন্দটা কেন জানি পরিচিত ঠেকছে । কেন জানি মনে হচ্ছে কোন একসময় এটা তার খুব প্রিয় একটা নাম্বার ছিল । কিন্তু কেন এমনটা মনে হচ্ছে তা ঠিক ধরতে পারলেন না । হঠাত্ করেই মনে পড়ল- আরে এটা তো সোমার নাম্বার !
সোমা ! পুলক ভাইয়ের এক্স গার্লফ্রেন্ড ! ২০১৪
তে ব্রেকাপ হবার পর দীর্ঘ আট বছর এ নাম্বারটি বন্ধ ছিল । কতবার যে ট্রাই করেছেন এ নাম্বারে ।
কিন্তু কোন লাভ হয় নি । শেষে বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন । এত বছর পর
হঠাত্ কি মনে করে সোমা মেসেজ দিল ?
কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজটি ওপেন করলেন । কয়েকটি লাইন লেখা তাতে-
"চোখের কোণে জমে আছে
অনেক খানি পানি,
মুছে দিতে আসবে না-
এ কথাও জানি ।
অনেক আপন ছিলে তুমি
হঠাত্ হলে পর ।
আমার খবর না ই বা নিলে,
তোমার কি খবর ?"
মেসেজটি পড়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন পুলক ভাই । সেকেন্ডের
ভগ্নাংশে মনে পড়ে গেলো হাজারো স্মৃতি । বিপ্লব উদ্যানে চুপিচুপি দেখা করা, সিআরবির পাহাড়ে দিনের পর দিন চুপচাপ হাত ধরাধরি করে বসা থাকা, পহেলা বৈশাখে ডিসি হিলে একসঙ্গে নাচা,
স্নোভাতে কফি খেতে যাওয়া, স্যানমারের ফুডকোডে এক গ্লাস দুই স্ট্র নিয়ে একত্রে লাচ্ছি খাওয়া, জিইসি থেকে হাত
ধরাধরি করে হাঁটতে হাঁটতে ওয়ার সিমেট্রি যাওয়া, ডাবাতে মাঝে মাঝে লান্ঞ্চ করা কিংবা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিচে ঘুরতে যাওয়া......
মূহুর্তেই চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই সব পুরানো দিনের কথা । প্রায়
ভুলতে বসা সেই সব সুখস্মৃতি । ফয়েস লেকের
প্রতিটি কনসার্টে দুজনের
উপস্থিতি ছিল মাস্ট ।
একবার কথাচ্ছলে সোমা আপু বলেছিল তার কদম ফুল খুব পছন্দ । পুরো চিটাগং এ কদম না পেয়ে পুলক ভাই তার এক বন্ধুর
বাড়ি ফটিকছড়ি চলে গিয়েছিলেন শুধু সোমা আপুর জন্য একগুচ্ছ
কদমফুল আনার জন্য ।
মনে পড়ে গেল নিউমার্কেট
এলাকার অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ানো কথা, বৃষ্টিস্ন্যাত এক বিকেলে রিকশায় পাশাপাশি বসা সোমা আপুর টোল পড়া গালে প্রথম চুমু খাওয়া আর এ নিয়ে সোমা আপুর
সে কি রাগ !
সেসব মনে পড়তে আপন মনেই হেসে উঠলেন পুলক ভাই । কিন্তু ধীরে ধীরে সে হাসি মুছে গেল । সেখানে বিষণ্নতা এসে ভর করল ।
খুব অভিমান হল সোমা আপুর উপর । কত সহজেই না "ওভার" শেষ করে দিয়েছিল দীর্ঘ পাঁচ বছরের সর্ম্পক । ঝগড়া তো সবার মাঝেই হয় । ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে কেউ কি এভাবে সবকিছু শেষ করে দেয় ?
রিপ্লে অপসনে গিয়ে অভিমান নিয়েই পুলক ভাই লিখলেন-
"আমার খবর খুবই ভালো
আছি বড় সুখে ।
জানতাম আমায় করবে স্মরণ
যদি পড় দুঃখে ।
আমার কথা বাদ দাও,
তোমার খবর বল ।
এখনো কি স্বপ্নে আমার
হাতটি ধরে চলো ?"
ছন্দ মিলাতে গিয়ে পুলক ভাই আবার স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন । একটা সময় ছিল যখন তিনি আর
সোমা আপু ছন্দে ছন্দে গেইম খেলতেন । প্রেম-ভালবাসা, খূনসুটি-ঝগড়া... সবই চলত তাদের চার লাইনের অনুকাব্যে ।
কিন্তু এখন...............
পাঠাতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালেন পুলক ভাই ।
না, অভিমানে নয় । বর্তমানের
কথা চিন্তা করে । পাশে শোয়া ইশাতের দিকে একবার তাকালেন । ইশাত, পুলক ভাইয়ের স্ত্রী । দুবছর আগে ইশাতকে বিয়ে করেছেন পুলক ভাই ।
দীর্ঘ আট বছর অপেক্ষা করেছিলেন সোমা আপুর
জন্য । কিন্তু তিনি আর
ফিরে আসেন নি । তাই ভিশন ২০২১ এ সোমা আপুকে ফিরে পাওয়ার ভিশন বিসর্জন দিয়ে ইশাতকে বিয়ে করেন ।
বেচারি খুব ভালবাসে পুলক ভাইকে । সে এসব জানলে খুব কষ্ট পাবে ।
তাকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না । তাছাড়া Past is always past. এখন এসবকে পাত্তা দেয়া ঠিক
হবে না ।
সোমা আপুর মেসেজটা ডিলিট করে দিলেন । তারপর যত্ন করে সেট টা বন্ধ করলেন । টানা দশ বছর এই নাম্বারটা ব্যবহার করেছিলেন
শুধুমাত্র একটিবার সোমা আপুর রেসপন্স পাওয়ার আসায় ।
আজ সেটা পেয়েছেন । এখন আর এ
নাম্বারটা না ব্যবহার করলেও চলবে । সিদ্ধান্ত নিলেন সকালে বাজারে যাওয়ার সময় মোবাইলটা সহ কোন এক ডাস্টবিনে ফেলে আসবেন ।
মনে মনে একটি বার
কবি নিলয়ের অমর
কবিতা "অতীত অতীতেই থাক" এর শেষ কয়েকটি লাইন আওড়ালেন-
"কিছু কথা না বলাই থাক ।
কিছু স্মৃতি না ই বা ভোলা যাক ।
যেসব ঘটনা মনেতে কেটে যায় দাগ,
হৃদয়ের কুঠিরে সেসব আবদ্ধই থাক ।
কিছু কথা না বলাই থাক ।
কিছু ব্যথা না ই বা প্রকাশ
পাক ।
প্রত্যাশার চাদেরে প্রাপ্তির খাতা,
আজ না হয় অপূর্ণই থাক ।
কাল হয়ত জীবন
নেবে নতুন বাঁক ।
অতীত আজ তাই
অতীতের জায়গাতেই থাক । "
তারপর ইশাতকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন পুলক ভাই । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।