আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি বাঁশের আত্মকথা

রম্য রচনা -একটি বাঁশের আত্মকথা: খুব ভালোই তো ছিলাম কোন এক সময়। নিজের মত করে বনে বাদাড়ে বেড়ে উঠতাম, সব গাছ ছাপিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতাম - একপায়ে দাঁড়িয়ে। তবে একা একা থাকতে আমরা পছন্দ করি না, আমাদের বসবাস সমষ্টিগত, মানুষের মত গোষ্টীভুত হয়ে আমরা বসবাস করি। বনে জঙ্গলের কোন এক কোনার দিকে গুচ্ছ-গ্রামের মত আমরা গুচ্ছ-কতক বনের রাজার মত মাথা উঁচু করে দিনাতিপাত করে যাচ্ছিলাম। অসম্ভব সুন্দর এক সময় কাটছিল আমাদের, মাঝে মাঝে বানর কতগুলি আমাদের গায়ে লাফালাফি করে খেলত, ঝুলে থাকত আমাদের অল্পকিছু ডাল-শাখা ধরে, খুব মাঝে মাঝে কিছু কাঠবিড়ালি গায়ে সুড়সুড়ি দিয়ে আমাদের বেয়ে পালিয়ে যেত।

সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম তখন সবুজ রঙ্গা সাপকে। আমাদের গায়ের রং এর সাথে মিলিয়ে ওই সাপের রঙ – কখন যে গা বেয়ে কোন শাখার চিপায় বসে থাকত নিজেও বুঝতে পারতাম না। তারপর একসময় দুঃখের দিন এলো আমাদের, আমাদের দিকে চোখ পড়ে গেল মানুষ নামক এক ভয়াবহ জানোয়ারের। নির্বিচারে কেটে নিতে থাকলো আমাদের। কেও আমরা মা হারালাম, কেও বাবা আবার কত বাবা মা যে তার সন্তান হারালো তার কোন সীমা পরিসীমা নেই।

কোন দয়া মায়া ছাড়াই তারা আমাদের দা নামক এক ভয়াবহ অস্র দিয়ে ঘেচাঘেচ করে কেটে যেতে লাগল। একের পর এক সাফ হতে লাগল বনারন্যের সৌন্দর্য। সার দিয়ে গুচ্ছ বেধে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবার সমষ্টির মাঝে কেন জানি দয়া করে ৮-১০জন কে রেখে বাকি পরিবারের সবাইকে তারা কেটে নিয়ে যেত। কি করত আমাদের নিয়ে তখনো জানতাম না। তারপর একদিন আমারও পালা এলো, যখন আমার গোড়াতে দা নামক ভয়াবহ যন্ত্রটা দিয়ে কোপ দিল সে ব্যথার কথা কখনো ভুলবো না, তীব্র ব্যথায় মূমূর্ষ প্রায় ভূ-লুণ্ঠিত হয়ে পড়ে গেলাম মাটির সাথে মিশে।

সেখান থেকে আমার আরো সহদর ভাই বোন আর কিছু আত্মীয় স্বজন এর সাথে আমাকে টেনে নিয়ে ফেললো নদীর মাঝে। তারপর সার বেধে আরো আমাদের গোষ্ঠীর কত হাজার বাঁশের সাথে ভাসিয়ে দিল নদী স্রোতে। তারপর ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে এলো আমাদের মনুষ্যসমাজের মাঝে। দেখলাম বাঁশের কদর মানুষের মাঝে। কেও আমরা হলাম ঘড়ের খুঁটি, কিছু ভাইবোন চলে গেল ঘরের মাচা হয়ে, আর সবচেয়ে মোটা তাজা বাঁশ গুলোকে লাগালো তারা আসবাবপত্র বানানোর কাজে।

আর শুকনো টিংটিঙে কিছু পচে যাওয়া বাঁশগুলোকে ঠেলে দিল উনুন এর ফাঁকে, আগুন জ্বালার কাজে। হায় বাঁশ জাতি – কি নিঠুর পরিণাম আমাদের। যাক তাও তো বেঁচে আছি কোন না কোন মানব কল্যাণের ধামাধরা হয়ে। শিখতে শুরু করলাম মানব সমাজের কথাবার্তা। কোন এক মহান অঙ্কবিদ নাকি আমাদের নিয়ে অঙ্ক কষে গেছেন – “ আমাদের গায়ে তেল মাখিয়ে একটি বাঁদরকে বাঁশ বেয়ে উঠতে বলছেন, বেচারা বাদর সর্বগায়ে তেল মেখে অনেক কষ্টে ২ফুট ওপরে ওঠে তো হড়কে ১ ফুট নীচে নেমে যায়।

তাও নিষ্ঠুর মানব জাতি তার পিছনে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাকে বাঁশের মাথায় ওঠাবে বলে। তারা হিসাব কষে যাচ্ছে কত মিনিটে তেলের মধ্যে পিছলে পিছলে ওপর নীচ করে বাঁশের মাথায় উঠতে পারে বানরটি। “ হায় কপাল – এটা শুনে আমার ইচ্ছে করছিল ওই অংক-বিশারদ’কে যদি সাড়া গায়ে তেল মেখে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে একবারের জন্য বাঁশের আগায় তুলে দিতে পারতাম বাঁশ বাইয়ে তাইলে বেটা বুঝত কত গমে কত আটা। বেচারা বান্দর গো কোন হসপিটাল নাই বইলা বাঁশের আগায় তুইলা দিয়ে ছাইড়া দেয়, কত্তবড় হারামি। আরে বাবা একটু তারে নামাইয়া ভালোমতো চিকিৎসা করা – বান্দর বেটার সাড়া বুক তো ছিল্লা ফানা ফানা হইয়া গেছে।

এমনি তো দেহি তরা কত্ত ঢং কইরা সিনামার নাম রাখস “ফানা” ঈশ যেন কইলজাডা ফানা ফানা হইয়া গেছে তোগো। আর বান্দর বেটার যে সাড়া শরীর ফানা-ফানা হইয়া গেল তার বুঝি কোন চিকিৎসা লাগে না? আসলে তরা নামেই মানুষ – চরিত্রে অমানুষ। ইশশিরে, একটা বার ওই অংক-ওয়ালারে আমি বাঁশ বাইয়া উঠাইতে পারতাম যদি তাইলে মনের ঝাল মিটত আমার। যাউকগা, ওই বেডায় মইরা গেছে কত বছর হইয়া গেছে তারে লইয়া আর কিছু না কইলাম। অহন কই অহনকার মাইনষেরে লইয়া।

শালার ইতান মানুষ না মাইনসের জাত, কতায় কতায় আমাগো লইয়া গাইল দেয় – কারো লগে মন কালাকালি হইলেই কয় তর পিছন দা ভইরা দিমু বাঁশ। আইচ্ছা আন্নেরাই কইনছেন দেহি – আমরার সাইজ দেকছেন না আন্নেরা? ১০-৫০ফুট এক একটা বাঁশ। এত্ত বড় বাঁশ বুঝি মাইনসের পিছন দিয়া ভইরা দেওন যায়? কথা বার্তায় তো একটা যুক্তি থাকতে হইব, চেইত্তা মেইত্তা খালি আকতা কইলেই হইব? পিছন দা কি বাঁশ ঢুকাইতে পারব? ধুর মিয়ারা – আমাগো বুঝি একটা ইজ্জত আছে না, আপনেরা মিয়ারা পিছন দিয়া হাগেন ওইহান দিয়া আমগো ভরতে চান কোন দুঃখে? আর হুদামিছা একটা কতার কতা হইলেই হইল? ওই ছুডো ফুটা দিয়া এত্ত বড় বাঁশ কি ঢুকান যাইব? যত্ত সব আজাইরা কতা মাইনসের মুখ দিয়া বাইর হয়। ছি ছি, মাইনসের মুখ তো না যেন হাগনকুঠি। নাউজুবিল্লাহ।

তয় এহনকার মাইনসের কতায় কিন্তু বাঁশ একটা চালু চিজ হইয়া গেছে, কতায় কতায় বাঁশ দেয়। মুখ দিয়া বাঁশ দেয়, পিছন দিয়া বাঁশ দেয়, চারিদিকে বাঁশে বাঁশে বাসারন্য। বাসে ট্রেনে বাঁশ দেয় সহযাত্রিরে , বাড়িতে বাঁশ দেয় কামের বুয়ারে, মাঝে মাঝে বৌ জামাইরে মাঝে মাঝে জামাই বৌরে, অফিসে বাঁশ দেয় অধস্তন কর্মচারীরে, শিক্ষক বাঁশ দেয় ছাত্রছাত্রীরে, উকিল বাঁশ দেয় ক্লায়েন্টরে, মন্ত্রী মিনিস্টাররা বাঁশ দেয় দেশরে। বাহ বাঁশের কি ব্যাবহার – বাঁশে বাঁশে বাসারন্য। বনের বাঁশ এখন মাইনসের মুখে মুখে মাঝে মইধ্যে পিছন দিয়া।

অতিচালাকের পোঁদে বাঁশ যায় অতি-গাধামি করতে গিয়া। যত চালাক তত বেক্কল, যত বেক্কল তত বাঁশ – খায় না দেয় তাতে কি আসে যায়? জন্মাইছি বাঁশ হইয়া, জীবন হইল ধইন্য মাইনসের ছোঁয়া পাইয়া। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.