আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েটির কান্নার কারনটি জানা হল না !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! ষ্টুডেন্টের বাসা থেকে বের হতে যাবো এমন সময় আন্টি এসে বলল -তুমি কোন দিক দিয়ে যাবা ? -এই তো আন্টি পরীবাগ দিয়ে ! -দাড়াও একটু শামসের আব্বাও যাবে । তোমাকে পরীবাগে নামিয়ে দিবে ! আমি দাড়ালাম । যাক ২০ টাকা রিক্সা ভাড়া বেঁচে যাবে ! কিন্তু পরীবাগে নামা হল না । আঙ্কেল আমাকে একেবারে খামারবাড়ীর মোড়ে নামিয়ে দিল ! যাক ভালই হল ! অনেক দিন এই দিকটাতে আসা হয় নাই ! আগে একটা সময় ছিল প্রায়ই প্রতিদিনই এখানে আসতাম । আমার রুম মেটের এই সংসদ ভবনের সামনের জায়গাটা বেশ পছন্দ ছিল ! কেন জানি রিক্সা নিতে গিয়েও নিলাম না ! বেশি পথ তো আর না ! অবশ্য রাত একটু হয়েছে ! এরই মাঝে দেখলাম এলাকা একটু ফাকা হয়ে গেছে ! তবুও হেটেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম ! ভুদিন হাটা হয় না এদিকটায় ! আমি আস্তে আস্তে আস্তে থাকি ! বাসায় যাওয়ার কোন তাড়াহুড়া নাই ! এমন কেউ বাসায় আমার জন্য অপেক্ষা করছে না ! লোকজন নেই বললেও এখনও কিছু লোকজন রয়েই গেছে ! এরা সব সময়ই থাকে ! তবে দেখলাম বেশ কিছু গাড়ীও জমা হয়ে আছে ।

সব বড় লোকের পোলাপাইন । রাত যত বাড়বে এদের ভীড় তত বাড়বে । আমি আপন মনে হাটতে থাকি ! বিকেলের দিকে বৃষ্টি হয়েছিল এখন বেশ ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে ! হঠাৎ দেখলাম সামনে দিয়ে একটা মেয়ে হনহন করে হেটে চলে গেল ! ঠিক তার পিছনেই একটা চিকন মত ছেলে দৌড়ে দৌড়ে আসছে ! কিছু সময় পরপর বলছে বেবি ! যেও না ! দাড়াও না ! এই .... বেবি ? সিরিয়াস লি ? এই পোলা গুলার কি হাসি আসে না যখন সবার সামনে মেয়ে গুলারে বেইবি বলে ডাকে ? আমি হলে তো কোন দিন ডাকতেই পারবো না ! -মামা চটপটি ! মামা চটপটি !! গরম ! একদম গরম । দেখলাম বেশ কয়েক জনই এমন করে ডাকা ডাকি করছে । ফুসকা ? ঘড়িতে সময় দেখলাম ।

নাহ । এখন কিছু খাওয়া দরকার । বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেতে খেতে অনেক দেরি । আর এলাকার চটপটি মামা এতোক্ষনে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে । আমি নিরিবিলি দেখে এক মামা দোকানে বসে পড়লাম ! -মামা প্লেট কত ? -৫০ টাকা মামা ! -এতো ? কপিচ দেও ? -১০ টা মামা ! -মাত্র ? নাহ মামা ! খাওয়া যাবে না ! আমি উঠে পড়তে যাই ! দোকানদার মামা বলে -মামা আপনারা না খাইলে আমাদের চলবো কেমনে ? আজকা সারা দিন বেচা কিনা নাই মামা ! -না হলেও মামা কিছু করার নাই ! ৫০ টাকা দিয়ে খাওয়া যাবে না ! -আচ্ছা মামা ৫ টাকা কম দিয়েন মামা ! আরো কিছুক্ষন দর কষাকষি হল ! শেষে ৩৫ টাকায় রাজি হল ! আমি ফুসকার জন্য অপেক্ষা করতেছি এমন সময়ই মেয়েটার দিকে চোখ গেল আমার ! আমি যেখানে বসে আসি সেখান থেকে কিছু দুরে বসে আছে আরো দুটো ছেলের সাথে ! অবশ্য ছেলেদুটো এক জন দাড়িয়ে আছে ! আর অন্য জন মেয়েটার পাশে বসে আছে ! সব কথা কানে আসছে না তবে কয়েকটা কথা আমার কানে এল ! তাতেই আমার খানিকটা কৌতুহল হল ছোট্ট দলটার উপর ! মেয়েটা দাড়িয়ে থাকা ছেলটার দিকে তাকিয়ে বলল -তোমার এই কি শেষ কথা ? যদিও আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম না তবুও কেন জানি মনে হল মেয়েটার চোখে পানি ! আর মেয়েটার গলাটাও কেমন ধরা ধরা ! ছেলেটা কিছুক্ষন চুপ করে রইলো তারপর বল -আমি তোমাকে বলেই দিয়েছি ! আমার পক্ষে সম্ভব না ! আমি অপেক্ষায় আছি মেয়েটি কি বলে ! কিন্তু হঠাৎ মেয়েটি একটা অদ্ভুদ কাজ করে বসলো ! উঠে গিয়ে ছেলেটির পায়ে ধরতে গেল ! বলল -তোমার পায়ে পড়ি আমাকে তুমি বিয়ে কর ! ছেলেটি একটু সরে গেল ! কিন্তু কোন ভাবান্তর হল না ! এবার আমি স্পষ্টই দেখলাম যে মেয়েটি কাঁদছে ! মেয়েটি আবার বলল -প্লিজ ! -অর্না ! আমি তোমাকে আগেই বলেছি ! আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না ! ছেলেটি আর দাড়ালো না ! ওরা দুজনই মেয়েটিকে একা রেখে হাটা দিল ! আমি আরো কিছু দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ! ভেবেছিলাম মেয়েটি হয়তো ছেলেটির পেছন পেছন যাবে ! কিন্তু যেখানে বসে ছিল মেয়েটি সেখানেই বসে রইলো ! আমিও বসে রইলাম মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ! মেয়েটি কাঁদছে ! পাশদিয়ে চলে যাওয়া লোকজন গুলো একবার দেখছে মেয়েটিকে ! তারপর যে যার মত চলে যাচ্ছে ! একটি মেয়ে কাঁদছে এতে কারো কিছু যায় আসে না ! আসলেই কারো কিছুই তো যায় আসে না ! কিন্তু আমার কেন জানি মনখারাপ হল ।

মেয়েটি কেন কাঁদছে জানতে ইচ্ছা করছে ! -মামা ! এই ফুসকা ! আমি কিছুক্ষন চুপ করে ভেবে চটপটি মামা কে বললাম যে ফুসকার প্লেট টা ঐ মেয়েটিকে দিয়ে আসতে ! মামা আমার কথা মতই কাজ করলো ! আমি চুপ করে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটি কি করে দেখার জন্য ! হয়তো মেয়েটি অবাক হবে ! কান্না বন্ধ করবে ! ফুসকার প্লেট টি হাতে নিবে ! হয়তো মেয়েটি অবাক হবে কিন্তু কান্না থামাবে না ! প্লেট ও নিবে না ! হয়তো মেয়েটি বিরক্ত হবে ! কঠিন করে মামা কিছু কথা শোনাবে ! হয়তো.... আরো অনেক কিছুই হতে পারে ! দেখা যাক কি করে ! আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি ফুসকার প্লেট টি হাতে নিল ! এবং মেয়েটির মুখ দেখে মনে হল মেয়েটি মোটেও অবাক হয় নাই ! যেন এখন মেয়েটির ফুসকা খাওয়ার কথা ছিল ! কিন্তু কান্না থামালো না ! তবে কান্নার বেগ কিছুটা কম ! মামাকে আরো এক প্লেট ফুসকা দিয়ে বললাম ! আমি একনও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি ! মেয়েটি একটু পরপর চোখ মুছছে আর একটু করে ফুসকায় কামড় দিচ্ছে ! -মামা ! একটু টক দিয়ে যান তো ! আমি আসলেই এবার অবাক হলাম ! এই মেয়ের সমস্যা কি ? একটু আগে মেয়েটা ভেউ ভেউ করে কাঁদছিল আর এখন মেয়েটি ফুচকা খেতে টক যাচ্ছে ! আশ্চার্য ! আমি নিজেই টক নিয়ে গেলাম মেয়েটির কাছে ! নিজেই ঢেলে দিলাম ! -আর একটু দেব ? -না থাক ! হয়েছে ! মেয়েটির কান্না তখন পুরোপুরি থেমে গেছে । আমি মেয়েটির পাশেই প্লেট নিয়ে বসে পড়লাম । কিছু টা সময় নিয়ে বললাম -একটা কথা বলবো ? -জি বলুন । -আপনি ভাল আছেন ? -এই প্রশ্ন করতে আমাকে ফুসকা খাওয়ালেন ? -না । কোন প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ফুচকা খাওয়াই নি ।

-তাহলে কেন খাওয়ালেন ? -এমনি । আপনি কাঁদছিলেন । কেন জানি মনে হল ফুচকা খেলে হয়তো আপনার ভাল লাগবে । হয়তো কান্না থামবে । তাই ! -অন্য কেউ হলে কি এমনটা করতেন ? -হয়তো না ।

আবার হয়তো । আমার মানুষের কান্না বিজরিত চোখ দেখতে ভাল লাগে না ! চেষ্টা করি আসে পাশের সবার কান্না থামাতে । মেয়েটি আমার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল -ফুসকা খাওয়ানোর জন্য ধন্যবাদ । আসলেই কান্না কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না ।

আপনার ফুচকা বেশ কাজে দিয়েছে । মেয়েটি উঠে দাড়ালো । তাকিয়ে দেখি মেয়েটির প্লেটে তখনও তিনটা ফুচকা পরে আছে । -আর খাবেন না ? -নাহ । আর কিছু না বলেই মেয়েটি হাটা দিল ।

আমি ডাক দিবো কি না ভাবছি বা ডাক দেওয়া ঠিক হবে কি না ! তবুও ডাক দিয়েই ফেললাম -অর্না ? দেখলাম মেয়েটি দাড়িয়ে পরলো । একটু দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে ঘুরলো ! আমি বললাম -কয়েকটা কথা খুব জানতে ইচ্ছা করছে ! বলবেন ? অর্না কিছুক্ষন সময় নিলো উত্তর দিতে ! তারপর বলল -অন্য কোন দিন ! আজকে না ! অর্না আর দাড়ালো না ! আমি হাফ খালি ফুচকার প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম ! অর্ণা কেন কাঁদছিল জানা হল না ! পুনশ্চঃ আজকে অনেক দিন পরে টিউশনি থেকে আসার সময় সাংসদ ভবনের সামনে দিয়ে আসছিলাম ! ভাল লাগছিল বেশ ! আর বেশ কয়েক বছর আগে এক সন্ধ্যা, এই রকম একটা মেয়েকে দেখেছিল একটা ছেলের পায়ের পরতে ! মুখে সেই একটা আকুতি যে আমাকে তুমি বিয়ে কর ! ফেবু লিংক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.