রামকানাই পন্ডিত হাসপাতাল জায়গাটাকে আমি সাধারণত এড়িয়ে চলি। অসুস্থ মানুষের অসহায় আর্তনাদ, যন্ত্রনায় কাতরানোর শব্দ, আত্মীয়স্বজনের আতঙ্কিত মুখ, বিষন্নতা আমার এই দুর্বল হার্ট সহ্য করতে পারে না। কিন্তু আজ একেবারে না গিয়ে পারলাম না। গতকাল খবের শুনেছি বুয়েটের এক ছাত্রী বাস থেকে পরে গিয়ে গুরতর অসুস্থ হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি। ইচ্ছা থাকলেও গতকাল সময় করতে পারিনি, আজ ইফতারের পর বের হলাম পঙ্গু হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
নিচ তলায় অভ্যর্থনা কক্ষে কাউকে না পেয়ে এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করতেই, লোকটি দোতলায় সি ব্লকে যাবার কথা বলল। দোতলার মহিলা ওয়ার্ডের রুমটিতে ঢুকে এক জায়গায় অনেক লোকের ভীড় দেখে এগিয়ে গেলাম সে দিকে। দুটো পা’য় ব্যান্ডেজ করা। বাম পায়ের হাটুর নিচের অংশ.............ডান পা পুরোটা ব্যান্ডেজ। বেডের পাশেই একটা ভদ্রলোক আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, “আমি শাম্মার বড় ভাই” ।
.নিজের পরিচয় দিয়ে দু’একটা কথা বলে জানতে পারলাম, মেয়েটি ইফতারের আগে বাসায় ফেরার উদ্দ্যেশে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিলের জন্য রাজা সিটি বাসে উঠতে গেলে, ওই সময় দুজন যাত্রীর হুরোহুরিতে মেয়েটি বাসের দরজা থেকে পরে যায়, আর তখনি বাসের পিছনের চাকাটা মেয়েটির পায়ের উপর দিয়ে...। ।
একটু পরেই হাসপাতালে একদল সাংবাদিক হাজির। এন টিভির। ক্যামেরা চালু করে, কথা বলা শুরু করল।
গতকালের পর থেকে এই পরিবারেরর উপর দিয়ে সাংবাদিকদের অনেক ঝামেলা গেছে, বোঝায় যাচ্ছে। মেয়েটির মা অভিযোগ করে বলছিলেন, “মেয়েটি যখন বাস থেকে পরে ভাঙ্গা পায়ে রাস্তায় যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে তখন দল দল সাংবাদিক তার ছবি তুলেছে ঘটা করে। হট কেক করে টেলেভিশনে বিক্রি করেছে, অথচ যন্ত্রনাই কাতরানো মেয়েটিকে কোন সাংবাদিক তার গাড়ি করে হাসপাতালে পৌছে দেয় নি। ব্যাথায় মেয়েটি কাতরাতে থাকলেও, ফটোসাংবাদিকরা একের পর এক ক্যামেরা ক্লিক করে গেছে। অবশেষে এক মধ্য বয়স্ক মহিলা রিক্সা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেয়েটিকে নিয়ে গেছে ।
কোন সাংবাদিক নয়”।
এই বলে মেয়েটির মা অঝোরে কাঁদতে থাকেন। মেয়েটির বড় ভাইয়েরও একি অভিযোগ, “আমরা শিক্ষিত মানুষরা মানুষের দূর্ঘটনাকে পুজি করে সংবাদ বিক্রি করছি, অথচ আমাদের মানবতা বোধ কোথায়...”!
সাংবাদিকরা চলে গেলে মেয়েটির ভাই আমাকে তার কাছে নিয়ে গেলে আমি চুপচাপ তার পাশে গিয়ে দাড়িয়েছিলাম কিছুক্ষন। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কোন কথা বলতে পারি নি। শুধু মনে মনে বলেছিলাম, “যে ভার আল্লাহ এই মেয়েটিকে দিলেন, তা যেন সে বইতে পারে” ।
মেয়েটির বড় ভাই রাতে বাসায় যাবেন বনশ্রীতে। একসাথেই বের হলাম। বেরুনোর সময় মেয়েটির মা এগিয়ে তার বড় ভাইয়ের হাত ধরে বললেন “বাবা! সাবধানে যাস...” ।
আগামীকাল সকালে মেয়েটির বড় ভাই ঢাকা শহরের রাস্তায় সম্ভব্য অসংখ্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেয়ে অক্ষত, সুস্হ শরীরে মেয়েটিকে আবার দেখেত আসতে পারবে তো? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।