আমরা সবাই অভিনয় শিল্পী এই রঙ্গমঞ্চের...... প্রত্যেক ভাল কাজের পেছনে একজন অবশ্যই থাকে । বেশীর ভাগ মানুষের সাফল্যের পেছনেই থাকে তার কাছের মানুষটি বা তার জীবন সাথী। কিন্তু বন্ধু কয়জনের সাফল্যের পেছনে থাকে ? আমি আমার জীবনে এমন কিছু বন্ধুর সন্ধান পেয়েছি যাদের মধ্যে দুজনের কথা না বল্লেই নয়। আর দুজনই মেয়ে। একজন বিবিএ আর একজন এমবিএ তে এসে আমার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে।
শুরুতেই ভেবে নিবেন না আমার কোন ছেলে বন্ধু নেই। আছে, কিন্তু ছেলে বন্ধু আপনাকে কখনো এতটা করতে পারবে না যা একটা মেয়ে খুব সহজেই করতে পারে। আজ আমি আমার ভাল রেজাল্ট এর পেছনের কারন আপনাদের বলব। যদিও আমার বন্ধুরা তা যানে না ।
বিবিএ তে যে বন্ধুর কথা বল্লাম তার নাম রাখি।
আর এমবি এর বন্ধুর নাম তাসনিম। যাকে নিয়ে ইতি মধ্যে আমার একটা লিখাতে আপনারা জানতে পেরেছেন। আজ ও অনেক কিছু জানতে পারবেন।
শুরুতেই বলে নিই আমি মোটেও ছাত্র হিসেবে ভাল ছিলাম না। পড়ালিখার প্রতি আমার বরাবরই অনীহা ছিল ।
অতটাই পড়তাম যতটা না পড়লেই নয়। যার কারনে আমার এইচ এস সি আর এস এস সি তে রেজাল্ট এভারেজই ছিল । আর এতেই আমি সন্তুষ্ট ছিলাম।
যখন আমি বিবিএ তে ভর্তি হয় তখন পরিচয় হয় রাখির সাথে। আর সে ছিল আমার ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে একজন।
তার সাথে অনেকেই বন্ধুত্ব করতে চাইত কিন্তু হয়ে উঠত না, আর আমার সাথে অনেকটা কাকতালীয় ভাবে হয়ে গ্যেছে। যা আজ অবদি বর্তমান রয়েছে। তখন আমারা বিবিএর ১ম সেমিষ্টারে । একটা সিটির এর তারখি দিয়েছল । আমি আমার লাইফে কখনো সিটি দেইনি।
সত্য কথা বলতে কি মেডাম যখন বল্লেন ওমুক তারিখে তোমাদের একটা সিটি হবে....সিটি মানে কি তাই বুঝতে ছিলাম না। যদিও একথা কখানো কাউকে বলা হযনি। এখনো কথাটা মনে হলে আমার হাসি পায়। বিভাগীয় শহর ছাড়া খুব কম স্কুলেই সিটি হত। আর এই কারনেই বিষয়টা আমার জানা ছিলনা।
সিটি নিয়ে অন্য একদিন বিস্তারিত লিখব। কি কি হয়েছিল তখন?????
তো রাখি আমাকে বল্ল তাকে পড়া গুলা বুঝিয়ে দিতে এত দিন যা পড়িয়েছে । ঠিক আছে। বুঝিয়ে দিলাম যদিও নিজেও ঠিক মত বুজতে পারছিলাম না কি বুঝাছি। তখন তাকে বল্লাম কাল আবার বসব আমরা এইটা নিয়ে ।
ও বলল ঠিক আছে । এই ভাবেই সিটি টা মানে ক্লাস টেষ্ট পার কারলাম।
ইতি মধ্যে আমাদের একটা সার্কেল তৈরি হল। যেখানে ক্লাসের সেরা ছাত্ররাই ছিল। যাদের কাছ থেকে আমি নিজে ও অনেক কিছু জেনে নিতাম না বুঝলে।
যদিও রাখির সাথে তাদের ও সম্পর্ক টা ভাল ছিল কিন্তু সে তাদের কাছে পড়া বুঝতে চাইত না, বিষয় টা কয়েকদিন পরেই আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। একটা সিটির আগে আমি ক্লাসে যায়নি। কথা ছিল আমি রাখিকে বুঝিয়ে দিব। না যাওয়ার করন তাকে ফোনে বল্লাম আর এ ও বল্লাম যেন আমাদের আরেক বন্দুর কাছ থেকে পড়াটা বুঝে নেয় । পরদিন যখন ক্লাসে গেলাম জানতে পারলাম সে কারো কাছেই বুঝেনি।
কারন জানতে চাইলাম....বল্ল সে যেভাবে বুঝতে চায় সেভাবে তাকে অন্যকেউ বুঝাতে পারবে না। আমি যদি বুঝাতে পারি তাহলে সে বুঝবে তা নাহলে নিজে যা পারে তাই করবে।
যাই হোক এভাবেই চলছিল বিবিএ। ওর কারনে আমার ও একটু বেশী পড়তে হত যার কারনে রেজাল্ট ও একটু ভাল হল। যদিও তাকে কখনো বলা হয় নি।
আজ বলে নিই রাখি তোকে অনেক ধন্যবাদ , আমার কাছে পড়া বুঝতে আসার জন্য। আর তোর কারনেই আমার রেজাল্ট তুলনামূলক ভাবে ভাল হয়েছে যার ফল আমি লাইফে ভোগ করতে পারব।
এইবার তাসনিম এর কথা বলব। যা আমার কাছে তখন মনে হইছিল "আমি বুঝি মাইনকা চিপায় আটকা পড়লাম"। যদিও কয়েকদিন পর থোকে আজ পর্যন্ত মনে হচ্ছে মাইনকা চিপা না আমি আসলে হাই ওয়েতে ছিলাম।
তাসনিম ও ছিল আমার ক্লাসে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। তার সাথে বন্ধতের শুরু একজন স্যারের মাধ্যমে। প্রথম দেখাতে যে মেয়েটি আমাকে এ্যরোগ্যান্ট ভালছিল সে মেয়েটি হয়ত বা নিজেও কখনো ভাবেই নি আমি তার লাইফে সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুদের তালিকায় জায়গা করে নিব। ওর সাথে বন্দুত্ব পুরাই কাকতালীয় ভাবে হয়েছে। স্যার যাকে আমি কখন ও দেখিনি, তাসনিম যাকে আমি স্যার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর দেখলাম, আর স্যার ও তাসনিম কে আজকেই দেখল।
স্যার কেন আমাকে ছেলেদের মধ্যথেকে ক্লাস মনিটর বানালেন আর মেয়েদের মধ্য থেকে তাসনিম কে সিলেক্ট করলেন আমি আজ ও বুঝতে পারিনি। যদিও আমাদের ক্লাসে সবসময়ই মনিটর একজনই থাকে। আমি আর তাসনিম শুধুই ঐ ক্লাসের ই মনিটর ছিলাম। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হল স্যার অন্য কোন ক্লাসে কখনো মনিটর নিজে সিলেক্ট করেন না। ধন্যবাদ স্যার আপনাকে আমাদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
তাসনিম যে ছিল অনেক রাগী। এককথা একবার ই বলবে । যাব সাথে সবাই অনেক চিন্তা করে কথা বলে। এমন কি তার সব বন্ধুরাও। যাই হোক তার সাথে পরিচয় ....
ক্লাসে আমরা কেউই কারো সাথে কথা বলতাম না যেটুকু কথা তা নেটে মেইল করে দিতাম।
এইভাবে কিছুদনি যাওয়ার পর তাকে মোটামুটি বুঝে গ্যাছি কিভাবে ওর সাথে চলতে হবে।
সেই আবার সিটি। একদিন আমাকে আমার এক ক্লাসমেট বল্ল তাকে মেথ বুঝিয়ে দিতে। দিলাম আবাও বল্লাম আমারা কাল এইটা নিয়ে আবার বসব। তাসনিম বল্ল ওকেও বুঝিয়ে দিতে হবে।
ওকে বল্লাম তোমাকে ২দিন পর বুঝাবো। যদিও তাসনিম তখন ভালই কষ্ট পেয়েছিল আমিও জানি । কারন ই ছেলে বলার সাথে সাথে তাকে বুঝিয়ে দিলাম আর তাসনিম বন্ধু হওয়ার পর ও তাকে দুদিন পর বল্লাম !!!
আসলে পেছনে মূল করনটা ছিল তাসনিম কে যখন আমি বুঝাব তখন যেন আমার সব ভাল ভাবে জানা থাকে। তাই তাকে দুদিন পর বুঝাব বলছি।
দুদিন পর যখন তাসনিম কে বুঝাচ্ছিলাম নিজেও খেয়াল করলাম ওর মধ্যে চাপা একটা রাগ কাজ করতেছিল ।
যার কারনে সেও ঠিক মত বুঝতে পারছিল না। আর কিভাবেই বা পারবে তার মন তো অন্য দিকে। না বুঝার মত করেই তাকে ভালবাভে বুঝালাম। যখন বল্ল মেথ বুঝতে পেরেছে কখন তাকে কেন দুদিন পর বুঝালাম তার কারন বলাতে সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে বল্ল "আরফিন আমাকে আর এক বার বুঝিয়ে দাও"। আবার ও বুঝিয়ে দিলাম।
কিন্তু কারন টা বলাতে যে আমার মাইনকা চিপায় পড়তে হবে তা জানা ছিল না। এরপর একদিন বল্ল এখন থেকে আমাকে পড়া রেগুলার বুঝিরয় দিতে হবে । শুধু পরীক্ষার আগে বুঝাবে তা হবে না। আর ওকে পড়া বুঝানো মানে আমাকে আগে নিজে ভাল করে বুঝতে হবে। কারন সে একই পড়া আমার কাছে দুদিন নিয়ে আসবেনা।
যদিও প্রতিদিনই আমরা আড্ডাতে ব্যস্ত থাকতাম। আর আমি যদি পড়া না বুঝিয়ে দিতে পারতাম সে নেজেও পড়ত না । এমন অনেক সিটিই সে মিস করেছে আমি না বুঝিয়ে দেওয়ার কারনে। পরে অবশ্য আমারই খারাপ লাগত। যার কারনে আমিও রেগুলার পড়া রেডি করতাম।
যার ফল পেয়েছি এমবিএর রেজাল্ট এ। ক্লাসের টপ ৩ জনএর মধ্যে একজন হতাম সব সময়।
আর এই তাসনিম এর কারনেই কিন্তু আমি শেষ CIMA Exam এ পাশ করছি। আপনাদের সাথেও তা শেয়ার করেছি। সে বলেদিয়েছিল পাস না করলে আমার সাথে আর কথা বলবে না।
আর সে খুব ভাল ভাবেই জানত আমি তা করতে চাইব না। যদিও এর আগে একটা বিষয়ে আমি পাশ করতে ছিলাম না। আর তাই তার এ কথা। তাসনিম কে কখনো সেভাবে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি....দিতে চাইনি সামন্য ধন্যবাদ দিয়ে আমাদের বন্ধুত্বকে খাটো করতে। শুধু রেজাল্ট শুনার পর তার যে উচ্ছাস আমি পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে সে অনেক খুশি হয়েছে।
আমার এই রেজাল্ট তাদের কোন কাজে আসেবে না । যদিও এর একমাত্র অংশীদার আমি আর আমার পরিবারই হবে। তারপরও তাদের অবদান কে ধন্যবাদ জানাই। আজ এই লিখার মাধ্যমে তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রাখি আর তাসনিম দুজন এর সাথে ই আমার যোগাযোগ আগের মত ই আছে।
আশা করি সবসময়ই থাকবে। আমি আমাদের এই বন্ধুত্বকে কখনেই হারাতে চাই না।
তাসনিম কে নিয়ে লিখাটার লিংক... Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।