পৃথিবীটা যদি একটা বিশাল নদী হয় , তবে আমি ভাববো পৃথিবীর উপর আমি একটি ভাসমান নৌকা । যার ধর্মই হচ্ছে বয়ে চলা । ‘প্রেমের ফাদ পাতা ভূবনে, কোথায় কে ধরা পড়ে কে জানে…’ কে,কবে,কখন এই কথাখানা বলে গিয়েছিলেন, একথা জানা নেই রাজোনের। তবে সে নিজে যে সোহানার প্রেমে পড়েছে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই তার। মাস ছয়েক আগে ফেসবুকে সোহানার সাথে পরিচয় রাজোনের।
কোন এক মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ড এর ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে সোমাকে অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলো সে। শুধু সোহানাই নয়, প্রোফাইল পিকচার দেখে এমন আরো কতো হাজার হাজার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট যে সে পাঠিয়েছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। ঠিক তেমনি কতোবার যে ফেসবুক থেকে তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো ব্লক করে দেয়া হয়েছে, তারও কোন গোনাগাথা নেই। তবে অন্য অনেকের মতোন এই মেয়েটাও ঝুলিয়ে রাখেনি। দুদিন যেতে না যেতেই মেয়েটির সাড়া পাওয়া গিয়েছিলো।
তারপর প্রথম প্রথম একটু-আধটু কথা। একে অন্যকে জানা। একটু একটু করে কথাবার্তার পরিমান বাড়তে লাগলো। বাড়লো ইনবক্সে ম্যাসেজ আদান-প্রদানের সংখ্যাও । এমনি করে তিনটি মাস পেরুবার পর রাজোনের মনের ইনবক্স জুড়ে শুধু সোমহানা আর সোহানা।
ছয় মাস পেরুবার পর রাজোন যখন ফেসবুকের মাধ্যমেই সোহানাকে প্রোপোজ করলো, সোহানার দিক থেকেও তখন কোন আপত্তি দেখা যায়নি। সেও নাকি রাজোন নামের দুষ্টু ছেলেটাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে। এতোদিন যেই সকল ফেসবুক ফ্রেন্ডরা রাজোন আর সোহানার ওয়ালের বিভিন্ন পোস্ট দেখেছিলো,তারা তাদের ওয়ালের বর্তমান পোস্ট দেখেই বুঝতে পারলো, ঘটনা হ্যাজ বিন ঘটেকটেড। আরো কিছুদিন পর তাদের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসেও পরিবর্তন আসলো। ইন এ ওপেন রিলেশনশিপ এর জায়গায় এলো এনগেজড উইথ অমুক এন্ড তমুক।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তথ্যপ্রযুক্তির চরমে থাকা এই যুগে এসেও তাদের দুজনের মাঝে বাস্তবে কোন কথা হয়নি। হবেই বা কি করে! ফেসবুকে দীর্ঘ ছয়মাস ধরে চ্যাট করলেও আজ অবধি তারা দুজনে কেউ কারো মোবাইল নম্বরটাই নেয়নি একে অন্যের কাছ থেকে।
পরিচয়ের সপ্তম মাসে এসে অবশেষে দুজনে দেখা করবে বলে মনস্থির করলো। প্রথম দেখা কোথায় হবে, এ বিষয়টা সোমার উপরেই ছেড়ে দিলো রাজোন। অবশেষে সোহানার ইচ্ছামতে তারা বানিজ্যমেলাতে দেখা করবে বলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
আগামীকাল সকাল এগারোটায় বানিজ্যমেলার ইন্ডিয়ান স্টলে স্বপ্নকন্যা সোহানার সাথে প্রথমবারের মতো দেখা হচ্ছে, এই ভাবনা নিয়ে ঘুমাতে গ্যালেও সারাটা রাত তেমন একটা ঘুমাতে পারেনি রাজোন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা সেরে ক্লিনশেভড হয়ে সাজুগুজু শুরু করলো সে। শীত চলার কারণে কোট-টাই লাগিয়ে ফিটফাট হওয়াটা আরো সহজ হয়ে উঠলো তার জন্য। এতো সকাল সকাল বাসা থেকে বের হবার পরও রাস্তায় অসহনীয় ট্রাফিক জ্যামে পড়ায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় বিশ মিনিট পর সে বানিজ্যমেলার গেটে পৌছালো রাজোন। তাড়াহুড়ো করে টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকে প্রথমেই সে নিরাপত্তা কর্মীদের নিকট ইন্ডিয়ান স্টল এর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে, তারা উল্টো রাজোনের কাছে জানতে চাইলো, সে কোন ইন্ডিয়ান স্টল সম্পর্কে জানতে চাইছে।
তাদের এমন প্রশ্ন শুনে রাজোনের তো আক্কেল গুড়–ম। কোন ইন্ডিয়ান স্টল মানে! আরে ইন্ডিয়ান স্টল তো ইন্ডিয়ান স্টলই! অবশেষে নিরাপত্তা কর্মীদের বকবক শুনে সে যা বুঝতে পারলো তার সারসংক্ষেপ এই যে, এবারের বানিজ্য মেলায় সর্বমোট তিনটি ইন্ডিয়ান স্টল খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে রাজোন তো চোখেমুখে লাল-নীল-হলুদ সরষের ফুল দেখতে লাগলো। একবার সে এই স্টলে দৌড়ায় তো কিছুক্ষন পর দৌড়ায় ঐ স্টলের দিকে।
তিন-তিনটা ইন্ডিয়ান স্টলে ঘুরতে থাকা সকল মেয়েকেই তার কাছে সোহানা বলে মনে হয়।
কিন্তু এভাবে যে সোহানার দেখা মিলবে না, কয়েকটা চক্কর দেবার পরই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যায় তার কাছে। অনেকক্ষন ভাবার পর সে তার মোবাইল ফোন দিয়েই ফেসবুকে লগইন করে সোমাকে ম্যাসেজ পাঠায়। ফিরতি ম্যাসেজে জানা যায়, সোমাও একই অবস্থা দেখে অমুক স্টলের পাশে যে ইন্ডিয়ান স্টলটা আছে, সেটার সামনেই দাড়িয়ে আছে মিনিট বিশেক ধরে। ম্যাসেজ এর সূত্র ধরে নির্ধারিত স্টলের কাছাকাছি এসে বেগুনী রংয়ের কার্ডিগান আর জিন্স পড়ে দাড়িয়ে থাকা ইয়া মোটা সাইজের মেয়েটাকে দেখেই বুকটা কেপে উঠলো তার। ওরে বাবা, এই মেয়েটাই সোহানা নয়তো!
একটু নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে আবার ফেসবুকের মাধ্যমে সোহানাকে ম্যাসেজ পাঠালো, সে কি রংয়ের ড্রেস পড়েছে এটা জানতে চেয়ে।
বেগুনী কার্ডিগান পড়া মেয়েটি যখন তার মোবাইলটা চোখের সামনে উঠিয়ে টাইপ করতে লাগলো, তখনি তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলেও ফেসবুকের ফিরতি ম্যাসেজ পড়ে নব্বই কেজি ওজনের ঐ মেয়েটাই যে সোহানা, এই ব্যাপারে পুরাই নিশ্চিত হয়ে গ্যালো সে। ইয়া আল্লাহ, তিন তিনটা ইন্ডিয়ান স্টল না থাকলে আজ এতোক্ষনে তো ওই মেয়েটার খপ্পরেই পড়ে গিয়েছিলো সে! মেলা কর্তৃপক্ষকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবে, সে শুধু মনে মনে এটাই ভাবছিলো। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রাজোনকে বানিজ্যমেলা পিছনে ফেলে বাড়ির দিকে ফিরতে দেখা গ্যালো। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাশেদ এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টখানা শুধু ডিঅ্যাক্টিভেটই করা হয়নি, সেটা চিরদিনের জন্য ডিলিট করে দেয়ার জন্যও নাকি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
মন্তব্য করার কোন দরকার নেই ।
একটু হাসলেই চলবে ।
আমার হাসি পেয়েছিলো তাই শেয়ার করলাম । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।